ব্রিকসের উত্থান : বিশ্ব ব্যবস্থায় পশ্চিমা আধিপত্যের দিন কি শেষ হচ্ছে ? ব্রিকসের উত্থান : বিশ্ব ব্যবস্থায় পশ্চিমা আধিপত্যের দিন কি শেষ হচ্ছে ? – Narailnews24.com-নড়াইল নিউজ ২৪
রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ১১:২৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘সেফ এক্সিট’, নিয়ে এত আলোচনা কি বলছেন উপদেষ্টারা ? সারাদেশে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি কাল থেকে নড়াইলে টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন শুরু নড়াইলে বাবা-ছেলের মারামারি ঠেকাতে গিয়ে আসামী হলেন ১৪ জন, প্রতিবাদে মানববন্ধন লোহাগড়ায় ট্রেনের ধাক্কায় রিয়াজুল নামে যুবকের মৃত্যু নড়াইলে গানে নৃত্যে ও কবিতায় রবীন্দ্রনাথ-কাজী নজরুলকে স্মরণ সন্ত্রাসবিরোধী আইনে বাংলাদেশে নতুন করে দমন-পীড়ন করছে – এইচআরডব্লিউ দেশের সব বিমানবন্দরে বিশেষ সতর্কতা জারি করেছে কর্তৃপক্ষ নড়াইলে টাইফয়েড ক্যাম্পেইনে ২ লাখ ১৩ হাজার শিশুকে টিকা দেয়ার লক্ষমাত্রা নির্ধারন একটি দল বেহেস্তের টিকিট বিক্রি করছে – মনিরুল ইসলাম

ব্রিকসের উত্থান : বিশ্ব ব্যবস্থায় পশ্চিমা আধিপত্যের দিন কি শেষ হচ্ছে ?

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৩

নড়াইল নিউজ ২৪.কম আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি উদীয়মান অর্থনীতির সমন্বিত জোট ব্রিকস। ব্রিকসের অংশীদার সেই পাঁচটি দেশ হলো- ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন এবং দক্ষিণ আফ্রিকা। ব্রিকসের সদস্য দেশগুলো তাদের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির শক্তিশালী জোটে আরও ছয়টি নতুন সদস্য দেশকে আমন্ত্রণ জানাতে সম্মত হয়েছে।
জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত ব্রিকসের বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলন শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা এই ঘোষণা দিয়েছেন।
পশ্চিমা পণ্ডিতরা শুরু থেকেই ব্রিকসকে অকার্যকর একটি জোট বলে তাদের রায় দিয়েছেন। তবে এবার একযোগে আর্জেন্টিনা, মিশর, ইথিওপিয়া এবং ইরান, সেইসাথে বিশ্বের প্রধান তেল উৎপাদনকারী দেশ সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের ব্রিকসে যোগদান পশ্চিমা পণ্ডিতদের নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছে। ব্রিকসে নতুন এই ছয়টি দেশের যোগদান দীর্ঘ খেলার একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।

শুরু থেকেই, ব্রিকস ছিল আপাতদৃষ্টিতে একটি অবাস্তব আশাবাদী সংস্থা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত এবং চীনের শক্তিশালী অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার তুলে ধরতে ২০০১ সালে অর্থনীতিবিদ জিম ও’নিল প্রথম “BRIC” শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন।

২০০০-এর দশকজুড়ে, উদীয়মান বাজার অর্থনীতিগুলো বিশ্বজুড়ে ব্যাপক সাফল্য দেখায়। ফলে অনেক নতুন নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্র তৈরি হয়।

এই উচ্ছ্বাসের পোস্টার চাইল্ড ছিল তুরস্ক। উদাহরণস্বরূপ, তুরস্কের অর্থনীতির উত্থান ছিল সময়ের দাবি। ‘প্রতিবেশীদের সাথে দেশটির কোনো সমস্যা নেই’ এর জন্য দেশটিতে কল্যাণকর অর্থনীতির চাহিদা ছিল।

এই অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক কৌশলটি তুরস্কের অর্থনীতিকে সচল করেছে এবং বিনিয়োগ আকর্ষণ করেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আবার ব্যাপক চাপের মুখে পড়েছে দেশটি।

উদীয়মান বাজারে বৈশ্বিক মধ্যবিত্ত শ্রেণির উত্থানের আশাবাদ সামনে নিয়ে ২০০৯ সালে যখন ব্রিকসের প্রথম শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, তখন তুরস্কসহ উন্নয়নশীল দেশগুলো ব্যাপক উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছিল।

বর্তমানে, ব্রিকসের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনৈতিক অংশীদার চীন। ব্রিকসে আধিপত্যও রয়েছে চীনের। বিশ্বের উদীয়মান বাজারগুলোর সাথে চীনের রয়েছে ব্যাপক অর্থনৈতিক সম্পর্ক।

পশ্চিমের বাইরের দেশগুলোর মধ্যে গভীর আন্তঃসম্পর্কের ভিত্তি স্থাপন করা হয়েছে। এই ভিত্তি স্থাপনের জন্য কাজ করছে চীন। একইসাথে এই ‘পশ্চিম বিকল্প’ নীতিকে পুঁজি করে চীন তার অর্থনৈতিক ও বৈদেশিক নীতির উদ্দেশ্যগুলোকে পরিবর্তনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

ব্রিকসে সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের আমন্ত্রণ এই কৌশলের একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। চীনের একটি প্রাথমিক ভূ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ হলো- তেল ও গ্যাস বাণিজ্যে ডলারের আধিপত্যকে ভেঙে ফেলা। যখন সৌদি আরামকো একটি আইপিওর ধারণা প্রকাশ করেছিল, তখন চীনা রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলো তাতে অংশ নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। যদিও সেই আইপিওর ধারণাটি কখনো কার্যকর করা হয়নি, তবে চীন সৌদি অর্থনীতি এবং তার তেল খাতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিনিয়োগ করেছে।

সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে মূল্যবান একজন মধ্যস্থতাকারী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে চীন। গত মার্চ মাসে, চীনা কূটনীতিকরা ওয়াশিংটনকে বিস্মিত ও বিব্রত করে দিয়ে সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে একটি পুনর্মিলন চুক্তির মধ্যস্থতা করেন। ব্রিকস+এ ইরান ও সৌদি আরবকে অন্তর্ভুক্ত করলে মধ্যপ্রাচ্যে চীনের প্রভাব অনেক বৃদ্ধি পায়।

ব্রিকসে নতুন সদস্যপদ খুলতে ব্রিকসের অংশীদারদের সবার সমান আগ্রহ ছিল না। জোটে নতুন সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে বিশেষভাবে সতর্ক ছিল ব্রাজিল। কিন্তু আর্জেন্টিনার অন্তর্ভুক্তিতে নিঃসন্দেহে খুশি দেশটি। দক্ষিণ আমেরিকার দেশ দুটি সম্প্রতি একটি একক মুদ্রা চালু করার বিষয়ে কাজ করছে এবং দেশ দুটি ক্রমবর্ধমানভাবে ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।

পশ্চিমা পণ্ডিতরা যুক্তি দিয়েছেন- ব্রিকসের সবকিছু শুধু মুখে মুখে এবং এটি কোনো কাজের নয়। তবে ব্রিকসের ছোট ছোট পদক্ষেপগুলো এখন বিশ্ব অর্থনীতির একটি নতুন সংস্করণের ভিত্তি তৈরি করছে।

ব্রিকসের দেশগুলোর মধ্যে আন্তঃবাণিজ্য ২০১৭ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ৫৬ ভাগ বেড়েছে। যার বর্তমান পরিমাণ $৪২২ বিলিয়ন ডলার। এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা অব্যাহত থাকবে বলে মনে হচ্ছে।

স্বাভাবিকভাবেই, এই উন্নয়নের পেছনে বড় কারণ হিসেবে রয়ে গেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। উদাহরণস্বরূপ, ব্রিকস সম্মেলনজুড়ে একটি অবিশ্বাস্য সূক্ষ্ম লাইন ধরে হেঁটেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। যাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ক্ষিপ্ত না হয়। শীর্ষ সম্মেলন চলাকালীন একটি টেলিভিশন ভাষণে প্রেসিডেন্ট রামাফোসা বলেছিলেন- দক্ষিণ আফ্রিকা বৈশ্বিক শক্তিগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতায় যেতে চায় না। তারপরে তিনি ইউক্রেন সংঘাতে দক্ষিণ আফ্রিকার জোটনিরপেক্ষ অবস্থানকে পুনর্ব্যক্ত করেন।

গত বছর আমেরিকান রাষ্ট্রদূত রুবেন ব্রিগেটি রাশিয়ার কাছে অবৈধভাবে অস্ত্র বিক্রির অভিযোগে দক্ষিণ আফ্রিকাকে অভিযুক্ত করেছিলেন। এই অভিযোগের পর থেকে দুই দেশের মধ্যে বিরোধ চলছে। মার্কিন আইন প্রণেতারা AGOA চুক্তি থেকে দক্ষিণ আফ্রিকাকে বের করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং বেশ কয়েকটি আফ্রিকান দেশের মধ্যে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি যা দক্ষিণ আফ্রিকার অর্থনীতির জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

এ ধরনের হুমকি-ধমকি সত্ত্বেও, ফোর্ডের মতো আমেরিকান কোম্পানিগুলো দক্ষিণ আফ্রিকার বাজার থেকে ব্যাপকভাবে উপকৃত হচ্ছে। তাই এসব হুমকি বাস্তব প্রতিফলনের কোনো সম্ভাবনা নেই, কারণ এটি মার্কিন অর্থনীতিতে আঘাত করবে। ব্রিকসের উত্থানের সাথে সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে জটিল পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে এই গল্পটিই তা তুলে ধরে।

সহজ কথায়, বাণিজ্য ও সামরিক সহায়তার জন্য আমেরিকার অর্থনীতির ওপর নির্ভরশীল বেশ কয়েকটি দেশ এখন ব্রিকস ব্লকের মাধ্যমে রাশিয়া ও চীনের সাথে গভীরভাবে যুক্ত হচ্ছে এবং ওয়াশিংটন এখানে খুব বেশি কিছু করতে পারবে না বা করবে না।

এটা কি কল্পনাও করা যায় যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ব্রিকসের নতুন সদস্যপদ নিয়ে সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রকাশ্যে সমালোচনা করছে? একদমই না! দক্ষিণ আফ্রিকা অনেক কম শক্তিশালী দেশ হওয়া সত্ত্বেও রাশিয়ার সাথে তার সন্দেহজনক সম্পর্কের জন্য কোনো পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে আমেরিকা।

ব্রিকস যখনই গ্লোবাল সাউথজুড়ে তার সহযোগিতাকে প্রসারিত এবং গভীর করেছে ঠিক এর সাথে সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গাজর এবং লাঠি দুটোই ফুরিয়ে গেছে।

চীনের দৃষ্টিতে, সর্বোত্তম পদক্ষেপ হলো- ব্রিকসের মতো গোষ্ঠীগুলোর মাধ্যমে ধীরে ধীরে একটি জোট নিরপেক্ষ বিশ্ব অর্থনীতির অবকাঠামো নির্মাণ চালিয়ে যাওয়া। এটি চীনের সূদুরপ্রসারি চিন্তা।

অবশেষে, এই দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য অংশীদারিত্ব এবং সহযোগিতার সম্পর্ক অনেক বৃদ্ধি পাবে এবং এটি বৈশ্বিক ব্যবস্থায় আরও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটাবে। যেমন- মার্কিন ডলারকে বৈশ্বিক রিজার্ভ মুদ্রা থেকে সরিয়ে দেওয়া।

চীন এটা জানে, আর এ কারণেই প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সশরীরে বৈঠকে যোগ দিয়েছেন। যদিও অতিসত্বর এটি ঘটছে না, তবে এ ধরনের ভবিষ্যতের ভিত্তি এখন রচিত হচ্ছে।

জোসেফ দানা : লেখক এবং সাংবাদিক, দক্ষিণ আফ্রিকা

© এই নিউজ পোর্টালের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

ফেসবুকে শেয়ার করুন

More News Of This Category
পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
Developed by: A TO Z IT HOST
Tuhin
error: Content is protected !!