নড়াইল নিউজ ২৪.কম ডেস্ক:
মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন যে বিবৃতি দিয়েছে, তার সঙ্গে সচিবরা একমত নয়।বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বাসভবনে হামলার ঘটনায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এসব কথা বলেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, নিজেদের অভ্যন্তরীণ বৈঠকে বিবৃতির বিষয়টি নিয়ে ভুল স্বীকার করেছে সংগঠনটি। সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে কর্মরত সচিব ও পদস্থ কর্মকর্তারাও ওই বিবৃতির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন।
বিবৃতির ভাষা নিয়েও কর্মকর্তারা আপত্তি করেছেন বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। বলেন, ‘এই ল্যাঙ্গুয়েজ, এটা হওয়া উচিত ছিল না। এটা অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের যারা ছিলেন তারাও অ্যাগ্রি করে গেছেন। এই জাতীয় ল্যাঙ্গুয়েজ ইউজ করা ওয়েলকাম করা যায় না।’
গত বুধবার (১৮ আগস্ট) রাতে ব্যানার অপসারণকে কেন্দ্র করে বরিশালে পুলিশ, আনসার ও স্থানীয় ছাত্রলীগ সদস্যদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। অভিযোগ ওঠে, ওই রাতে সদর উপজেলা ইউএনওর সরকারি বাসভবনে হামলা চালান স্থানীয় ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগ, শ্রমিক ইউনিয়ন, আওয়ামী লীগ নেতা ও সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়। এর মধ্যে একটি মামলা দায়ের করেন সদর থানার ইউএনও মো. মুনিবুর রহমান। অন্যটি করেন কোতোয়ালি মডেল থানার উপপরির্দশক (এসআই) শাহজালাল মল্লিক। দুই মামলাতেই প্রধান আসামি করা হয় মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে।
এর মধ্যে মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন (বিএএসএ)। বৃহস্পতিবার কার্যনির্বাহী পরিষদের এক জরুরি সভা শেষে গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবির কথা জানায় তারা।
সংঘর্ষের ঘটনার পরদিন বরিশালে সেরনিয়াবাত ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) প্যানেল মেয়র গাজী নঈমুল হোসেন লিটু অভিযোগ করেন, ব্যানার অপসারণ করতে গিয়ে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ইউএনওর বাধার মুখে পড়েন। ইউএনও দম্ভোক্তিসহ অশোভন আচরণ করেন এবং সবার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতে থাকেন। পরিস্থিতি শান্ত করতে সেখানে যান মেয়র। তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন ইউএনও।
এদিকে, রোববার ইউএনও মুনিবুর রহমান ও কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালতে দুটি মামলার আবেদন করা হয়েছে। বরিশালের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাসুম বিল্লাহর আদালতে মামলা দুটির আবেদন করা হয়।
এর মধ্যে একটি মামলার আবেদন করেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম খোকন। অপর মামলার আবেদন করেন বিসিসির রাজস্ব কর্মকর্তা বাবুল হালদার। দুই মামলাতেই ইউএনও মুনিবুর রহমানকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। মামলা দুটি পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
সবশেষ রোববার রাতে ইউএনও মুনিবুর রহমানের সরকারি বাসভবনে হামলা ও সংঘর্ষের বিষয়ে সমঝোতা হয়। এ কথা নিশ্চিত করেছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট এ কে এম জাহাঙ্গীর।
তিনি বলেন, রোববার রাত সোয়া ৯টায় বিভাগীয় কমিশনার সাইফুল ইসলাম বাদলের বাসভবনে সমঝোতা হয়। বৈঠকে জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার, পুলিশ কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান, বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহসহ সরকারি কর্মকর্তারা ও দলীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি আরও বলেন, আমাদের মধ্যে কিছু ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছিল। আমরা একটা সমাধানের পথে এসেছি। ইনশাল্লাহ মামলাগুলো প্রত্যাহার হয়ে যাবে। জানা গেছে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনিবুর রহমান সমঝোতা বৈঠকে ছিলেন না।
এর আগে রোববার সচিবালয়ে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। ঘটনাটি এখন বেশি মাত্রায় নেই, এটি সমাধানের দিকে চলে যাচ্ছে বলে আমি বিশ্বাস করি।