নড়াইল নিউজ ২৪.কম ডেস্ক:
অবশেষে দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর সেই চেনা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিরল উচ্ছ্বাসিত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। আজ রোববার দেশের স্কুল-কলেজ খুলে দিলে সকাল থেকেই একটা সাজ সাজ অবস্থা দেখা গেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে।ক্লাস চালু হওয়ায় শিক্ষক- শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক উচ্ছ্বাস। তবে এ উচ্ছ্বাসের সঙ্গে অভিভাবকের মধ্যে কিছু শংকাও দেখা গেছে। বিদ্যালয় কৃর্তপক্ষ অভিভাবকদের অভয় দিয়ে যথাযথ স্বাস্থবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের স্কুলে পাঠানোর পরামর্শ দিচ্ছেন।
রাজধানীর একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকেই রাজধানীর অন্যতম ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের ভিড়। সময়ের আগেই অনেকেই চলে যায় স্কুলের ফটকের সামনে।
সকাল সাড়ে ৭টা, সাদা শার্ট আর কালো প্যান্ট পরে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘদিন পর সশরীরে ক্লাসে বসার আনন্দ তাদের চোখে-মুখে। কলেজ কর্তৃপক্ষক সমউচ্ছ্বাসে তাদের ফুল দিয়ে বরণ করে নিচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে একে একে সবাইকে ঢোকানো হয়েছে শ্রেণিকক্ষে। করোনা সংক্রমণের কারণে টানা ৫৪৩ দিন বন্ধ থাকার পর শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়েছে শিক্ষাঙ্গন।
রাজধানীর সিটি কলেজ, ধানমন্ডি গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুল এবং ঢাকা কলেজ ঘুরে দেখা যায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সামনে সকাল থেকেই ভিড় করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘদিন পর ক্লাস শুরু হওয়ার প্রায় প্রতিটি শিক্ষার্থীর সঙ্গেই এসেছেন অভিভাবকরাও। মূলত শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়ে উদ্বিগ্নতার কথা জানান তারা। তবে সংশ্লিষ্ট স্কুল ও কলেজ প্রশাসন বলছে, যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনেই ক্লাস শুরু করা হচ্ছে। আগে যে সব শ্রেণিকক্ষে একসঙ্গে অনেক শিক্ষার্থী বসে ক্লাস করত সেখানে এখন ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। শ্রেণিকক্ষের সংখ্যাও বাড়ান হয়েছে। এছাড়াও প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের প্রবেশমুখেই ছিল স্বাস্থ্যবিধির কড়াকড়ি। মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার নিশ্চিত করে এবং বডি থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে শরীরের তাপমাত্রা মাপার পরই প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছিল শিক্ষার্থীদের।
ঢাকা কলেজে প্রবেশমুখে ও প্রতিষ্ঠানের ভেতরে বেসিন, সাবান এবং পানির ব্যবস্থা করা হয়। এছাড়াও প্রবেশ মুখে ও আশেপাশে বিভিন্ন ব্যানার ও ফেস্টুনে সশরীরে ক্লাসের নির্দেশনাও টানিয়ে দেওয়া হয়।
সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী চলতি ও পরবর্তী বছরের এসএসসি-এইচএসসি এবং সমমানের শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন ক্লাস করবে আর বাকিরা করবে সপ্তাহে একদিন। নির্দেশনা অনুযায়ী ধানমন্ডি গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুলে ক্লাস শুরু হয় সকাল ৮টায়।
কর্তৃপক্ষ জানায়, স্কুলে ক্লাসের ক্ষেত্রে সকালে ১৯টি শিফটের ক্লাস ৮টা থেকে ১১টা এবং বিকেলে ১১টি শিফটের ক্লাস ১২টা ২০ থেকে ৩টা ৪০ পর্যন্ত চলবে। তবে কোনো কক্ষেই বসানো হচ্ছে না ৩০ জনের অধিক শিক্ষার্থী।
রাজধানীর ঢাকা কলেজেও সকাল ৮টায় শুরু হয় উচ্চমাধ্যমিকের একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ক্লাস। দীর্ঘদিন পর শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ফেরায় লাল গোলাপ দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয় ঢাকা কলেজের পক্ষ থেকে। এরপর আগত শিক্ষার্থীদের শিক্ষক ও স্বেচ্ছাসেবীদের মাধ্যমে শ্রেণিকক্ষে পাঠানো হয়। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে পুরো ক্যাম্পাসের সব ক্লাসরুম জুড়েই শিক্ষার্থীদের বসানো হয়।
ঢাকা কলেজের পাঠ পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও নিবিড় পর্যবেক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক ও ইংরেজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক পুরঞ্জয় বিশ্বাস বলেন, দীর্ঘদিন পর কলেজে শিক্ষার্থীদের সশরীরে ক্লাস শুরু হয়েছে। করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে পুরো ক্যাম্পাস জুড়েই শ্রেণিকক্ষের সংখ্যা বাড়ান হয়েছে। কোনো কক্ষে আমরা ৫০ জনের বেশি শিক্ষার্থী বসাইনি।
এছাড়াও শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক করতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন বলে মনে করেন ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আইকে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন পর সশরীরে ক্লাস কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। এখানে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবাইকে স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টি খেয়াল রেখেই যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস:
দীর্ঘ দিন পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পা রেখেই আনন্দ-উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে শিক্ষার্থীরা। সবারই চোখে মুখে ছিল খুশির ঝিলিক।
স্কুল প্রাঙ্গণ আবারও মুখরিত চিরচেনা সেই পরিবেশে। যেখানে শিক্ষার্থীরা আবার সশরীরে ক্লাসে অংশ নিচ্ছেন আর শিক্ষকরাও পাঠদান করছেন। এ নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবার চোখে মুখেই ছিল খুশির ঝিলিক। তবে এ আনন্দের সঙ্গে অভিভাবকদের আছে উদ্বেগও।
শিক্ষার্থী বরণ:
দীর্ঘ ১৭ মাস পর স্কুল খোলার প্রথম দিনে নানা উৎসব-আয়োজনের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের বরণ করে নিতে দেখা গেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে।
রাজধানীর একাধিক স্কুলে গিয়ে বেলুনসহ নানা উপকরণ দিয়ে সাজাতে দেখা গেছে। স্কুলে শিশু-কিশোররা যেন নির্ধারিত দূরত্ব বজায় রেখে অবস্থান করে, সে জন্য করিডোরে দাগ দিয়ে দেয়া হয়েছে।
গত ৫ সেপ্টেম্বর করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমে আসায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার ঘোষণা দেয় সরকার।
তখন জানানো হয়, সংক্রমণের হার দ্রুত কমছে। আর টিকাদান কার্যক্রমে গতি থাকায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
দীপু মনি সে সময় বলেন, ‘যারা ২০২১ সালে এসএসসি-এইচএসসি আর আগামী বছরের এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার্থী তারা প্রতিদিন ক্লাসে আসবে। এ ছাড়া অন্যান্য ক্লাস এক দিন চলবে। একইভাবে প্রাথমিকের পঞ্চম শ্রেণি প্রতিদিন এবং অন্যান্য ক্লাস সপ্তাহে এক দিন চলবে।’
গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনার রোগী শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ১৭ মার্চ বন্ধ করা হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এরপর মোট ২৩ দফায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়ানো হয়।