নড়াইল নিউজ ২৪.কম ডেস্ক:
৬০৩ জন বাংলাদেশি সৌদি আরবের বিভিন্ন কারাগারে আটক থাকায় তাদের ফেরানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর অংশ হিসেবে দেশটির সব জেলখানায় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ‘নোট ভারবাল’ পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাস। সৌদি আরবের ১৭টি কারাগারে ৬০৩ জন বাংলাদেশি আটক আছেন। বিভিন্ন অপরাধে এদের কারো বিচার সম্পন্ন হয়েছে, কারো বিচার চলমান রয়েছে বলে জানাগেছে।
করোনা মহামারির কারণে এসব বন্দিদের ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া এতদিন থমকে ছিল। পরিস্থিতি এখন কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় এ বিষয়ে ফের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন, রিয়াদ দূতাবাসের লেবার কাউন্সিলর আমিনুল ইসলাম।
রিয়াদ দূতাবাসের লেবার কাউন্সিলর আমিনুল ইসলাম তিনি বলেন, ‘জেদ্দাহসহ ১৭টি জেলে মোট ৬০৩ জন বাংলাদেশি বন্দি আছেন। সমস্যা হয়েছে করোনা মহামারির কারণে এতদিন আমরা জেলগুলোতে পরিদর্শন সুযোগ পেতাম না। বর্তমানে এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে উপায় বের করেছি। আমরা এখন নতুন চিন্তা করছি আমাদের প্রবাসীদের জন্য অন্যভাবে কিছু করার।’
আমিনুল ইসলাম জানান, ইতোমধ্যে জেদ্দার কনস্যুলেটের মাধ্যমে সৌদির সব জেল ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি ‘নোট ভারবাল’ পাঠানো হয়েছে।
নোট ভারবাল হলো একটি কূটনৈতিক নোট, যা সাধারণ নোটের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তবে চূড়ান্ত কোনো চুক্তি হয়।
দূতাবাস সূত্র জানায়, নোট ভারবালে সৌদি সরকারকে বেশ কয়েকটি প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ দূতাবাস। প্রস্তাবগুলো হলো:
# ইতোমধ্যে যাদের সাজার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে বা দ্রুতই শেষ হবে, তাদেরকে স্বল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা নেয়া।
# যাদের সাজার মেয়াদ এক-চতুর্থাংশ শেষ হয়েছে তাদের উত্তম ব্যবহারের ভিত্তিতে অবশিষ্ট সাজা মওকুফ করে দেশে ফেরত পাঠানো।
# যারা প্রথম অপরাধে আটক হয়েছেন তাদের সাজার মেয়াদ মওকুফ করে দেশে পাঠানো।
# যারা তুচ্ছ ও ছোট অপরাধে আটক হয়েছেন তাদেরও সাজা মওকুফ করে দেশে ফেরত পাঠানো।
দূতাবাসের দেয়া তথ্য মতে, সৌদি আরবের মালাজ জেলে ৯৭, আল হায়ের জেলে ১৮৭, দাম্মাম সেন্ট্রাল জেলে ১৫৬, আল হাসা জেলে ৩১, আল খোবার জেলে ৩৩, আল জোবাইল জেলে ৪৯, কাতিফ জেলে ১২, হাফার আল বাতেন জেলে ১৯, হাইল জেলে ১৮, বুরাইদাহ জেলে ১৮, কুরাইয়াত জেলে ১, আরার জেলে ৩, সাকাকা জেলে ৬ জন বাংলাদেশি আটক রয়েছেন। তাদের সবার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অপরাধের অভিযোগ রয়েছে।
সৌদি আরবের জেলে সাধারণত সুনির্দিষ্ট অপরাধের কারণেই আটক রাখা হয়। এ ছাড়া, রেসিডেন্সি আইন বা লেবার আইন ভঙ্গের কারণে যাদের ডিপোর্ট করা হয় তাদের ডিপোর্টেশনে রাখা হয়। জেল ছাড়াও, ডিপোর্টেশন সেন্টারেও আটক আছে অনেক বাংলাদেশি শ্রমিক। শ্রম আইন ভঙ্গ করার অপরাধে তাদের ডিপোর্টেশন সেন্টারে আটক রাখা হয়েছে।
এর আগে ২০১৩ সালের মার্চে কয়েক দফায় সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে অবৈধভাবে অবস্থানকারীদের জন্য মেয়াদ বাড়িয়েছিল সৌদি সরকার। সবশেষ ২০১৭ সালের ২৯ মার্চ সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান অবৈধভাবে বসবাসকারীদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে দেশ ত্যাগের জন্য ৯০ দিন সময় বাড়িয়ে দেন। এই মেয়াদের মধ্যে অনেকেই দেশে ফিরে না আসায় তাদের জেলে যেতে হয়েছে অথবা চুরি করে সৌদিতে অবস্থান করতে হয়েছে।
সৌদি আরবের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে পাঠানো জুন মাসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রিয়াদ ডিপোর্টেশন সেন্টারে অবস্থান করছেন ৭৩৯ জন বাংলাদেশি। এদের মধ্যে ৬৮৩ জনকে আউটপাস ইস্যু করা হয়েছে এবং ৬৫২ জন দেশে ফিরেছেন।
দাম্মাম ডিপোর্টেশন সেন্টারে অবস্থান করছেন ৪০৫ জন। এদের মধ্যে আউটপাস ইস্যু করা হয়েছে ২০৩ জনের এবং ৩০০ জন দেশে ফিরেছেন।