নড়াইল নিউজ ২৪.কম আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
আফগানিস্তানের তালেবানের ক্ষমতাগ্রহণের পর দেশটিতে বিপর্যয়কর পরিস্থিতি সৃষ্টির বিষয়ে জাতিসংঘের হুঁশিয়ারির পর ১০০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি আর্থিক সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দাতারা। মঙ্গলবার (১৪ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি ও আলজাজিরা।
বিবিসি জানিয়েছে, জেনেভায় জাতিসংঘের আয়োজিত একটি কনফারেন্সে আফগানিস্তানে সহায়তার বিষয়ে এই অঙ্গীকার করেন দাতারা। তালেবানের ক্ষমতা গ্রহণের পর আফগান ভূখণ্ডে বড় ধরনের মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছে জাতিসংঘ এবং এই বিপর্যয় এড়াতে বৈশ্বিক সহায়তার আহ্বান জানিয়ে জেনেভায় এই কনফারেন্সের আয়োজন করা হয়েছিল।
সোমবার জেনেভার ওই দাতা সম্মেলনে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তেনিও গুতেরেস বলেন, আফগানিস্তান এবং দেশটির মানুষের জরুরি প্রয়োজন মেটাতে দাতাদের কাছে জরুরি ভিত্তিতে ৬০ কোটি মার্কিন ডলার সহায়তা দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিল জাতিসংঘ। তবে জাতিসংঘের এই অনুরোধের বিপরীতে এখন পর্যন্ত ঠিক কত টাকা দেওয়ার অঙ্গীকার করা হয়েছে; তা এখনই বলা সম্ভব নয়।
কনফারেন্সের উদ্বোধনী বক্তব্যে গুতেরেস বলেন, টানা কয়েক দশক যুদ্ধ, সংগ্রাম আর নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে থাকার পর আফগানরা এখন কার্যত তাদের সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছে। তিনি বলেন, আফগানিস্তানের জনগণের এখন বেঁচে থাকার রসদ প্রয়োজন।
জাতিসংঘের মহাসচিব বলেন, ‘এই মুহূর্তে আফগানিস্তানে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড খুবই সীমিত। এর মানে- দেশটিতে মৌলিক অনেক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড হচ্ছে না।’
জেনেভা থেকে আলজাজিরার কূটনৈতিক প্রতিবেদক জেমস বায়েস জানান, আফগানিস্তানে সহায়তার বিষয়ে জাতিসংঘের আহ্বানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যেভাবে সাড়া দিয়েছে তাতে মহাসচিব গুতেরেস ‘খুবই সন্তুষ্ট’।
অবশ্য গুতেরেস জানিয়েছেন যে, তালেবানের সঙ্গে কাজ করা ছাড়া আফগানিস্তানের ভেতরে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব নয়। কনফারেন্সের সাইডলাইনে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, তাই বর্তমান সময়ে তালেবানের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এদিকে আফগানিস্তানে ৬৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন দূত লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড কনফারেন্সে বলেন, আফগানিস্তানে নতুন করে প্রায় ৬৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের মানবিক সহয়তা দেবে ওয়াশিংটন।
জাতিসংঘ বলছে, তালেবান কাবুলের ক্ষমতা দখলের পর আফগানিস্তানে মানবিক সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। তবে রয়টার্স বলছে, গত মাসে তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতার কেন্দ্রে আসার আগে থেকেই দেশটির অর্ধেক জনসংখ্যা – ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষ – বিদেশি সহায়তার ওপর নির্ভরশীল ছিলেন।
জাতিসংঘের কর্মকর্তারা এবং সহায়তা প্রদানকারী গ্রুপগুলো বলছে, তালেবান ক্ষমতায় আসার পর খাবার ও টাকার অভাবে এই সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। দ্রুতগতিতে তালেবানের ক্ষমতা দখল এবং পশ্চিমা দেশগুলোর সমর্থিত সরকারের পতনের পর আফগানিস্তানে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক সহায়তা আকস্মিকভাবেই বন্ধ হয়ে যায়। আর এতেই দেশটিতে মানবিক সংকট আরও প্রকট হয়ে ওঠে।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তেনিও গুতেরেস বলছেন, কাজ চালাতে তার সংস্থা অর্থনৈতিকভাবে সংগ্রাম করছে। গত শুক্রবার সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে নিজ কর্মচারীদের বেতনও দিতে পারছে না জাতিসংঘ।’
গত ১৫ আগস্ট তালেবান যোদ্ধাদের রাজধানী কাবুলে প্রবেশ এবং গোটা আফগানিস্তানে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে আফগানদের নগদ অর্থের সংকট দেখা দেয়। বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে অর্থপ্রবাহ বন্ধ এবং যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানের রিজার্ভ আটকে দেওয়ায় পরিস্থিতি এখন চরম আকার নিয়েছে।
আফগানিস্তানজুড়ে ব্যাংকব্যবস্থা এখনো সচল হয়নি। মধ্যবিত্তরাও অর্থ উত্তোলন করতে পারছেন না। অনেকে তুলতে পারলেও সপ্তাহে তার সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে ২০ হাজার আফগানি। নতুন সরকার রিজার্ভে প্রবেশাধিকার পাচ্ছে না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও অর্থ সহায়তা বন্ধ করে দিয়েছে। সব মিলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।