নড়াইল নিউজ ২৪.কম ডেস্ক:
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় এই ছোট শিশুশেখ রাসেলকেও। তখন রাসেল ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল ও কলেজের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। রাসেলের বয়স তখন ছিল মাত্র ১০ বছর। ১৯৬৪ সালে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে জন্ম নেন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ সন্তান শেখ রাসেল।
নির্মম সেই হত্যাকাণ্ডের এত বছর পর শেখ রাসেলের জন্মদিন স্বীকৃতি পেল জাতীয় দিবস হিসেবে। সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠকে ১৮ অক্টোবর শেখ রাসেলের জন্মদিনটি ‘শেখ রাসেল দিবস’ হিসেবে জাতীয়ভাবে পালনের অনুমোদন দেয়া হয়। মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এখন থেকে দিনটি ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত করে জাতীয়ভাবে পালন করা হবে।
দিবসটি জাতীয়ভাবে পালনের প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় উত্থাপন করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক। প্রস্তাবটি অনুমোদনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তিনি।
নিউজবাংলাকে পলক বলেন, ‘এর মাধ্যমে শিশু কিশোররা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্বন্ধে জানতে পারবে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হতে পারবে। ১৫ আগস্টের যে বিয়োগাত্মক ঘটনা সেটি তারা জানতে পারবে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বঙ্গবন্ধুর সৈনিক হিসেবে গড়ে উঠবে বলেই আমরা আশা করি।
‘একই সঙ্গে আমরা এই দিবসে আমরা শপথ নেব শেখ রাসেলের মতো কোনো শিশুই যেন আর কখনও নির্মমতার শিকার না হয়। শুধু বাংলাদেশেই না, সারা বিশ্বেই যেন শিশুরা নিরাপদ থাকে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা একই সঙ্গে প্রস্তাবও করেছি ১৮ অক্টোবর শিল্প, সাহিত্য, ক্রীড়া, সংস্কৃতি ও প্রযুক্তিতে জাতীয় পদক প্রদানের। এটি হলে এই খাতগুলোতে শিশুদের উৎসাহিত করা যাবে।’
১৯৯৯ সালে শিক্ষার্থীদের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গঠন করেন ‘শেখ রাসেল শিশু-কিশোর পরিষদ’। সংগঠনটির উদ্দেশ্যই ছিল শিশু-কিশোরদের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও বঙ্গবন্ধুর অবদান তুলে ধরে দেশপ্রেমিক হিসেবে গড়ে তোলা।
দিবসটির স্বীকৃতি মেলায় সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছে শেখ রাসেল শিশু-কিশোর পরিষদ। সংগঠনটির সভাপতি রকিবুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘একসময় এ দেশে স্বাধীনতার ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছে, বঙ্গবন্ধুর অবদানকে বিকৃত করা হয়েছে। আমরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে হাজার হাজার বই, হাজার হাজার মোটিভেশন ছাত্রছাত্রীদের দিয়েছি।
‘১৮ অক্টোবরের অনুষ্ঠানে সব সময় উনি প্রধান অতিথি হিসেবে এসেছেন। রাসেলের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে আজকে হাজার হাজার ছেলেমেয়ে সিভিল সার্ভিস থেকে শুরু করে ব্যবসা-বাণিজ্য বিভিন্ন জায়গায় ঢুকেছে। আমি মনে করি, এটা প্রধানমন্ত্রীর একটি সঠিক সিদ্ধান্ত। এই স্বীকৃতিতে এ দেশের ছাত্রসমাজসহ সবাই উপকৃত হবে। আমি প্রধানমন্ত্রী ও তার ক্যাবিনেটকে অভিনন্দন জানাই।’
দিনটিকে জাতীয় দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মন্ত্রিসভার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন শেখ রাসেল শিশু-কিশোর পরিষদের উপদেষ্টা ও পদ্মা ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাত।
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি এর মাধ্যমে রাসেলের যে আত্মত্যাগ তা এত বছর পরে হলেও স্বীকৃতি পেল।’
শেখ রাসেল এ সময়ের হাজার হাজার শিশুর সামনে এক উজ্জ্বল আদর্শ মন্তব্য করে চৌধুরী নাফিজ সরাফাত বলেন, ‘ছোট রাসেলের হৃদয়জুড়ে ছিল মানুষের জন্য ভালোবাসা। তার স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে মানুষের সেবায় নিজেকে উজাড় করে দেবে। দেশের প্রেসিডেন্টের সন্তান হয়েও একদম সাদামাটা জীবন ছিল শেখ রাসেলের।
‘ঘাতকের বুলেট শেখ রাসেলকে স্বপ্ন বাস্তবায়নের সুযোগ দেয়নি। তবে ঘাতকেরা তার স্বপ্নকে হারাতে পারেনি। এ সময়ের লাখো শিশুর মাঝে আরও উজ্জ্বল হয়ে টিকে আছে শেখ রাসেলের স্বপ্নের বাংলাদেশ।’