স্টাফ রিপোর্টার, নড়াইল
নড়াইলে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আরিয়ান ইসলাম অভ্র (১৬) ও নিরব বিশ্বাস(১৩) নামের দুই স্কুল ছাত্রকে হত্যা চেষ্টা করা হয়েছে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় অভ্র খুলনার একটি বেসরকারি মেডিকেলের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র(আইসিইউ) তে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আর তার বন্ধু নিরব কলার বোন ভেঙে নড়াইল সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে আছেন নিজ বাসায়।
আহত শিক্ষার্থী আরিয়ান ইসলাম অভ্র যশোর সদরের নীলগঞ্জ এলাকার সৌরভ মাহমুদের ছেলে। অভ্র ছোট বেলা থেকেই নড়াইল সদরের বেতবাড়িয়া এলাকায় নানাবাড়ি থাকেন। সে গোবরা প্রগতি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেনীর ছাত্র। তার বন্ধু নিরব বিশ্বাস একই উপজেলার দক্ষিণ নড়াইলের সাধন বিশ্বাসের ছেলে ও সপ্তম শ্রেনীর ছাত্র।
ভুক্তভোগী আরিয়ান ইসলাম অভ্রের নানী মোছাঃ সুফিয়া বেগম বাদি হয়ে মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) রাতে নড়াইল সদর থানায় মামলা দায়ের করেন।
মামলার এজাহার ও পারিবারের অভিযোগ, চলতি মাসের গত ২ অক্টোবর শহরস্থ বাঁধা ঘাট এলাকায় পূজার মেলা দেখতে যান দুই বন্ধু অভ্র ও নিরব। রাত আনুমানিক ১০ টার দিকে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে অভ্রর মামা শেখ রুবেলের কাছ থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে বের হয়। তারা নড়াইল যশোর মহাসড়কের ভাদুলিডাঙ্গা থেকে সীতা রামপুর এলাকা পৌঁছায়। সীতা রামপুর ব্রিজ এলাকায় অভিযুক্ত রাব্বি সিয়াম সহ দুইটি মোটরসাইকেল থাকা অজ্ঞাত আরও দুই জন সহ মোট তিনজন তাদের গতিরোধ করে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করেন। এতে গুরুতর আহত হন অভ্র ও নিরব। তাদের সাথে থাকা মোটরসাইকেলটি ভাঙচুর করেন আর দুই বন্ধকে মুমূর্ষ অবস্থায় রাস্তার পাশে ফেলে পালিয়ে যান দুর্বৃত্তরা। পরে এক পথচারীর ৯৯৯ ফোন কলে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহতদের উদ্ধার করে নড়াইল সদর হাসপাতালে নিয়ে যান।
ছবি: নড়াইল নিউজ ২৪.কম
আরও জানা যায়, প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে অভ্রর শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর আঘাতের চিহ্ন থাকায় তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় খুলনায় পাঠানো হয়। আর তার বন্ধু নিরবের কলার বোন ভাঙা সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানের ক্ষত চিহ্নের চিকিৎসা দেয় নড়াইল সদর হাসপাতালে দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক। তবে মামলা বিবরণীতে আরও উল্লেখ করা হয়, দুই নাবালককে বেধড়ক মারপিট করেও ক্ষান্ত না হয়ে ঘটনাস্থলে নিরবের প্যান্ট খুলে মোটরসাইকেলের গরম সাইলেন্সার পাইপে পাছা পুড়িয়ে ঝলসে দেয়া হয়।
এদিকে আহত নিরব বিশ্বাস অভিযোগ করে বলেন, আমরা দুই বন্ধু মুলিয়ার দিকে যাওয়ার পথে বৌবাজার এলাকায় একটি মোটরসাইকেলের লুকিং গ্লাসে আমাদের মোটর সাইকেলের লুকিং গ্লাসের ঘসা লাগে। তখন দুইটা মোটরসাইকেলে থাকে তিনজন আঙ্কেল আমাদের ধাওয়া করে। ভয়ে আমরা যশোরের দিকে যাওয়ার পথে সীতারামপুর ব্রিজের গোড়ায় ওই আঙ্কেলরা আমাদের জোর করে দাঁড় করায়। ক্ষমা চাওয়ার পরও আঙ্কেলরা আমাদেরকে প্রচন্ড পরিমান মারধর করেন। পরে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই, পরে কি হয়েছে আমার জানা নাই।
খুলনা সিটি মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অভ্র- সংগৃহীত ছবি: নড়াইল নিউজ ২৪.কম
এদিকে অভ্রর নানী সুফিয়া বেগম ও নিরবের বাবা সাধন বিশ্বাস অভিযোগ করে বলেন, ‘ দুইজন স্কুল পড়ুয়া বাচ্চা ছেলেকে প্রাপ্ত বয়স্ক তিনজন এভাবে অমানবিক নির্যাতন করেছে এটা কোন ধরনের বর্বরতা আপনারাই বিচার করুন। আল্লাহ চাইলে অভ্র ও নিরব সুস্থ হবে, কিন্তু তারা কি এই বর্বর নির্যাতনের মানসিক ট্রমা থেকে বের হতে পারবে! আমরা চাই এ ঘটনায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। ‘
সূত্র জানায়, ঘটনার দিন একটি মোটরসাইকেলে অভিযুক্ত রাব্বি সিয়াম মহিষখোলা গ্রামের মনিরুলেল ছেলে। অপর মোটর সাইকেলে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল পুলিশ ও নড়াইল সদরের দুর্গাপুরের বাসিন্দা দুরন্ত বিশ্বাস জুধিস্টি (৩০) এবং নড়াইল সিটি কলেজের শিক্ষার্থী ও মহিষখোলার বাসিন্দা খন্দকার শায়খ আলী আবির(২১) ছিলেন।
নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাজেদুল ইসলাম বুধবার রাতে বলেন, এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর পরিবার একটি মামলা দায়ের করেছেন। তদন্ত পূর্বক পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।