নড়াইল নিউজ ২৪.কম ডেস্ক:
পাবনার একটি মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করান জমিজমা লিখে নিতে ষাটোর্ধ্ব খলিল শেখকে স্ত্রী-সন্তানরা। মানসিক ভারসাম্যহীন দাবি করে ভর্তির পর চিকিৎস জানান খলিল শেখ সুস্থ। এরপর তাকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনেন স্ত্রী-সন্তানরা। অমানবিক এমন আচরণের শিকার হলেও খলিল শেখ বলছেন, তাদের বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই। ঘটনাটি ঘটেছে মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার খালিয়া ইউনিয়নের বৌলগ্রামে।
বাড়ি ফিরে খলিল শেখ নিজেকে মানসিক ভারসাম্যহীন নয় দাবি করছেন। তিনি বলেন, ‘আমি পাগল না, আমাকে পাগল সাজানো হয়েছিল।’ রোববার সকালে বাড়িতে ফিরে সাংবাদিকদের কাছে এমন দাবি করেন খলিল শেখ।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সম্প্রতি এক ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে খলিল শেখের বিষয়ে জানতে পারেন এলাকার লোকজন।
জানা গেছে, সম্পত্তি বেহাতের আশঙ্কা করে তা লিখে নিতে খলিল শেখের স্ত্রী, ছেলেমেয়ে মিলে তাকে নির্যাতনের পর ১০ সেপ্টেম্বর একটি হাসপাতালে ভর্তি করেন।
খলিল শেখের আত্মীয়স্বজন ও স্থানীয়রা জানান, ২৪ সেপ্টেম্বর খালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ্ আলম হামিদুর রহমানের সহযোগিতায় স্থানীয় ইউপি সদস্য সাগর হোসেন, যুবলীগ নেতা রেজওয়ান হোসেন এবং নির্যাতনের শিকার খলিল শেখের দুই ছেলে নাজমুল শেখ ও আসিব শেখ পাবনা সুরমা মেন্টাল ক্লিনিক মানসিক হাসপাতালে গিয়ে খলিলকে বাড়ি আনেন। চিকিৎসরা খলিল শেখ সুস্থ বলে জানান।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে খলিল শেখ বলেন, ‘আমি কখনোই পাগল ছিলাম না। সম্পত্তির জন্য আমার স্ত্রী-সন্তানরা আমাকে পাগল সাজিয়ে পাবনা নিয়ে গেছে। তারা ভেবেছে আমার সম্পত্তি আমি অন্য কারও নামে লিখে দেব। সেটা তাদের ভুল ধারণা। এখন তাদের ধারণা পাল্টেছে, তাই বাড়িতে আনছে। আমি ওদের সঙ্গেই থাকব। ওদের ছাড়া আমার তো কেউ নাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি ১২ বছর বিদেশে ছিলাম। আমার ১০-১২ বিঘা জমি ও একটি বিল্ডিং আছে। কিছুদিন আগে জমি বিক্রি করে সাত লাখ টাকা পরিবারকে দিয়েছি। ওরা সব সম্পত্তি লিখে নিতে মাঝেমধ্যেই চাপ দিত। রাজি না হওয়ায় আমাকে মারধরসহ নানাভাবে নির্যাতন করেছে। আমি মরে গেলে তো ওরাই এসব সম্পত্তির মালিক হবে। কেন আগে লিখে দেব।’
খলিল শেখের ছোট ছেলে আসিব শেখ বলেন, ‘আমার বাবা সুস্থ হওয়ায় পাবনা থেকে বাড়িতে এনেছি। আব্বা আমাদের সঙ্গে বাড়িতে থাকবে। আত্মীয়স্বজনরা তাকে দিয়ে সম্পত্তি লিখে নেয়ার চেষ্টা করেছিল।’
খলিল শেখের ছোট ভাই তারা মিয়া বলেন, ‘আমরা সম্পত্তি লিখে নিতে চাইনি। বরং তার স্ত্রী-সন্তানরা মিলে আমার ভাইকে নির্মম নির্যাতন করে পাগল সাজিয়েছিল। এখন অন্তত বাড়িতে আনছে, এতেই আমরা খুশি।’
রাজৈর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘খলিল শেখের ছোট ভাই নিখোঁজের জন্য সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন। তিনি এখন বাড়িতে। বিষয়টি নিয়ে কিছু করার নেই। তবে খলিল শেখ যদি তার পরিবারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন, তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
অন্ধকার ঘরে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন করার ৫৩ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হলে এলাকায় ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়।