রাজনীতি এমন একটি বিশেষ ব্যবস্থা ও প্রক্রিয়াবিশেষ যার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাবে কোন জাতি ও রাষ্ট্রের যাবতীয় সিদ্ধান্তবলী গৃহিত, অনুমোদিত ও বাস্তবায়িত হয়।
রাজনীতি সমাজ বিচ্ছিন্ন কোন বিষয় নয়। বরং রাজনীতিবিহীন সমাজ অনেক ভয়ংকর। রাজনীতি সমাজেরই অংশ। ’রাজনীতি’ সন্দেহাতীতভাবে যে কোন সমাজের সবচেয়ে বড়ো প্রভাবিত শক্তি। রাজনৈতিক জাগরণের মধ্য দিয়েই সামাজিক শক্তির বিকাশ ঘটে।
রাজনীতি হচ্ছে রাষ্ট্র কোন দর্শন ও নীতি-আদর্শের ভিত্তিতে চলবে এবং কিভাবে এসবের প্রয়োগ ঘটবে তার নির্দেশনামূলক যে কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় তা-ই হলো রাজনীতি। যে কোন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের মূল কাজ হলো- দুষ্টের দমণ ও শিষ্টের পালন।
অনেকে মনে করতে পারেন রাজনৈতিক দল ব্যতিরেকে শুধুমাত্র সরকারী প্রশাসন যন্ত্র দিয়েই তো সব ধরণের সমাধান প্রক্রিয়া চালানো যায়। আসলেই কি যায়? আসলে বিষয়টা অতোটা সহজ ও সরল নয়। প্রশাসনের লোকজন থাকে জনমানুষ থেকে অনেক দূরে। পক্ষান্তরে রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের কাছাকাছি থাকে বলে রাজনীতিবিদরা সহজেই জনগণের নাঁড়ির স্পন্দন জানতে ও বুঝতে পারে। এ ক্ষেত্রে আমলাদের চেয়ে রাজনীতিবিদরা শতগুণে অভিজ্ঞ।
রাজনীতিকে বিদায় এবং রাজনৈতিক নেতাদের মাইনাস করার কথা যারা ভাবেন তারা আর যাই হোক দেশ ও জাতির প্রকৃত কল্যাণকামী মানুষ নন। রাজনৈতিক নেতাদের গালাগাল করেই এরা বাহবা কুড়াতে চাই। নিজেদের জ্ঞানী হিসাবে জাহির করতে চাই। সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জনের মাধ্যমে আপন স্বার্থ সিদ্ধি করতে চাই। এরা সংকটে-সংগ্রামে জনতার পাশে থেকে রাজনৈতিক নেতাদের ভূমিকা পালনের ইতিহাস জানেননা, পড়েননা কিংবা ইচ্ছাকৃতভাবে ভূলে থাকেন। দেশ ও জনগণের কল্যাণে নিবেদিত রাজনীতিবিদদের ত্যাগ-তিতিক্ষার কথা, আত্ম বলিদানের কথা যারা ভূলে যায় কিংবা উপেক্ষা করে তারা আর যাই হোক এদেশে যোগ্য, সৎ ও ত্যাগী নেতৃত্ব সৃষ্টি হতে পারে না। তারা বুঝতে চাইনা যে রাজনীতিবিদরা হলেন হ্যামিলনের বংশীবাদকের মতো, যাদের পিছনে থাকে জনতার সারি। জনগণ ক্ষমতার উৎস। আর এই জনশক্তিই যদি আমাদের আসল শক্তি হয় তবে তাদেরকে সংগঠিত করবে কে? কোন জেনারেল, কোন আমলা নাকি রাজনৈতিক নেতৃত্ব? নিশ্চয় এটা একমাত্র রাজনৈতিক নেতৃত্বের পক্ষেই সম্ভব। সুতরাং রাজনীতির বিকল্প রাজনীতিই। এক্ষেত্রে অন্য কোন বিকল্পের কথা ভাবাই পাপ। রাজনৈতিক নেতৃত্ব ছাড়া পরিবর্তনের কোন আকাঙ্ক্ষা কখনো বাস্তবে প্রতিষ্ঠিত করা যায়না। যে কারণে হাজারো ক্ষোভ থাকা সত্বেও দেশ পরিচালনার ভার রাজনীতিবিদদের কাছেই বারবার ফিরে এসেছে। আসলে এটাই স্বাভাবিক, এটাই সত্য।
রাজনীতি খারাপ, রাজনীতিবিদরা খারাপ এমন ঢেকুর তুলে যারা বিরাজনীতিকরণের পক্ষে ইনিয়ে বিনিয়ে যুক্তিদেন তাদের উদ্দেশ্য যে রাজনীতি কে মাইনাস করা তা সরাসরিই বলা যায়। রাজনীতি কে ছোট করতে অনেকে তো বলেই থাকেন আমি রাজনীতি করতে আসি নাই আমাকে নিয়ে রাজনীতি করবেন না। এমন কথায় রাজনীতি ও রাজনীতিবিদদের চরমভাবে অপমানিত করা হয়। কারণ রাজনীতি আমাদের গর্ব। যে রাজনীতি আমাদের একটি দেশ ও একটি সংবিধান দিয়েছে।
সুতরাং রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার বাইরে কোন কিছু করার চেষ্টা করা বোকামি ছাড়া কিছুই নয়। রাজনীতির বিকল্প শুধু রাজনীতিই হতে পারে।
“জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু”
লেখক পরিচিতি, বিএম কবিরুল হক মুক্তি
সংসদ সদস্য, নড়াইল-১।