নড়াইল নিউজ ২৪.কম আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
বিজ্ঞানীরা সাহারা মরুভূমির মিসর অংশে প্রাগৈতিহাসিক যুগের একটি চারপেয়ে তিমির জীবাশ্ম আবিষ্কার করেছেন । প্রাণীটির জীবনকাল ছিল চার কোটি ৩০ লাখ বছর আগের বলে ধারণা করা হচ্ছে। ওয়েস্টার্ন ডেজার্টের মাটি খুঁড়ে ১০ বছরেরও বেশি সময় আগে জীবাশ্মটি বের করে আনা হয়েছিল। কিন্তু এটি কোন প্রাণীর দেহাবশেষ, তা এতদিন ছিল অজানা।বার্তা সংস্থা এপির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
বার্তা সংস্থা এপির প্রতিবেদনে বলা হয়, কালের বিবর্তনে বর্তমানে সমুদ্রের সর্ববৃহৎ বাসিন্দা হিসেবে যে তিমির রাজত্ব, সেই তিমিরই পূর্বসূরি ছিল চারপেয়ে প্রাণীটি যার দেহাবশেষ পেয়েছেন গবেষকরা।
ডাঙা আর সাগর- দুই জায়গাতেই বিচরণ করত বলে প্রাগৈতিহাসিক তিমিটি আধা-জলজ প্রাণী হিসেবে পরিচিত।
গবেষণায় নেতৃত্ব দেয়া জীবাশ্মবিদ হাশেম সালাম জানান, এটি পুরোপুরি শিকারি প্রাণী ছিল বলে এর বৈশিষ্ট্য থেকে প্রমাণ মিলেছে।
মিসরীয় দেবতা আনুবিসের নামে নাম রাখা হয়েছে তিমির জীবাশ্মটির, ফিওমিসেটাস আনুবিস। প্রাচীন মিসরের পুরাণে উল্লেখিত আনুবিস ছিলেন মৃত্যুর দেবতা।
মিসরের মনসুরা ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক সালাম বলেন, ‘আনুবিস নাম বেছে নেয়ার কারণ হলো, প্রাণীটির চোয়াল অনেক শক্তিশালী ছিল। একেকটি কামড়ে প্রাণ কেড়ে নেয়ার ক্ষমতা রাখত তিমিটি।’
বিশালদেহী ফিওমিসেটাস আনুবিস লম্বায় নয় ফুট হলেও এর ওজন ছিল প্রায় ৬০০ কেজি। এর দৈহিক বৈশিষ্ট্যের মধ্যে দীর্ঘ খুলি ও নাক উল্লেখযোগ্য। এ থেকে ধারণা মেলে, তীক্ষ্ন ঘ্রাণ ও শ্রবণশক্তির অধিকারী ছিল প্রাণীটি; শিকারকে আঁকড়ে ধরে চিবিয়ে খেত তারা।
ওয়েস্টার্ন ডেজার্টে ফিওমিসেটাস আনুবিসের জীবাশ্মের প্রথম সন্ধান মেলে ২০০৮ সালে। মিশরীয় পরিবেশবিদরা এটির খোঁজ পান। কিন্তু জীবাশ্মটি কোন প্রাণীর, সে বিষয়ে প্রাপ্ত তথ্য ও গবেষণার ফল গত মাসেই একটি প্রতিবেদনে নিশ্চিত করেছেন গবেষকরা।
বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী প্রসিডিংস অফ দ্য রয়্যাল সোসাইটি বিতে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, যে অঞ্চলে জীবাশ্মটির সন্ধান মিলেছিল, প্রাগৈতিহাসিককালে সে অঞ্চলে ছিল গভীর সাগর।
সালাম চানান, ২০১৭ সাল পর্যন্ত জীবাশ্মটি নিয়ে কোনোরকম পরীক্ষানিরীক্ষা হয়নি। কারণ গবেষণার জন্য সেরা ও মেধাবী মিসরীয় জীবাশ্মবিদদের এক জায়গায় আনতে চেয়েছিলেন তিনি।
সালাম বলেন, ‘মিসরের ইতিহাসে এবারই প্রথম কেবল দেশের বিজ্ঞানীদের নিয়ে কোনো মেরুদণ্ডী প্রাণীর জীবাশ্ম বিশ্লেষণ করেছি আমরা। পুরোপুরি নতুন একটি প্রজাতি আবিষ্কার করেছি এবং চারপেয়ে তিমির একটি জাতের সন্ধান পেয়েছি।’
গবেষকদের মতে, তিমির বিবর্তন নিয়ে গবেষণার পথ খুলে দিয়েছে এ জীবাশ্ম। ডাঙার তৃণভোজী স্তন্যপায়ী থেকে তিমিরা কেন, কীভাবে এখনকার মাংসাশী ও পুরোপুরি সামুদ্রিক প্রাণীতে পরিণত হলো, সেটাই জানতে চান তারা।
ধারণা করা হচ্ছে, ১ কোটি বছরেরও বেশি সময় ধরে তিমিদের এ বিবর্তন ঘটেছে।
মিসরের ওয়েস্টার্ন ডেজার্ট অঞ্চল আগে থেকেই আরবি ভাষায় ‘ওয়াদি আল-হিতান’ নামে পরিচিত, যার বাংলা করলে দাঁড়ায় তিমির উপত্যকা। জনপ্রিয় এই পর্যটনকেন্দ্র মিসরের একমাত্র প্রাকৃতিক বিশ্ব ঐতিহ্য, যেখানে প্রাগৈতিহাসিক আরেকটি তিমির জীবাশ্ম রয়েছে।
নতুন আবিষ্কৃত চারপেয়ে তিমিটি ‘প্রোটিসিটিডস’ পরিবারের। বিলুপ্ত আধা-জলজ এই তিমির বাস ছিল ৫ কোটি ৯০ লাখ থেকে ৩ কোটি ৩০ লাখ বছর আগে।
সালাম জানান, এ ধরনের তিমি দীর্ঘক্ষণ শুষ্ক ডাঙায় হাঁটতে পারত। আবার পানিতেও শিকার করত।
নিউইয়র্ক ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির স্তন্যপায়ী প্রাণীর বিবর্তন ইতিহাসের বিশেষজ্ঞ জোনাথন গিজলার বলেন, ‘প্রাচীনকালে যেসব তিমি চার পা ব্যবহার করত বলে আমরা জানি, সেগুলোর মধ্যেও এটি নতুন প্রজাতি।’
তার ধারণা, তিমি কখন, কীভাবে, কেন ডাঙা থেকে আলাদা হয়েছে, সে বিষয়ে আভাস মিলতে পারে মিসরের যে এলাকায় জীবাশ্মটি পাওয়া গেছে- সেখান থেকে। গবেষণায় যুক্ত ছিলেন না গিজলার।
বিশ্বে এখন পর্যন্ত যত তিমির জীবাশ্ম আবিষ্কার হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন জীবাশ্মটি প্রায় ৫ কোটি বছরের পুরোনো। পাকিস্তান ও ভারতের কোনো এলাকায় সেটি জন্মেছিল বলে ধারণা করা হয়।
কিন্তু ডাঙা থেকে কীভাবে সমুদ্রের স্থায়ী বাসিন্দায় পরিণত হলো তিমি, সে বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি গবেষকরা।