নড়াইল নিউজ ২৪.কম ডেস্ক:
পুরনো প্রকল্পে আটকে আছে দেশের শিক্ষার উন্নয়ন। আসন্ন ২০২১-২২ অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ পাচ্ছে ১১৭টি প্রকল্প। এসব প্রকল্পগুলো আবার ১ থেকে ১০ বছরের পুরনো। তবে করোনকালীন শিক্ষা ব্যবস্থায় ক্ষতি পোষাতে থাকছে না নতুন প্রকল্প কোনো। শুধু তাই নয় চলতি অর্থবছরের তুলনায় আসন্ন অর্থবছরে শিক্ষার এডিপিতে ৬৮ কোটি টাকা কম ধরা হয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের তৈরি আগামী অর্থবছরের গোপনীয় খসড়া বাজেট থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের গোপনীয় বাজেট খসড়া বইয়ে শুধু উন্নয়ন বাজেটে আসন্ন অর্থবছরে ৭টি মন্ত্রণালয়ের অধীনে শিক্ষার প্রকল্প রয়েছে ১১৭টি। এর জন্য এডিপি প্রাক্কলন করা হয়েছে ২৩ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা। যা চলতি অর্থ বছরের তুলনায় ৬৮ কোটি টাকা কম।
বরাদ্দ পাওয়া প্রকল্পগুলো হলো- প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ১২টি, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের ৭৫টি, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ১টি, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ৩টি, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ২টি, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের ১২টি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের অধীনে ১২টি। এসব প্রকল্পের বেশিরভাগই মেয়াদোত্তীর্ণ ও ১ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত পুরনো। ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ, সংস্কারের মতই প্রকল্পগুলো অগ্রাধিকার পেয়েছে।
সমাজ বিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ নেহাল করিম বলেন, জাতি হিসেবে আমরা পিছিয়ে পড়েছি। পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে। সময়ের সঙ্গে তাল না মেলাতে আমরা আরো পিছিয়ে পড়বো। তবে অতিমারীর মধ্যে সত্যিই যদি নতুন কোনো প্রকল্প না থাকে তা সত্যিই হতাশাজনক। কারণ এটা কারো অজানা নয় কোভিড শিক্ষায় কতটা ক্ষতি করেছে।
বেসরকারি সংস্থা গণস্বাক্ষরতা অভিযানের উপপরিচালক কে এম এনামুল হক এই খসড়া বাজেট বিশ্লেষণ করে বলেন, গতানুগতিকভাবেই বাজেট করা হচ্ছে। দুটি মন্ত্রণালয়েই ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন, মেশিনারি ও ইকুইপমেন্ট ক্রয় এবং অন্যান্য স্থায়ী সম্পদ ক্রয়ের জন্য বাজেট উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেলেও শিক্ষার মান উন্নয়ন (প্রশিক্ষণ ব্যতীত), স্কুল মিল কার্যক্রম এবং সামাজিক সহায়তার জন্য বাজেট বাড়ছে না। ফলে বরাবরের ন্যায় শিক্ষা সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জগুলো থেকেই যাচ্ছে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেন, শিক্ষা হবে জীবন ও জীবিকার জন্য। দুর্ভাগ্যজনকভাবে প্রতিবছর বাজেট বাড়লেও শিক্ষা সনাতন পদ্ধতিতেই থেকে যাচ্ছে।
শুধু প্রকল্প নয়, প্রকল্প বাস্তবায়নেও দেখা গেছে ব্যর্থতার চিত্র। চলতি অর্থবছরে দুই মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ পেয়েছে ৬৬ হাজার ৪০১ কোটি টাকা। যা মোট বাজেটের ১১ দশমিক ৬৯ শতাংশ। যার ২৩ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা উন্নয়ন বাজেট ও ৪৩ হাজার ১৫৬ কোটি টাকা অনুন্নয়ন বাজেট। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন বাজেট ৯ হাজার ৪০৪ কোটি টাকা, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের ১১ হাজার ৮৬৫ কোটি টাকা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বিভাগের ১ হাজার ৯৭৬ কোটি টাকা উন্নয়ন বাজেট বরাদ্দ ছিল।
গত এপ্রিল মাসে পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এডিপি বাস্তবায়ন করেছে মাত্র ৩৬.২২ শতাংশ, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ ৪৯.৭৬ শতাংশ। যা গত পাঁচ অর্থবছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
এডিপি বাস্তবায়ন করতে না পারায় বরাদ্দ বাড়ে না বলে মনে করেন পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ড. শামসুল আলম। তিনি বলেন, সরকারের হাতে আগের তুলনায় অর্থের প্রবাহ ভালো। তবে সমস্যা হচ্ছে, বরাদ্দ পাওয়ার পরও মন্ত্রণালয়গুলো গুণগত ও দুর্নীতি-মুক্তভাবে ব্যয় করতে পারছে না। বছরের পর বছর পুরনো প্রকল্পেই টাকা যাচ্ছে। যেটা উন্নয়নের অন্তরায়।
বাংলাদেশের শিক্ষার জন্য অধিক ও মানসম্মত বিনিয়োগের লক্ষ্যে সরকারের কাছে বিভিন্ন দাবি পেশ করে যাচ্ছে, বেসরকারি সংস্থা গণস্বাক্ষরতা অভিযান, দর্পণ, এডুকেশন আউটলাইড ও জিপিই ট্রান্সফরমিং এডুকেশন। শিক্ষাখাতের আমুল পরিবর্তন ও মহামারির ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে শিক্ষা বাজেটের ওপর নানা সুপারিশ সরকার ও দাতা সংস্থাগুলোর কাছে পাঠিয়েছে তারা।
এসব সংস্থা মনে করে, শিক্ষার জন্য অধিক ও মানসম্মত বিনিয়োগ প্রয়োজন। সেটি না হলে আক্ষরিক অর্থে সনাতন পদ্ধতিতেই চলবে শিক্ষাখাত। এছাড়াও করোনাকালীন ক্ষতি পোষাতে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো, শিক্ষক সহায়তা ও সাধারণ শিক্ষার সঙ্গে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রসার, শিক্ষার মনিটরিং বাড়ানো, গবেষণা বৃদ্ধি এবং শিক্ষায় সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতায় উপবৃত্তি ও স্কুল মিল কার্যক্রম জোরদার করা দরকার।