স্টাফ রিপোর্টার :
নড়াইলের চন্ডিবরপুর ইউনিয়নে ধুড়িয়া গ্রামে ঔষুধিগুণসম্পন্ন ব্ল্যাক রাইস চাষ করছেন ত্বরণ উদ্যোক্তা অ্যাডভোকেট শাহীন। রিয়াজুল ইসলাম শাহিন। পেশায় তিনি একজন আইনজীবী। ঢাকাতেই আইনজীবী পেশা প্রাকটিস করেন। সময় পেলেই গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন এবং ছোট-খাটো কৃষিকাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখেন।
গত বছর মরণঘাতী করোনায় লকডাউনে বাড়িতে আটকে পড়ায় বাড়ির পাশে কিছু জমি লিজ নিয়ে চারা মাছ উৎপাদনের কাজ শুরু করেন। ইতোমধ্যে সেখানে ৪টি পুকুরে চারা মাছের উৎপাদনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন । পাশাপাশি নিজ কৃষি জমিতে ব্ল্যাক রাইস জাতের ধান চাষের উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি।
রিয়াজুল ইসলাম শাহীন নড়াইল সদর উপজেলার চন্ডিবরপুর ইউনিয়নের ধুড়িয়া গ্রামের বিশিষ্ট সমাজসেবক সাবেক ইউপি মেম্বর মো: হাদিয়ার রহমানের ছেলে । উদ্যোক্তা শাহিন .৩০ শতক জমিতে এ ধানের চারা রোপণ শুরু করেছেন।
অ্যাডভোকেট শাহীন বলেন, আমি এটা শখের বসে এনেছি এবং চারা দিয়েছি। আজ আমরা চারা রোপণ শুরু করলাম। আমি যতটুকু জেনেছি, এ ধান দোঁয়াশ মাটিতে চাষ করা যায়। রোপণের সময় চারা গাছের মাথা থেকে কেটে লাগাতে হয়। দেড় মাস পর আরও একবার ধান গাছের মাথা থেকে ছেটে দিতে হয়।
তিনি আরও বলেন, এ ধানের চাউলের রং কালো, পাতায় ও ধানে সুগন্ধি রয়েছে। ৫ মাস বয়স পূর্ণ হলে এ ধান কাটা যাবে। এ ধান শতক প্রতি ২০-২৫ কেজি উৎপাদন হয়। এ ধানের চাউল সাধারণত কোন বাজারে পাওয়া যায় না। ঢাকাসহ দেশের বড় বড় শহরের বিশেষ শপিংমলে এই ব্ল্যাক রাইস বিক্রি হতে দেখা যায়। এ সব শপিংমলে প্রতি কেজি ব্ল্যাক রাইস ৮০০-১০০০ টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে।
নতুন জাতের ব্ল্যাক রাইস ধান চাষ সম্পর্কে উদ্যোক্তা শাহীন জানান, গতবছর করোনা শুরু হলে তখন আমি বাড়ি এসে দেখলাম যে শুধু শুধু বসে না থেকে কিছু একটা করি। আমি কয়েকটা পুকুর নিয়ে প্রাথমিকভাবে মাছ চাষ শুরু করলাম। তবে মাছ চাষের সূত্র ধরেই আমি একটা অনলাইন প্লাটফর্ম পাই যেখান থেকে আমি মৎস্য চাষের বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকি। এই প্লাটফর্মে রংপুরের কৃষিবিদ রাজ গোস্বামীর সাথে আমার পরিচয় হয়। উনি মৎস্য চাষিদের নিয়ে একটা মিলন মেলা আয়োজন করেন কুমিল্লাতে। পরর্বতীতে করোনার কারণে মিলন মেলাটা স্থগিত করা হয়। কিন্তু ঐ মিলন মেলায় ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, উনি একটা নতুন জাতের ধান কৃষকদের হাতে তুলে দিবেন। বিশেষ করে যারা আগ্রহী তাদেরকে। সেই মোতাবেক উনার কাছ থেকে আমি ব্লাক রাইসের এক কেজি বীজ ধানের অর্ডার দিই এখন থেকে আরও ৫ মাস আগে। পরবর্তীতে গত মাসে আমি এই বীজ ধানটা হাতে পাই।
তিনি আরও জানান, এই ধানের নামটা হলো ব্ল্যাক রাইস। এ ধানের বৈশিষ্ট্য হলো, ধানটা দেখতে অন্যান্য সাধারণ ধানের মতোই। কিন্তু চালটা হলো কালো রংএর। আর ধানটা সুগন্ধিযুক্ত। এটা ঔষধি গুণসম্পন্ন। আমি যার কাছ থেকে এনেছি কৃষিবিদ রাজ গোস্বামী উনি বলেছেন, এ ধানে কিছু ঔষধি গুণ আছে। যেমন- এ ধান হার্ট, লিভার, ডায়াবেটিস ও স্কিন ভাল রাখার জন্য প্রতিষেধক হিসাবে কাজ করে।
শাহীন জানান, আমাদের এলাকার উপ-সহকারী কৃষি অফিসার ইমরুলের মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে নড়াইল জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা সৌরভ দেবনাথ ও জুনিয়র অফিসার শাকিল ধুড়িয়া গ্রামে আসেন। গত দুইদিন আগে সরেজমিনে এসে ধানটা দেখে উনারা খুশি হয়ে বলেন এ জেলায় আপনি নতুন আনছেন, এর আগে কেউ আনে নাই। আমাদের সব ধরনের সহযোগিতা থাকবে।
জানা গেছে, ব্ল্যাক রাইস জাতের ধান বাংলাদেশে চাষাবাদ খুবই কম দেখা যায়। এ জাতের ধানকে নিষিদ্ধ ধান জাত হিসেবে কথিত রয়েছে চীন দেশে। কালো চাউলের ভাতে বেশ কিছু পুষ্টি, বিশেষ করে প্রোটিন, ফাইবার এবং আয়রনের ভালো উৎস রয়েছে। সব ধরনের ধানের মধ্যে কালো চাউলের ভাতে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। কালো চালে গভীর কালো বা বেগুনি-নীল রঙঅ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যগুলির ইঙ্গিত বহন করে। কালো চালের দানার বাইরের স্তরে অ্যান্থোসায়ানিন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রচুর পরিমাণে থাকে। অ্যান্থোসায়ানিন কার্ডিওভাসকুলার রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করতে এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।