স্টাফ রিপোর্টার, নড়াইল
নড়াইল জেলা কালচারাল অফিসারের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দূর্নীতির তদন্ত শুরু হয়েছে। রোববার (২৪ ডিসেম্বর) বেলা ১১টা থেকে দুপুর পর্যন্ত অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) এম.এম আরাফাত হোসেনের কার্যালয়ে ৩২জন সাংস্কৃতিক কর্মী, শিল্পকলা একাডেমীর শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও দু’জন ব্যবসায়ী এ স্বাক্ষী দেন। সবাই তার অপসারণ ও শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, যোগদানের ১১ মাসের মধ্যে তিনি প্রায় ৩০ লাখ টাকার দূর্নীতি করেছেন। জেলা প্রশাসকের নিকট লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত কমিটি গঠন করেন তিনি।
জানা গেছে,বর্তমান জেলা কালচারাল অফিসার হামিদুর রহমান এ বছরের জানুয়ারী মাসে যোগদানের পর থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে শিল্পী, বিচারক ও কলাকুশলীদের জন্য সরকারি নির্ধারিত সম্মানি দেন না। অনুষ্ঠনের জন্য যে বরাদ্দ থাকে তার চার ভাগের একভাগও খরচ করেন না। সম্প্রতি জেলা শিল্পকলা অডিটোরিয়ামের লাইটিং, সাউন্ড, ইলেকট্রিক ও ভবন সংস্কারে ১০ লাখ টাকার কাজ হলেও অভিযোগ রয়েছে, এ কাজে খাতা-কলমে টেন্ডার দেখিয়ে মূলত নিজেই কাজ করেছেন। এছাড়া শিল্পকলা একাডেমিতে সংগীতের বিভিন্ন শাখার ক্লাস চলাকালীন সময়ে কালচারাল অফিসার সংগীত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে তিনি অসদাচরণ করে থাকেন।
এদিকে জেলা কালচারাল অফিসারের দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ প্রকাশে এস কে সুজয় নামে এক গণমাধ্যমকর্মীর বিরুদ্ধে গত ২১ ডিসেম্বর আদালতে মানহানী মামলা হয়েছে। কালচারাল অফিসার হামিদুর রহমান বাদী হয়ে সদর আমলী আদালতে ৫০ লাখ টাকার মানহানি মামলা করেন। মামলাটি আমলে নিয়ে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২ এর বিচারক হেলাল উদ্দিন নড়াইল সদর থানার ওসিকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। মামলার পরবর্তী দিন ধার্য হয়েছে ২০২৪ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি। সুজয় যশোর ও ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিকের প্রতিদিধি।
তদন্ত কমিটির কাছে স্বাক্ষ দেন শহরের পাওয়ার ভয়েজেরে (সাউন্ড) মালিক রবিউল ইসলাম রুবেল জানান, গত ১৩ জুন কালচারাল অফিসার শিল্পকলা অডিটোরিয়াম সংস্কারের নামে তার দোকানের একটি প্যাড ব্যবহার করে ২ লাখ ৮৪ হাজার টাকার বিল দেখালেও এ বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা।
ছবি: নড়াইল নিউজ ২৪.কম
শহরের অংকন লাইট হাউজের মালিক পলাশ দেবনাথ জানান, জেলা কালচারাল অফিসার এ বছরের ১২ জুন তার দোকানের দু’টি প্যাড ব্যবহার করে একটিতে ৩ লাখ ৪৪ হাজার এবং অপরটিতে ৩ লাখ ২২হাজার টাকার বিল দেখিয়েছেন । আমার কাছ থেকে তিনি কোনো কাজই করাননি। আমি এ বিষয়ে কিছুই জানিনা। তিনি এ ঘটনার বিচার দাবি করেন।
সংগীত শিল্পী পূর্বা সোম বলেন, জেলা কালচারাল অফিসার গত ৭ জুন কালিয়ায় পট গানের অনুষ্ঠান এবং ৩ ডিসেম্বর গণজাগরণের সাংস্কৃতিক উৎসবে গান করি। সরকারিভাবে আমাদের জন্য নির্ধারিত একটি সম্মানি থাকলেও তা দেওয়া হয়নি। একই অভিযোগ করেন মনিমা আক্তার মনি, পিংকী সাহা, অথই সোম ও মেঘা সোম।
নড়াইলের বাংলা বাউল দলের সভাপতি ইকবাল হোসেন জানান, গত ৩ ডিসেম্বর জেলা শিল্পকলা অডিটোরিয়ামে গণজাগরণের সাংস্কৃতিক উৎসবে সংগঠনের শিল্পীরা গান করে। সরকারিভাবে আমাদের জন্য ১০ হাজার বরাদ্দ থাকলেও মাত্র ২ হাজার টাকা দেওয়া হয়। এ উৎসবের মোট বাজেট ছিল ২ লাখ টাকা। মোট ৭২জন শিল্পী, বিচারক ও কলাকুশলী অংশগ্রহন করলেও আর কাওকে কোনো অর্থ দেয়া হয়নি।
অভিভাবক কল্যানী বিশ্বাস বলেন, তার ছেলে ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র অংকন বিশ্বাসের সংগীত বিভাগের ৪র্থ বর্ষের সার্টিফিকেট নেওয়ার জন্য জেলা কালচারাল অফিসার অতিরিক্ত ৪শ টাকা নিয়েছে যা ফ্রি দেওয়ার কথা।
অভিভাবক বিথি সাহা, চন্দনা মোহন্তসহ অনেকে বলেন জেলা কালচারাল অফিসার শিক্ষার্থী ও শিক্ষার্থীদের সাথে চরম দূর্বব্যবহার করে থাকে। আমরা তার অপসারণ ও শাস্তি চাই।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের নড়াইলের সভাপতি মলয় কুন্ডু জানান, বর্তমান জেলা কালচারাল অফিসার যোগদানের ১১ মাসের মধ্যে তিনি প্রায় ৩০ লাখ টাকার দূর্নীতি করেছে। আমরা তার অপসারণ ও শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। তাকে অপসনারণ করা না হলে মানববন্ধন, বিক্ষোভসহ বৃহত্তর আন্দোলন ঘোষণা করা হবে।
জেলা কালচারাল অফিসার মোঃ হামিদুর রহমান তার বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) এম এম আরাফাত হোসেন বলেন, রোববার অনেক শিল্পী, অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা স্বাক্ষ্য দিয়ে গেছে। তদন্ত চলছে। আগামি এক সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়া হবে।