নড়াইল নিউজ ২৪.কম ডেস্ক:
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন,আমরা আশা করি, ভারত সরকার তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে চলবে। সীমান্তে হত্যাকাণ্ড বন্ধে ভারত বাংলাদেশকে আশ্বাস দিয়েছে। ভারত সরকার তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে বলেও আশা প্রকাশ করেন। ঢাকায় সরকারি বাসভবনে সোমবার নিয়মিত ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।
কাদের বলেন, ‘আমি পরিষ্কার বলতে চাই, সীমান্তে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে ভারত সরকারের সঙ্গে আমাদের কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে উচ্চ পর্যায়ে এবং তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সীমান্তে হত্যাকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি ঘটবে না। আমরা আশা করি, ভারত সরকার তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে চলবে।’
গত দুই দশক ধরেই সীমান্ত হত্যা বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে বড় কাঁটা হয়ে আছে। গত এক দশকে এসব ঘটনা আগের চেয়ে কমে আসলেও এখনও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ মারা যাচ্ছে বিএসএফের গুলিতে। বিজিবি-বিএসএফের আলোচনার পাশাপাশি দুই দেশের সরকারের মধ্যেও এই বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার কথা হয়েছে।
বাংলাদেশের মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)-এর হিসাব অনুযায়ী, ২০২০ সালে সীমান্তে মোট ৪৮ জন বাংলাদেশিকে হত্যা করে বিএসএফ৷ এর মধ্যে ৪২ জনকে গুলি করে এবং ছয় জনকে হত্যা করা হয় নির্যাতন চালিয়ে৷ অপহরণ করা হয় ২২ বাংলাদেশিকে৷
২০১৯ সালে সীমান্তে ৩৮ জন বাংলাদেশিকে হত্যা করে বিএসএফ৷ ২০১৮ সালে সীমান্তে ১৪ জন বাংলাদেশিকে হত্যা করা হয়৷ এতে স্পষ্ট যে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি হত্যা ক্রমেই বাড়ছে। বিষয়টি সরকারের সমালোচনার সুযোগও করে দিচ্ছে।
সীমান্ত নিয়ে বিএনপি নেতাদের সমালোচনার জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘তারা (বিএনপি নেতারা) ভুলে গেছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দীর্ঘদিনের সীমান্ত সমস্যার সমাধান হয়েছে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরেই।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ‘দেশের প্রতি ইঞ্চি ভূমি, প্রতিটি প্রাণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’ জানিয়ে আওয়ামী লীগের শীর্ষ স্থানীয় নেতা বলেন, ‘আমরা চাই না সীমান্তের একটি প্রাণ ঝরুক। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে এসেছে স্বাধীনতা। আওয়ামী লীগের হাতেই এদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব নিরাপদ।’
বিএনপিকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আর যারা স্বাধীনতার পরাজিত শত্রুদের হাতে হাত মিলায়, তারা কখনও স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের রক্ষক হতে পারে না।’
বিএনপি মুখে ভারত বিরোধিতার ফেনা তুললেও ভারতের সঙ্গে তারা ‘নতজানু অবস্থান’ নিয়েছিল বলেও মন্তব্য করেন কাদের। বলেন, ‘এটা তাদের সময়কালে দেশবাসী দেখেছে।’
কাদের বলেন, ‘তাদের এমনই ভারত প্রীতি যে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে দিল্লি গিয়ে গঙ্গার পানি সমস্যার সমাধানের বিষয়ে একটি কথা উচ্চারণ করতেও ভুলে গেছেন। সে কথা তিনি ঢাকায় ফিরে এসে আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে সাংবাদিকদের কাছে প্রকাশ করেছিলেন।’
সীমান্ত সমস্যাকে জিইয়ে রেখে বিএনপি রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করেছিল বলেও মন্তব্য করেন ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, ‘যারা ভারত সফরে গিয়ে পানি সমস্যা নিয়ে কথা বলতে ভুলেই গিয়েছিলেন। ভারতে সরকার পরিবর্তনের পর তারা রাত পোহানোর সঙ্গে সঙ্গে ভারতীয় দূতাবাসের বন্ধ দরজায় ফুল আর মিষ্টি নিয়ে অপেক্ষায় ছিলেন, তার চেয়ে নতজানু নীতি আর কী হতে পারে?’
শেখ হাসিনার সাহসিকতা ও কূটনৈতিক দক্ষতায় বহু বছরের পুরনো ছিটমহল বিনিময় এবং সীমান্ত সমস্যার অবসান হয়েছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি নিজেদের সময়কালে কোনো সমস্যার সমাধান তো করতে পারেনি, বরং প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে অবিশ্বাস আর আস্থাহীনতার দেয়াল তুলেছে। বছরের পর বছর সে দেয়াল আরও উঁচু করেছে।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন ‘শেখ হাসিনা সরকার দেশ ও জনগণের স্বার্থকে সমুন্নত রেখে অবিশ্বাসের দেয়াল ভেঙে তৈরি করেছেন ভারতের সরকারের সঙ্গে সম্পর্কের সেতুবন্ধন।’