২১ আগস্ট সেই দিনে কী ঘটেছিল ? ২১ আগস্ট সেই দিনে কী ঘটেছিল ? – Narailnews24.com-নড়াইল নিউজ ২৪
সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ০৫:৩৮ পূর্বাহ্ন

২১ আগস্ট সেই দিনে কী ঘটেছিল ?

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ২১ আগস্ট, ২০২১

নড়াইল নিউজ ২৪.কম ডেস্ক:

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বিকেলে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশের আয়োজন করে তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ। আয়োজনকে কেন্দ্র করে সেদিন সকাল থেকে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের মুখে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ঢল নামে। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেয়ার কথা তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার।

সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচিও রেখেছিল আওয়ামী লীগ। আর এ কারণে সিদ্ধান্ত হয় ট্রাকের ওপর অস্থায়ী মঞ্চ নির্মাণের।

বিকেলে যথাসময়ে শুরু হয় সভার কার্যক্রম। একে একে কেন্দ্রীয় নেতারা মঞ্চে আসেন বক্তব্য দিতে। সবশেষে বক্তব্য দিতে ওঠেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। বক্তব্য শেষে যখন তিনি মঞ্চ থেকে নামছেন, তখন কয়েকজন ফটো সাংবাদিক তাকে ছবির জন্য পোজ দিতে অনুরোধ জানান। তাদের অনুরোধেই আবার মঞ্চে ফিরে আসেন শেখ হাসিনা।

তখনই শুরু হয় হামলা। একের পর এক বিস্ফোরিত হতে থাকে গ্রেনেড। মুহূর্তে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ পরিণত হয় মৃত্যুপুরীতে। মানুষের ছিন্নভিন্ন দেহ আর রক্তে হতবিহ্বল হয়ে পড়ে সেই সড়কটি। মানুষের কান্না আর আর্তনাদে ভারী হয়ে আসে আকাশ।

পরপর ১৩টি বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে পুরো এলাকা।

গ্রেনেড হামলা শুরু হওয়ামাত্র ট্রাকে থাকা নেতা-কর্মী ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকর্মীরা মানবঢাল তৈরি করে রক্ষা করেন শেখ হাসিনাকে। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান শেখ হাসিনা। তাকে যখন ট্রাক থেকে নামিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন শেখ হাসিনার গাড়ি লক্ষ্য করেও কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে হামলাকারীরা। এ সময় শেখ হাসিনাকে বাঁচাতে বুক পেতে দেন তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকর্মী মাহবুবুর রশীদ। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তার।

ওই দিন শেখ হাসিনা বেঁচে গেলেও প্রাণ হারান আওয়ামী লীগের ২৪ নেতা-কর্মী। আহত হন অন্তত ৩০০ জন। এর মধ্যে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান ১৬ জন। পরে মারা যান আরো ৮ জন। হামলায় গুরুতর আহত হয়ে তিন দিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আইভি রহমান। আহত হওয়ার পর প্রায় দেড় বছর মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে হেরে যান আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফ।

এই হামলার সঙ্গে জঙ্গিগোষ্ঠী জড়িত হলেও সে সময় ক্ষমতায় থাকা বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারে থাকা লোকজনের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হয়। মামলার সাক্ষীদের বয়ানে জানা যায়, হামলার পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান। রায়ে অন্য অনেকের সঙ্গে তারও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়।

জজ মিয়া নাটক:

নারকীয় সেই হামলার দিনই পুলিশ বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় একটি মামলা করে। ২২ আগস্ট আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মামলা করতে গেলে তা গ্রহণ করেনি পুলিশ। মামলাটি তদন্তের ভার পরবর্তী সময়ে ন্যস্ত হয় সিআইডির হাতে।

শুরু থেকেই তদন্তটি প্রভাবিত করার চেষ্টার অভিযোগ করে আওয়ামী লীগ। মামলার আলামত নষ্টের অভিযোগও আনা হয় তৎকালীন বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে।

সেই সময় সরকারে থাকা বিএনপির বিভিন্ন নেতা প্রকাশ্যে বক্তব্যে হামলার জন্য আওয়ামী লীগকেই দায়ী করেন। তারা দাবি করেন, আওয়ামী লীগ নিজেরাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে।

এ হামলার প্রায় ১০ মাস পর একজন আসামিকে গ্রেপ্তারের তথ্য জানায় সিআইডি। এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় জজ মিয়া নামে এক তরুণকে। সিআইডি সে সময় জানায়, ২০০৫ সালের ৯ জুন নোয়াখালীর সেনবাগের বীরকোট গ্রাম থেকে জজ মিয়াকে আটক করা হয়েছে।

এরপর ১৭ দিন ধরে চলে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ। রিমান্ড শেষে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তিনি। সেই জবানবন্দিতে জজ মিয়া বলেন, পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে বড় ভাইদের নির্দেশে তিনি অন্যদের সঙ্গে গ্রেনেড হামলায় অংশ নেন। আর বড় ভাইয়েরা হচ্ছেন দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন, জয়, মোল্লা মাসুদ ও মুকুল।

এ ঘটনার পর তদন্ত প্রায় শেষ করে সিআইডি। কিন্তু জজ মিয়ার মা জোবেদা খাতুনের একটি বক্তব্যে পুরো ঘটনা ফাঁস হয়ে যায়। তিনি সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, তার ছেলেকে গ্রেপ্তারের পর থেকেই সিআইডি তার পরিবারকে মাসে মাসে ভরণপোষণের টাকা দিয়ে আসছে।

এতেই ফাঁস হয়ে যায় জজকে গ্রেনেড হামলা মামলায় রাজসাক্ষী করতে সিআইডির পরিকল্পনা। সে সময় এটি নিয়ে সারা দেশেই বেশ আলোড়ন সৃষ্টি হয়। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এসে মামলাটি নতুন করে তদন্তের নির্দেশ দেয়।

পরে এ ঘটনার সঙ্গে জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের জড়িত থাকার বিষয়টি বেরিয়ে আসে। এ ছাড়াও ঘটনায় তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর যোগাযোগের বিষয়টিও বের হয়ে আসে।

‘বঙ্গবন্ধুর রক্তের ধারা নিশ্চিহ্ন করতেই হামলা’:

২১ আগস্ট হামলাকে স্বাধীনতার পরাজিত শক্তির প্রতিশোধ হিসেবেই দেখে আওয়ামী লীগ। দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা বলছেন, মূলত বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকার নিশ্চিহ্ন করতেই পরিকল্পিত এ হামলা।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা যখন আবার জাগো সোনার বাংলা কর্মসূচি নিয়েছি, তখনই সেই ২১ আগস্টের সৃষ্টি। দেখেন এদের সঙ্গে জড়িত কারা। সেই মুক্তিযুদ্ধবিরোধী চক্র, ধর্মের নামে যারা রাজনীতি করে।

‘এটা একটা বিরাট ষড়যন্ত্র, এটা এখনও চলছে। মুফতি হান্নানকে দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে ১৮ বার হত্যার চেষ্টা হয়েছে, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা হয়েছে। এটা সেই স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা মেনে নিতে পারেনি, তারাই এ দেশকে তালেবানি রাষ্ট্র বানিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের অপচেষ্টা এখনও করছে।’

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘১৫ আগস্ট আপনারা খেয়াল করেন। ছোট্ট রাসেল বাঁচতে চেয়েছিল, কত কাকুতি-মিনতি করেছে, কিন্তু বাঁচতে দেয়নি। অর্থাৎ খুনিদের আরেকটি উদ্দেশ্য ছিল যে বঙ্গবন্ধুর রক্তের কেউ যেন এ দেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসতে না পারে। এ কারণেই কামাল-জামাল-রাসেলকে হত্যা করেছিল।

‘তার দুই কন্যা বিদেশে ছিলেন, জ্যেষ্ঠ কন্যার হাতে আমরা পতাকা দিয়েছি। এই জ্যেষ্ঠ কন্যাকেও এই আগস্ট মাসেই, ২১ আগস্ট হত্যা করার চেষ্টা করেছিল। প্রধানমন্ত্রী কিন্তু জীবনের ঝুঁকি নিয়েই কাজ করছেন।’

© এই নিউজ পোর্টালের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

ফেসবুকে শেয়ার করুন

More News Of This Category
পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
Developed by: A TO Z IT HOST
Tuhin
error: Content is protected !!