নড়াইল নিউজ ২৪.কম ডেস্ক:
অবশেষে বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ছেড়ে গেল কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক রাজনৈতিক দল খেলাফত মজলিসও।মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাকের নেতৃত্বাধীন দলটি শুক্রবার দলের সর্বোচ্চ পর্ষদ মজলিসে শুরার বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেয় দলটি।
এর আগে বিএনপির জোট ছেড়ে দেয় চারটি দল। পঞ্চম দল হিসেবে খেলাফত মজলিস জোট ত্যাগ করল।
এতে ২০ দলীয় জোটের কোনো কর্মসূচি না থাকার পাশাপাশি ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপির নতুন জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনকে কেন্দ্র করে বিরোধের কথা উল্লেখ করে এই সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা জানায় দলটি।
শুরার বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে দলের চেয়ারম্যানের লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব জাহাঙ্গীর হোসেন।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘রাজনৈতিক জোট ইস্যুকেন্দ্রিক গঠিত হয়। জোট কোন স্থায়ী বিষয় নয়। খেলাফত মজলিস ২০ দলীয় জোটে দীর্ঘ ২২ (বাইশ) বছর যাবত আছে। ২০১৯ সাল থেকে ২০ দলীয় জোটের দৃশ্যমান রাজনৈতিক তৎপরতা ও কর্মসূচি নেই। ২০১৮ সালে জাতীয় ঐকফ্রন্ট গঠনের মধ্য দিয়ে ২০ দলীয় জোটকে কার্যত রাজনৈতিকভাবে অকার্যকরও করা হয়।
‘এমতাবস্থায় আদর্শিক, সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায়, ২০১৯ সালের মঞ্জলিসে শুরায় গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী খেলাফত মজলিস আজকের মজলিসে শূরার অধিবেশনে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে, খেলাফত মজলিস একটি আদর্শিক রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে স্বকীয়-স্বাতন্ত্র বৈশিষ্ট্য নিয়ে ময়দানে ভূমিকা রাখবে এবং এখন থেকে ২০ দলীয় জোটসহ সকল রাজনৈতিক জোটের সাথে সম্পর্ক ত্যাগ করছে।‘
এর আগে বেলা দুইটায় দলটির কেন্দ্রীয় এবং জেলা পর্যায়ের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে দুই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করে খেলাফত মজলিস। বৈঠকে প্রায় দুই শতাধিক সদস্য অংশ নেন। বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলন হয়।
মজলিস যে জোট ছেড়ে দিচ্ছে, সেটি আগেই প্রকাশ পেয়েছিল।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০১৯ সালের ২৫ জানুয়ারি দলের মজলিসে শূরার অধিবেশনে ২০ দলীয় জোটের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ না করে রাজনৈতিক পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করার সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী দুই বছরের বেশি সময় ধরে রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে আসছে দলটি। এর আলোকেই এই সিদ্ধান্ত হয়।
এর আগে বিএনপির জোট ছেড়ে দেয় চারটি দল। ২০১৬ সালের ৭ জুন ২০ দলীয় জোট ছেড়ে যায় মুফতি ফজলুল হক আমিনীর প্রতিষ্ঠিত ইসলামী ঐক্যজোট। ২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর ২০ দলীয় জোট ছেড়ে যায় লেবার পার্টি। ২০১৯ সালের ৬ মে ২০ দল ছাড়ে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি- বিজেপির আন্দালিব রহমান পার্থ। সবশেষ গত ১৪ জুলাই জোট ছেড়ে যায় জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম। জোটের আরেক শরিক কল্যাণ পার্টিও ২০ দল ছেড়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে বিএনপিকে।
গত ১০ সেপ্টেম্বর দলটির প্রধান সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহিম এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘প্রধান শরিক বিএনপি যদি জোটকে সক্রিয় করতে চায়, যদি অতীতের ভুলগুলো আত্মসমালোচনা করে পরিবেশ ভিন্ন করতে পারে, তাহলে আমরা একসঙ্গে পথ চলব। না হলে যদি প্রয়োজন পরে আমরা নিশ্চিতভাবে গণতন্ত্রের স্বার্থে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি পুনর্বহালের আন্দোলনে আলাদা ভূমিকা রাখব।’
ইবরাহিম ছাড়াও এলডিপির সভাপতি অলি আহমদের এলডিপিও জোটে থাকতে চায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা আছে প্রায় দুই বছর ধরেই।
২০১৯ সালের জুনের শেষে অলি আহমদের নেতৃত্বে ২০ দলের কয়েকটি শরিক দল মিলে গঠন করা হয় ‘জাতীয় মুক্তি মঞ্চ’ নামে একটি মোর্চা। এতে কল্যাণ পার্টি ছাড়াও ২০ দলের আরেক দল জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি- জাগপাও ছিল।
এই মঞ্চ গঠন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে এসব দলের নেতাদের দূরত্বের সংবাদ আসে গণমাধ্যমে। তবে পরে বিষয়টি আর খুব একটা আগায়নি।
বিএনপির শরিকরা জোট ছেড়ে গেলেও তাতে জোটে দলের সংখ্যায় কোনো হেরফের হয়নি। কারণ, যখনই কোনো দল জোট ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছে, তখনই দলের অন্য একজন নেতার নেতৃত্বে একাংশ একই নামে আলাদা দলের ঘোষণা দিয়ে ২০ দলে থেকে গেছেন।
অবশ্য বিএনপি এখন তার ২০ দলীয় জোট নিয়ে আগাতে চাইছে না বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর এসেছে। স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতে ইসলামীকে ছেঁটে ফেলতে দলের ভেতরে দাবি জোরালো হয়েছে।
সম্প্রতি দলের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে আলোচনায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগের বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন বলে জানাচ্ছেন নেতারা। এখন চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মতের অপেক্ষায় আছে বিএনপি।
২০ দলে জামায়াত ছাড়া বলার মতো শক্তি নেই অন্য কোনো দলের। ফলে জামায়াত ত্যাগ করলে বিএনপির বাকিদের বিষয়ে আগ্রহ থাকার কথা নয়।
২০ দলের পাশাপাশি গত নির্বাচনের আগে গড়ে তোলা নতুন জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে নিয়েও বিএনপি আর আগাতে চাইছে না। এর বদলে তারা এককভাবে আগাতে চায়। আর আন্দোলনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন দলের সঙ্গে যুগপৎ কর্মসূচি দেয়া যায় কি না, তা নিয়ে ভাবছেন নেতারা।