নড়াইল নিউজ ২৪.কম আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়ার সেনা মোতায়েন করা নিয়ে উত্তেজনা কমে আসার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না, বরং যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছেন পুতিন সরকার বলে দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ইউরোপের অনেক দেশেরই আশঙ্কা যেকোনো সময় পরিস্থিতি যুদ্ধের মোড় নিতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্টনি ব্লিঙ্কেন ইতোমধ্যেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছে রাশিয়া ইউক্রেনের ওপর ‘ফলস ফ্লাগ’ অপারেশন চালাতে পারে। এরই মধ্যে ইউক্রেনের অবস্থা জটিল আকার ধারণ করেছে।
ডেইলি মেইলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন শুক্রবার দেয়া এক বিবৃতিতে বলেছেন, পুতিন ইউক্রেনে হামলার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছেন, যেকোনো সময় হামলা শুরু হতে পারে। এই প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্র বলছে যে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালাবে। পরিস্থিতি সম্পর্কে এখন পর্যন্ত যা জানা গেছে-
রাশিয়ার গ্যাস পাইপলাইনে বিস্ফোরণ:
পূর্ব ইউরোপের রাশিয়ার মদদপুষ্ট বিদ্রোহীরা দাবি করেছে, তাদের কার্যালয়ের সামনে গাড়ি বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে ইউক্রেনের সরকারি বাহিনী। সর্বশেষ তারা অভিযোগ করেছে ইউরোপের সঙ্গে সংযোগকৃত রাশিয়ার গ্যাস পাইপলাইন উড়িয়ে দিয়েছে ইউক্রেন।
৭ লাখ ইউক্রেনীয় চলে যাচ্ছে রাশিয়ায়:
গত কয়েক বছরের মধ্যে ৪৮ ঘণ্টায় ইউক্রেনের বাহিনী ও মস্কো মদদপুষ্ট বিদ্রোহীদের সর্বোচ্চ গোলা বিনিময় হয়েছে। সরকারি বাহিনীর হামলার আশঙ্কায় বিদ্রোহীরা তাদের অঞ্চলের রুশ ভাষাভাষী নাগরিকদের ইউক্রেন ত্যাগ করে পূর্ব রাশিয়ায় চলে যেতে বলেছে। বিদ্রোহীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রায় ৭ লাখ মানুষকে সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা আছে তাদের। যদিও ইউক্রেন দাবি করেছে, এরা রাশিয়ার নাগরিক, এ ছাড়া তাদের বিদ্রোহী অধ্যুষিত অঞ্চলে হামলার কোনো পরিকল্পনা নেই।
ইউক্রেন থেকে আশা রুশভাষীদের আশ্রয়ের নির্দেশ পুতিনের:
এদিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেন থেকে আসা রুশভাষীদের আশ্রয়, খাদ্য ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসনকে। এমনকি ইউক্রেন থেকে আশ্রয় নিতে আসা প্রত্যেক ব্যক্তিকে ১০ হাজার রুবল দিতে বলা হয়েছে।
ফলস ফ্লাগের আশঙ্কা পশ্চিমাদের, সীমান্তে রাশিয়ার ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র:
যদিও যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব ধারণা করছে, রাশিয়া হামলার ইস্যু তৈরির চেষ্টা করছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, রাশিয়া সীমান্তে ১ লাখ ৫০ হাজারের বেশি সেনা মোতায়েন করেছে। যদিও গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংখ্যাটি ১ লাখ ৯০ হাজার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এটিই ইউরোপে সবচেয়ে বড় সেনা মোতায়েনের ঘটনা। এদিকে ইউক্রেন সীমান্তের কাছাকাছি ৫০০ কিলোমিটার রেঞ্জের ইস্কান্দার ব্যালাস্টিক মিসাইল নিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া। ধারণা করা হচ্ছে কিয়েভ হামলার জন্য এই মিসাইল নেয়া হচ্ছে।
তবে রাশিয়া এখনও ইউক্রেনে হামলার পরিকল্পনার বিষয়টি অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি পরিস্থিতি উসকে দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো। এদিকে বাইডেন বলছেন, এখনও কূটনীতির মাধ্যমে সমস্যা সমাধান সম্ভব।
রাশিয়া দাবি করে আসছে, পূর্ব ইউরোপ থেকে ন্যাটো সেনা সরাতে হবে এবং ইউক্রেনকে কখনোই ন্যাটোভুক্ত করা যাবে না। সংস্থাটিকে ১৯৯৭ সালের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে হবে।
রাশিয়ার দাবি মেনে নেয়নি পশ্চিমারা:
রাশিয়ার নিরাপত্তাসংক্রান্ত দাবি মেনে নিতে অস্বীকার করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো। ফলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। যদিও উত্তেজনা নিরসনে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট মাখোঁ ও জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস রাশিয়া সফরে গিয়েছিলেন। তবে অবস্থার উন্নতি হয়নি।
এর আগে ২০১৪ সালে ইউক্রেনের ক্রিমিয়া উপত্যকা দখলে নেয় রাশিয়া। শুরু হয় ইউক্রেন সেনাবাহিনীর সঙ্গে মস্কো মদদপুষ্ট বিদ্রোহীদের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। এতে কমপক্ষে ১৪ হাজার মানুষ নিহত হন।