নড়াইল নিউজ ২৪.কম ডেস্ক:
দেশের আলোচিত চলচ্চিত্র অভিনেত্রী পরীমনিকে মাদক মামলায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফা রিমান্ডে দেয়ার বিষয়ে বিচারিক আদালতের দুই বিচারককে গত ১৫ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট ব্যাখ্যাসহ ডেকে পাঠানোর পর থেকে বিচারিক হাকিমের আদালতগুলো নড়েচড়ে বসেছে। রিমান্ডের বিষয়ে উচ্চ আদালতের দেয়া নির্দেশনা অনুসরণ করছেন হাকিমরা। আদালতের আইনজীবী ও আদালতসংশ্লিষ্ট পুলিশের কর্মকর্তারা এ কথা বলেছেন।
ঢাকার নিম্ন আদালতের আইনজীবী ও হিউম্যানিটি ফাউন্ডেশন ঢাকা কমিটির সভাপতি মো. পারভেজ বলেন, ‘বর্তমানে শুধু বিচারিক হাকিম আতিকুল ইসলাম ও দেবব্রত বিশ্বাস নয়, সব বিচারিক হাকিম হাইকোর্টের নির্দেশনা মেনে আসামিদের রিমান্ডে পাঠাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি মামলার মেরিট পরীক্ষা করা হচ্ছে।
‘হাইকোর্টে ব্যাখ্যার জন্য ডেকে পাঠানো দুজনই বিচারিক আদালতের খুব যোগ্যতাসম্পন্ন ম্যাজিস্ট্রেট বলে আমি মনে করি। তাদের একটি ভুলের কারণে হয়তো পরীমনি ইস্যুতে দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফা রিমান্ড নিয়ে আইনি ব্যত্যয় ঘটেছে। তবে এসবের জন্য দুই ম্যাজিস্ট্রেট শুধু দায়ী নন। আরও ওপর থেকে বিষয়টি মনিটর করা হলে এ ধরনের ব্যত্যয় হয়তো আর ঘটবে না।’
সন্ত্রাস দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর ও ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সহসাধারণ সম্পাদক মো. গোলাম ছারোয়ার খান জাকির বলেন, ‘আইন মন্ত্রণালয় এবং সুপ্রিম কোর্টের জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিএ) কমিটি যদি তাদের তদারকি সঠিকভাবে পালন করে, তাহলে বিচারিক আদালতগুলোর এ ধরনের ব্যত্যয় ঘটবে না।’
এ সময়ে কতগুলো রিমান্ড দেয়া হয়েছে জানতে চাওয়া হলে আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘পরীমনির ঘটনার পর রিমান্ডের পরিসংখ্যান দেয়া সম্ভব নয়। তবে প্রতি সপ্তাহে আনুমানিক অর্ধশতাধিক আসামির রিমান্ড দিয়ে থাকেন একজন বিচারক। এটা স্রেফ অনুমাননির্ভর।
‘কারণ প্রতিদিন থানার জিআর মামলাগুলোর শুনানির জন্য পৃথক আদালত ঠিক করা হয়ে থাকে। আজ যে আদালত পড়ে, কাল ওই থানার মামলার আসামিদের জমা বা রিমান্ড শুনানি ওই আদালতে হয় না। তাই এটার সংখ্যা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়।’
বিষয়টি নিয়ে মুখ্য মহানগর হাকিম রেজাউল করিম চৌধুরীর প্রশাসনিক কর্মকর্তা মাহবুবুল আলম জানান, এ বিষয়ে কোনো তালিকা তাদের কাছে আসে না, তাই তাদের পক্ষে রিমান্ডের পরিসংখ্যান বিষয়ে কোনো তথ্য দেয়া সম্ভব নয়।
জুডিশিয়াল পেশকার ওমর ফারুক জানান, তাদের দায়িত্ব শুধু হাইকোর্টের জামিন সংক্রান্ত বিষয়ে যাচাই করা, রিমান্ডের বিষয়ে কোনো পরিসংখ্যান তাদের জানা নাই।
আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখার পুলিশের উপপরিদর্শক আলমগীর হোসেন বলেন, ‘আজ আমাদের যে আদালত পড়েছে, শুধু সেই আদালতের কতজন আসামিকে আদালতে জমা দেয়া হয়েছে এবং কতজনকে রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে শুধু তা-ই বলতে পারব। ওই আদালতে তো অন্য থানার মামলাও আছে, বিষয়টি খোদ সিএমএম স্যারই বলতে পারবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই দুই বিচারক সাধারণত শুক্র ও শনিবারের বিশেষ আদালতের দায়িত্বে থাকেন। তাই সব মিলিয়ে দুজনের আদালত গত ১৫ সেপ্টেম্বরের পর শতাধিক আসামির রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেছেন। এর মধ্যে তৃতীয় দফার কোনো রিমান্ড নাই। দ্বিতীয় দফায় রিমান্ডে দেয়ার এক-আধটা ঘটনা থাকতে পারে।’
রিমান্ডে পাঠানো মামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে মাদক, হত্যা, ডাকাতি, প্রতারণা, জাল-জালিয়াতি ও অস্ত্র মামলা।
আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখার একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘দুই হাকিমকে হাইকোর্ট ডাকার পর থেকে কোনো হাকিমকেই তিন দিনের বেশি কাউকে রিমান্ডে পাঠাতে দেখা যায়নি। ১০ দিনের রিমান্ড আবেদনে মাত্র এক দিনের রিমান্ড দিতেও দেখা গেছে বিচারিক হাকিম আতিকুল ইসলামকে।’
১৫ সেপ্টেম্বর বুধবার বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার কাজলের হাইকোর্ট বেঞ্চে হাজির হয়ে ক্ষমা চান বিচারিক আদালতের দুই হাকিম দেবব্রত বিশ্বাস ও আতিকুল ইসলাম।
এরপরও তারা পৃথকভাবে বিভিন্ন মামলার গ্রেপ্তারকৃত অর্ধশতাধিক আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়েছেন। তবে তারা এসব আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করার ক্ষেত্রে অবশ্যই কোনো সরকারি ডাক্তার বা মেডিক্যাল বোর্ডের মাধ্যমে পরীক্ষা করে হাইকোর্টের নির্দেশনা মেনে জিজ্ঞাসাবাদ করার নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশকে।
কোনো মামলায় তৃতীয় দফা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঠাতে আর দেখা যায়নি বলে জানান আদালতের বাড্ডা থানার সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা পুলিশের উপপরিদর্শক রনপ কুমার ভক্ত। দ্বিতীয় দফা রিমান্ডের ক্ষেত্রে সব বিচারিক হাকিম বা ম্যাজিস্ট্রেট সাবধানতা অবলম্বন করছেন।
এনবি