নড়াইল নিউজ ২৪.কম ডেস্ক:
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আলোচিত গাড়িচালক আব্দুল মালেককে অস্ত্র আইনের মামলায় পৃথক দুটি ধারায় ১৫ বছর করে ৩০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। দুটি সাজাই চলবে একসঙ্গে। ফলে ১৫ বছরের সাজা খাটলেই চলবে তার। ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-৪ এর বিচারক রবিউল আলম সোমবার দুপুরে এ রায় ঘোষণা করেন। অস্ত্র আইনের দুটি ধারার মধ্যে অস্ত্র রাখার জন্য মালেককে ১৫ বছর এবং গুলি রাখার জন্য ১৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। দুটি সাজার মেয়াদ একসঙ্গে শেষ হবে বলে রায়ে উল্লেখ করেন বিচারক।
মালেককে সাজার পরোয়ানাসহ কারাগারে পাঠানোর আদেশও দেন বিচারক। মাত্র পাঁচ মিনিটেই রায় পড়া শেষ করা হয়।
রায় শোনানোর পর মালেক তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘আমাকে মিথ্যাভাবে অস্ত্র ও গুলি দিয়ে ধরা হয়েছে। আমি নির্দোষ, আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। র্যাব যখন বাসায় আসে তখন আমার বাসায় কিছুই পাই নাই। পরে এসব অস্ত্র-গুলি কোথা থেকে এলো?’
মালেকের রায় শুনে আদালতের সামনে সঙ্গা হারিয়ে ফেলেন তার স্ত্রী। আর মালেকের বোন চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘মিথ্যা মামলায় আমার ভাইকে ফাঁসানো হয়েছে। আমি আমার ভাইকে না নিয়ে বাসায় যাব না…।’
মালেকের ছেলে চিৎকার করে বলেন, ‘আমার বাপের এত টাকা, কোথায় গেল এসব টাকা? ১০০-২০০ কোটি টাকা আমার বাপের, কোথায় গেলো?
এরপর কর্তব্যরত পুলিশের হস্তক্ষেপে তাদেরকে মহানগর আদালতের দ্বিতীয় তলা থেকে নিচে নামিয়ে নেয়া হয়।
রায়ে আসামি মালেকের আরও বেশি সাজা প্রত্যাশা করেছিল রাষ্ট্রপক্ষ। সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর মোহাম্মাদ সালাহউদ্দিন হাওলাদার বলেন, ‘আসামির বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ প্রমাণ করতে আমরা রাষ্ট্র পক্ষ সক্ষম হয়েছি।’
তবে মালেকের আইনজীবী শাহীনুর ইসলাম অনি রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা এই রায়ের মধ্যে দিয়ে ন্যায় থেকে বঞ্চিত হয়েছি। আসামি মালেকের কাছ থেকে অস্ত্র গুলি কিছুই উদ্ধার ছিল না। এ রায়ের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে যাব। আসামি কোনোভাবেই ন্যায় বিচার পায়নি।’
তার দাবি, এই মামলার অভিযোগপত্রের অন্তর্ভুক্ত ১৩ জন সাক্ষীর সবাই আদালতে সাক্ষ্য দিলেও সে সাক্ষ্য ১৩ রকমের হয়েছে। কোনো সাক্ষী গুছিয়ে কিছু বলতে পারেনি। জেরাতে সবাই বিতর্কিত হয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘এসব কারণে আমাদের জন্য খালাস পাওয়া সহজ ছিল, কিন্তু আদালত তাকে সর্বোচ্চ কারাদণ্ড দিয়েছে। এই মামলায় সাজা হওয়ার মতো কোনো উপাদান ছিল না। এরপরও আসামি ন্যায় থেকে বঞ্চিত হয়েছে।’
গত ১৩ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত ২০ সেপ্টেম্বর রায়ের তারিখ ধার্য করে।
গত ৯ সেপ্টেম্বর আত্মপক্ষ শুনানিতে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে ন্যায়বিচার চান আব্দুল মালেক।
এর আগে গত ৫ সেপ্টেম্বর মামলাটিতে সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়। মামলাটিতে ১৩ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৩ জনেরই সাক্ষ্য গ্রহণ করেছে আদালত।
ঢাকার এক নম্বর মহানগর বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক কে এম ইমরুল কায়েশের আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়। গত ৬ সেপ্টেম্বর মামলার অবশিষ্ট অংশ বিচারের জন্য সংশ্লিষ্ট আদালতে পাঠানো হয়।
মালেকের বিরুদ্ধে গত ১১ মার্চ চার্জ গঠন করে আদালত। এর আগে গত ১১ জানুয়ারি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র্যাব-১ এর এসআই মেহেদী হাসান চৌধুরী মালেকের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দেন।
অবৈধ অস্ত্র, জাল নোট ব্যবসা ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গত বছর ২০ সেপ্টেম্বর ভোরে রাজধানীর তুরাগ এলাকা থেকে গাড়িচালক মালেককে গ্রেপ্তার করে র্যাবের একটি দল। এসময় তার কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, পাঁচ রাউন্ড গুলি, দেড় লাখ বাংলাদেশি জাল নোট, একটি ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় র্যাব-১ এর পরিদর্শক (শহর ও যান) আলমগীর হোসেন বাদী হয়ে তুরাগ থানায় অস্ত্র ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে দুটি মামলা দায়ের করেন।