নড়াইল নিউজ ২৪.কম আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
আফগানিস্তানে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করেছে তালেবানরা। আফগানিস্তানকে ‘ইসলামি আমিরাত’ ঘোষণা করে তারা। বর্ষীয়ান তালেবান মন্ত্রীদের বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে গত ২০ বছরে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের ওপর প্রাণঘাতী হামলার অভিযোগ আছে।তালেবানের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও নতুন সরকারপ্রধান মোল্লা মোহাম্মদ হাসান আখুন্দ জাতিসংঘের কালো তালিকাভুক্ত বলে গণমাধ্যম জানায়।
১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত যখন তালেবান আফগানিস্তান শাসন করেছে, সে সময় দেশটির উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন হাসান আখুন্দ।
প্রথম দফার শাসনামলে কঠোর শরিয়াহ আইন প্রয়োগ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ নানা কারণে ব্যাপক সমালোচিত ছিল তালেবান।
এ ছাড়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সিরাজুদ্দিন হাক্কানি নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হাক্কানি নেটওয়ার্কের নেতা এবং যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো এফবিআইয়ের ‘ওয়ান্টেড’ তালিকাভুক্ত। তাকে ধরিয়ে দিলে এক কোটি ডলার পুরস্কার দেবে এফবিআই।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্ষমতা দখলের পর প্রাথমিকভাবে বিভিন্ন পক্ষের অংশগ্রহণমূলক সরকার গঠনের কথা বলেছিল তালেবান। কিন্তু মঙ্গলবার ঘোষিত মন্ত্রিসভার সব সদস্যই তালেবানের প্রতিষ্ঠিত নেতা।
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, তালেবানের মন্ত্রিসভা বা উপদেষ্টা দলেও কোনো নারীর জায়গা হয়নি।
আফগানিস্তানের পশ্চিমা সমর্থিত বেসামরিক সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে গত ১৫ আগস্ট দেশটির নিয়ন্ত্রণ নেয় তালেবান। তিন সপ্তাহ পর ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রিসভা গঠনের মধ্য দিয়ে স্থায়ী সরকার গঠনের প্রথম ধাপ পার করেছে নতুন শাসক দল।
এ পর্যায়ে দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন, বিদেশি সহযোগিতা নিশ্চিত করাসহ বেশ কয়েকটি বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে তালেবানকে।
কিন্তু নতুন মন্ত্রিসভা ঘোষণার পর এসব বাধা অতিক্রম করা নতুন শাসক দলের জন্য আরও কঠিন হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে হাসান আখুন্দের নিয়োগকে দেখা হচ্ছে সমঝোতার চেষ্টা হিসেবে। এতদিন সম্ভাব্য সরকারপ্রধান হিসেবে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় থাকা আব্দুল গনি বারাদারকে সরকারের উপপ্রধান করে আখুন্দকে প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়।
তালেবানের সামরিক দিকের চেয়ে সংগঠনটির ধর্মীয় দিকেই বেশি প্রভাব আখুন্দের। তালেবানের কট্টরপন্থি ও তুলনামূলক মধ্যপন্থিদের মধ্যে সম্প্রতি সংঘাতের খবর প্রকাশের পর তাকে নিয়োগ দেয়া হয় সরকারপ্রধান হিসেবে।
অন্যদিকে আফগানিস্তানে দুই দশকের যুদ্ধে বেশ কয়েকটি রক্তক্ষয়ী সন্ত্রাসী হামলার অভিযোগ রয়েছে সিরাজুদ্দিন হাক্কানির হাক্কানি নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে। এসব হামলার অন্যতম কাবুলে ২০১৭ সালের ট্রাকবোমা বিস্ফোরণ, যাতে নিহত হয় দেড় শতাধিক মানুষ।
তালেবান সমর্থিত হাক্কানি নেটওয়ার্ক নিষিদ্ধঘোষিত আরেক সন্ত্রাসী সংগঠন আল-কায়েদার সঙ্গেও সম্পৃক্ত।
যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকায় রয়েছে হাক্কানি নেটওয়ার্ক। এফবিআইয়ের নথিতে উল্লেখ আছে, ‘২০০৮ সালের জানুয়ারিতে কাবুলের একটি হোটেলে হামলায় সম্পৃক্ততার অভিযোগে সিরাজুদ্দিন হাক্কানিকে খুঁজছে গোয়েন্দারা… ওই হামলায় এক আমেরিকান নাগরিকসহ ছয়জন নিহত হয়েছিল।’
নথিতে আরও উল্লেখ আছে, ‘ধারণা করা হয়, অন্য দেশের সীমান্ত ব্যবহার করে আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন জোটের সেনাদের ওপর বিভিন্ন হামলার সমন্বয়কারী ছিলেন হাক্কানি। ২০০৮ সালে তৎকালীন আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইকে হত্যাচেষ্টার পরিকল্পনাতেও যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।’
২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে কাবুলে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস ও আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা জোট ন্যাটোর নিকটবর্তী ঘাঁটিতে হামলার জন্যও হাক্কানি নেটওয়ার্ককে দায়ী করা হয়।
সিরাজউদ্দিনের ভাতিজা খলিল হাক্কানি নিয়োগ পেয়েছেন শরণার্থীবিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে। আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে তাকে ধরিয়ে দেয়ার পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে ৫০ লাখ ডলার।
তালেবানের অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন পদে নিয়োগ পেয়েছেন হাক্কানি নেটওয়ার্কের আরও দুই নেতা।
সরকারের শীর্ষ পদে নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে আছেন কিউবায় অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের কারাগার গুয়ানতানামো বের সাবেক চার বন্দি। ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বন্দি বিনিময়ের অংশ হিসেবে মুক্তি পান তারা।
এ নেতারা হলেন সীমান্ত ও আদিবাসীবিষয়ক মন্ত্রী নুরউল্লাহ নুরি, গোয়েন্দা পরিচালক আব্দুল হক ওয়াসিক, তথ্য ও সংস্কৃতিমন্ত্রী খায়রুল্লাহ খাইর এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোহাম্মদ ফজিল মজলুম।
২০১৪ সালের ওই বন্দি বিনিময়ের সুযোগেই মুক্তি পাওয়া পঞ্চম ব্যক্তি মোহাম্মদ নবী ওমরিকে গত মাসে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় খোস্ত প্রদেশের নতুন গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দেয় তালেবান।
এদিকে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর এক বিবৃতিতে দেশে শরিয়াহ আইন জারির নির্দেশ দিয়েছেন তালেবানের সর্বোচ্চ নেতা মৌলভী হাইবাতুল্লাহ আখুনজাদা। তালেবান দ্বিতীয় দফায় দেশের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর এটিই প্রথম বার্তা জনসমক্ষে না আসা এ নেতার।