নড়াইল নিউজ ২৪.কম ডেস্ক:
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন,সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং অসত্যের ওপর বিএনপির রাজনীতি দাঁড়িয়ে আছে। বিএনপিকে অসত্য এবং মিথ্যাচারের রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসার আহবান জানান। তিনি বলেন, মিথ্যা আর অসত্যের ওপর রাজনীতি করে বেশিদিন ঠিকে থাকা যায়না, এটিই হচ্ছে ইতিহাসের শিক্ষা। তাহলে হয়তো বিএনপির আজকের যে অবস্থা সেটা থেকে তারা মুক্তি পেতে পারে।
মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ শুক্রবার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে পনের ও একুশে আগস্টে নিহতদের স্মরণে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। চট্টগ্রাম উত্তরজেলা ছাত্রলীগ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
ড. হাছান বলেন, ‘গতকাল (বৃহস্পতিবার) প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা একটি সত্য কথা বলেছেন, চন্দ্রিমা উদ্যানে আসলে জিয়াউর রহমানের কোন লাশ নাই। সেটি যখন প্রধানমন্ত্রী বললেন, তখন বিএনপির মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একটা বক্তব্য দিয়েছেন। অবশ্য সেটা না দিলে তার মহাসচিব পদ থাকে কিনা সেটাও একটা ব্যাপার।’
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বলেন, ‘আমিতো চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার মানুষ, রাঙ্গুনিয়ার পোমরা ইউনিয়নে নাকি জিয়াউর রহমানকে প্রথম কবর দেয়া হয়েছিল। সেখানেও জিয়াউর রহমানকে কবর দিতে কেউ দেখেনি, একটা বাক্স দেখেছিল। সেদিনকার প্রত্যক্ষদর্শী বর্তমানে সেই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কুতুব উদ্দিন, তিনিও আমাকে জানিয়েছেন আমরা জিয়াকে দেখি নাই। সেসময়ের আরো অনেকেই জীবিত আছে, তথাকথিত প্রথম কবরেও আসলে জিয়াউর রহমানের লাশটা কেউ দেখে নাই। এমনকি খালেদা জিয়া, তারেক জিয়া, বিচারপতি সাত্তারও দেখে নাই। জি¦ন কিংবা ভুতে দেখেছে কিনা আমি জানিনা।’
হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপির নেতারা ক্রমাগতভাবে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকাকে অস্বীকার করে আসছেন। তারা একজন খলনায়ককে নায়ক বানানোর অপচেষ্টা চালান। ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে জিয়াউর রহমানের তথাকথিত কবরে যান তারা, কোন সময় কারো বিয়ে ও কর্ণছেদন অনুষ্ঠান উপলক্ষেও তারা জিয়াউর রহমানের কবরে যান সেটাই এখন চিন্তার বিষয়। সেখানে গিয়ে আবার তারা মারামারি করেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে খাটো করার অনেক অপচেষ্টা হয়েছে, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার মাধ্যমে ইতিহাসের পাতা থেকে তাঁকে নির্বাসিত করার চেষ্টা হয়েছিল। রেডিও টেলিভিশন রাষ্ট্রীয় প্রচার যন্ত্র থেকে বঙ্গবন্ধুকে বাদ দেয়া হয়েছিল। স্বাধীনতার খলনায়ক পাকিস্তানিদের দোসর জিয়াউর রহমানকে নায়ক বানানোর চেষ্টা করা হয়েছে। অথচ জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের সাথে ওতোপ্রোতভাবে যুক্ত ছিল।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখা যায় অনেক বাঙালি নেতা স্বাধীনতার জন্য চেষ্টা করেছেন। ১৮৩০ সালে তিতুমীর বাঁশের কেল্লা তৈরী করে বৃটিশের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে বাঙালির জন্য স্বাধীনতার চেষ্টা চালিয়েছিলেন। এর এক’শ বছর পর ১৯৩০ সালে মাষ্টারদা সূর্যসেন চট্টগ্রামে বৃটিশের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে অস্ত্রাগার লুণ্ঠন করে চট্টগ্রামকে ১১দিন স্বাধীন রেখেছিলেন। ১৯৪৪ সালে নেতাজি সুভাস বসু মায়ানমারে ইন্ডিয়ান লিবারেশন আর্মির সামনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেছিলেন, তোরা রক্ত দে, আমি স্বাধীনতা দিব। বাঙালি রক্তও দেয়নি স্বাধীনতাও আসেনি। বঙ্গবন্ধু ঘুমন্ত বাঙালি জাতিকে ধীরে ধীরে স্বাধীনতার মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত করেছিলেন। ত্রিশ লক্ষ মানুষ রক্ত দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে এনেছে বঙ্গবন্ধুর আহবানে।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চ এমনভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা করেছিলেন পাকিস্তানিরা তাঁকে বিদ্রোহী বলে আখ্যায়িত ও অভিযোগ গঠন করতে পারেনি। তখন পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ঢাকা থেকে রাওয়ালপিন্ডি হেডকোয়ার্টারে রিপোর্ট দিয়েছিল চতুর শেখ মুজিব কার্যত পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা ঘোষণা করে দিয়েছে। কিন্তু আমাদের দেখে দেখে তাকিয়ে থাকা ছাড়া কোন কিছুই করার ছিল না।’
ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের রাজনীতির পাশাপাশি লেখাপড়া সঠিকভাবে চালিয়ে যাবার আহ্বান জানিয়ে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা লেখাপড়াকে গুরুত্ব দেন। রাজনীতি হচ্ছে একটি ব্রত, দেশ এবং সমাজ পরিবর্তনের জন্য, সেটি মাথায় রাখতে হবে। যেকোন ত্যাগ স্বীকারে শিক্ষার্থীরা সবসময় প্রস্তুত থাকবে তবে রাজনীতি করতে গিয়ে যাতে পড়াশোনার ক্ষতি না হয়।
উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তানভীর হোসেন চৌধুরী তপুর সভাপতিত্বে ও সাধারন সম্পাদক মুহাম্মদ রেজাউল করিমের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন উত্তরজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ সালাম, সাধারণ সম্পাদক শেখ মো. আতাউর রহমান, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ নেতা স্বজন কুমার তালুকদার, দেবাশীষ পালিত, জসিম উদ্দিন শাহ, শাহজাহান সিকদার, নজরুল ইসলাম তালুকদার, ইদ্রিছ আজগর, গিয়াস উদ্দিন, ইফতেখার হোসেন বাবুল, আকতার হোসেন খাঁন, শফিকুল ইসলাম প্রমুখ।