নড়াইল নিউজ ২৪.কম ডেস্ক:
জাতিসংঘের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশনস নেটওয়ার্ক (এসডিএসএন) দারিদ্র্য দূরীকরণ, পৃথিবীর সুরক্ষা এবং সবার জন্য শান্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ গ্রহণের সার্বজনীন আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশের সঠিক পথে অগ্রসরের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘এসডিজি অগ্রগতি পুরস্কার’ দেয় গত ২১ সেপ্টেম্বর।
এর আগে জাতিসংঘ ঘোষিত মিলেনিয়াম গোল (এমডিজি) অর্জনে শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশ অনেকগুলো পুরস্কার বা স্বীকৃতি পেয়েছে।
গবেষক ও বিশেষজ্ঞরা প্রধানমন্ত্রীর এই অর্জনকে দেখছেন ভিন্ন আঙ্গিকে। তারা বলছেন, এই অর্জন পুরো বাংলাদেশের রূপান্তরের রূপকার হিসেবে শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে প্রধানমন্ত্রী মানবসম্পদকে গুরুত্ব দিয়েই মূলত বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মনে করেন, মানুষের সামগ্রিক দক্ষতা উন্নয়নের উপর সরকারের সফলতা নির্ভর করছে। সামগ্রিকভাবে মানবসম্পদ বিকশিত না হলে কোনো উন্নয়ন প্রক্রিয়া স্থায়িত্ব পায় না।’
তিনি বলেন, ‘মানবসম্পদ উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর বিজ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের যে ধারণা, তা মূলত দেশের প্রতিটি পরিবারের বুনিয়াদি উন্নয়নের সঙ্গে জড়িত। এই বিষয়গুলো গত একযুগ ধরে পুরো বাংলাদেশকেই পাল্টে দিয়েছে। মানব উন্নয়ন খাতে দেয়া গুরুত্ব পাল্টে দিয়েছে উন্নয়নের অন্যান্য সূচকও। এরই সূফল পেতে শুরু করেছে বাংলাদেশ।’
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক মনে করেন, বাংলাদেশের মতো কৃষিপ্রধান দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে কৃষির গুরুত্ব যে অপরিসীম, তা প্রধানমন্ত্রী বুঝতে পেরেছিলেন। যে কারণে শুরুতেই তিনি কৃষিতে অসামান্য সমর্থন দিয়ে গেছেন। ফলে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। এতে ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জিডিপিতে কৃষিখাতের অবদান শতকরা হারের হিসেবে আগের তুলনায় কমলেও, এর গুরুত্ব কমেনি। সকলের জন্য খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং দারিদ্র্য বিমোচনে আজও কৃষি হলো মূল চালিকাশক্তি। পাশাপাশি দেশে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে কৃষিখাত সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে।
‘করোনার মধ্যেও বাংলাদেশের কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হয়নি। করোনা পরিস্থিতির মাঝেও বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় ভাল অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশ সমৃদ্ধশালী উন্নত দেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এটি সম্ভব হয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্ব, সাহস, দৃঢ়তা, প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতায়। এ কারণেই তিনি বারবার এ ধরনের পুরস্কার পাচ্ছেন।’
লক্ষ্য অর্জনে দৃঢ় অঙ্গীকার:
অর্থনীতিবিদ কাজী খলীকুজ্জমান আহমেদ বলেন, ‘শেখ হাসিনা নিজেই বিভিন্ন সময় দাবি করেন, সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের ক্ষেত্রেও এ দেশ অগ্রণী ভূমিকা পালনে অঙ্গীকারবদ্ধ।
‘আমরা অতি-দারিদ্র্যের হার অর্ধেকে নামিয়ে এনেছি। শহর এবং গ্রামীণ উভয় অঞ্চলেই শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, পানি সরবরাহ এবং পয়ঃসেবার মতো মৌলিক বিষয়ে অধিকতর সুবিধা নিশ্চিত করেছি। বিশ্বমন্দা সত্ত্বেও গত সাত বছর ধরে আমাদের জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশের ওপর ছিল। গত এক দশকে রপ্তানি আয় তিন গুণের বেশি বেড়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে প্রায় ৮ গুণের কাছাকাছি।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাংকের মান অনুযায়ী গত বছর বাংলাদেশ নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। আমরা এখন ২০৩০ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা জাতিসংঘের উচ্চাভিলাসী ২০৩০ এজেন্ডা গ্রহণ করেছি। বাংলাদেশে এমডিজি বাস্তবায়নের প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এবং এমডিজির সাফল্যের ওপর ভর করে এসডিজি বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তুত হচ্ছি। এ জন্য দ্বিপক্ষীয় এবং বহুপক্ষীয় বৈশ্বিক অংশীদারিত্বের প্রয়োজন।
‘আমি মনে করি, ২০৩০ এজেন্ডা হচ্ছে একটি সম্মিলিত পথপরিক্রমা। এর বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের সরকারি এবং বেসরকারি, দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক – সব উৎস থেকে অধিক পরিমাণে সম্পদের সরবরাহ প্রয়োজন। সুতরাং, শুরু থেকেই বৈদেশিক উন্নয়ন সহায়তা বা ওডিএর লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা হবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এসডিজির ১৭টি উদ্দেশ্য এবং ১৬৯টি লক্ষ্য পূরণই হবে আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য পূর্বশর্ত।’
তিনি বলেন, ‘সরকার প্রথমে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম-আয়ের জ্ঞানভিত্তিক ডিজিটাল অর্থনীতির দেশে পরিণত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করে। এ লক্ষ্য অর্জনের পর প্রধানমন্ত্রীর লক্ষ্য হচ্ছে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করা।’
তামাক ব্যবহারে অনীহা:
এসডিজি লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশকে এক সময় তামাকমুক্ত করার ঘোষণা দিয়ে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি কেড়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্য মতে, দেশে তামাকসেবীদের মধ্যে অসুস্থ হওয়াদের মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হওয়ার হার বেশি। দেশকে রোগমুক্ত করতে তামাকের ব্যবহার শূন্যে নামানোর ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশ বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, মালদ্বীপ, নেপাল, পাকিস্তান, মিয়ানমার এবং শ্রীলংকায় তামাক গ্রহণকারীর মোট সংখ্যা প্রায় ৩৮৩ মিলিয়ন। এটা বিশ্বের মোট ১.১ বিলিয়ন তামাক গ্রহণকারীর সংখ্যার প্রায় ৩৪.৮% অর্থাৎ প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। এসব দেশে তামাকজনিত আর্থিক এবং স্বাস্থ্যগত ক্ষতির পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। শুধু ভারত এবং বাংলাদেশে তামাক গ্রহণজনিত কারণে প্রতি বছর কমপক্ষে ১.১ মিলিয়ন (১১ লাখ) মানুষ মারা যায়।
মন্ত্রণালয় জানায়, ২০১৩ সালের তামাক জাতীয় পণ্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন এবং ২০১৫ সালের বিধি অনুসরণ করে আগামী মার্চ থেকে তামাকজাত পণ্যের মোড়কে ছবি সংবলিত সতর্কবার্তা সংযোজন করা হচ্ছে। তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মকাণ্ড সমন্বিতভাবে পরিচালনার জন্য সরকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল গঠন করেছে।
২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে তামাকের ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করতে চায়।
সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স:
সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক স্বতন্ত্র চরিত্র দাঁড় করিয়েছে বলে মনে করেন অ্যাম্বাসেডর ওয়ালিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘কোনো দেশের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাতে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে দেয়া হবে না – প্রধানমন্ত্রীর এই হুঙ্কার এ অঞ্চলের ভূরাজনীতির চিত্র পরিবর্তন করে দিয়েছে।
‘শেখ হাসিনার দর্শন হলো বর্তমান বিশ্ব একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। এ জন্য প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার কোনো বিকল্প নেই।’
অন্যদিকে মানবিক বিবেচনায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েও দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন শেখ হাসিনা। ২০১৭ সালে যুক্তরাজ্যের টেলিভিশন ‘চ্যানেল ফোর’ এ জন্য তাকে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ নামে আখ্যায়িত করে।
কেবল নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানো নয়, ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিচুক্তি করে ইতিহাস রচনা করেন তিনি। এর জন্য ১৯৯৮ সালে ইউনেসকো তাকে ‘হুপে-বোয়ানি’ শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করে।
আবার ভারতের সঙ্গে ছিটমহল বিনিময় চুক্তি বাস্তবায়ন করে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। ২০১০ সালে টাইম সাময়িকীর অনলাইন জরিপে তিনি বিশ্বের সেরা ১০ ক্ষমতাধর নারীর মধ্যে ষষ্ঠ স্থানের অধিকারী ছিলেন।
২০১৫ সালে বিশ্বের ক্ষমতাধর নারীদের তালিকায় শেখ হাসিনার অবস্থান ৫৯তম। ১৯৯৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তিনি ৩০টির বেশি পুরস্কার ও পদক অর্জন করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন ইউনিভার্সিটি, ব্রিজপোর্ট বিশ্ববিদ্যালয় এবং ব্যারি বিশ্ববিদ্যালয়, জাপানের ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয়, স্কটল্যান্ডের অ্যাবারটে বিশ্ববিদ্যালয়, ভারতের বিশ্বভারতী এবং ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়, অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ব্রাসেলসের বিশ্ববিখ্যাত ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয়, রাশিয়ার পিপলস ফ্রেন্ডশিপ বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্টেট ইউনিভার্সিটি অব পিটার্সবার্গ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে।
শান্তি প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদান এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখার জন্য সর্বভারতীয় শান্তিসংঘ শেখ হাসিনাকে ১৯৯৮ সালে ‘মাদার তেরেসা’ পদক প্রদান করে। ২০০৯ সালে ভারতের ইন্দিরা গান্ধী মেমোরিয়াল ট্রাস্ট শান্তি ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় অসামান্য ভূমিকা পালনের জন্য শেখ হাসিনাকে ইন্দিরা গান্ধী পুরস্কারে ভূষিত করে। এ ছাড়া ২০১৪ সালে ইউনেসকো কর্তৃক তিনি ‘শান্তির বৃক্ষ’ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। জাতিসংঘ পরিবেশ উন্নয়ন কর্মসূচি দেশে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিবেশ এবং টেকসই উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখার জন্য লিডারশিপ ক্যাটাগরিতে শেখ হাসিনাকে তাদের সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ-২০১৫’ পুরস্কারে ভূষিত করেছে।
রূপান্তরের কারিগর:
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল কারিগর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর সে জন্যই জাতিসংঘের নানা সংগঠন থেকে পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার। তার সরকারের গত ১২ বছরের উন্নয়ন চিত্রে রয়েছে নানান বৈচিত্র্য এবং নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণের সাফল্য।
‘শিক্ষা খাতে জোট সরকারের আমলের চেয়ে ১৩ গুণ বেশি বাজেট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণ, সৌরবিদ্যুৎ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতায়নে নারীরা এগিয়ে গেছে। অন্যদিকে জাতীয় বাজেটের আকার ও জিডিপি বৃদ্ধি পেয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘রিকশাচালক, দিনমজুর, পোশাক শ্রমিকের ন্যূনতম মাসিক বেতন বেড়েছে, সামরিক-বেসামরিক বেতন-ভাতা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা, মাথাপিছু আয়, রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থনৈতিক সূচকে যেমন উন্নতি হয়েছে, তেমনি সমুদ্র বিজয় ও ব্লু-ইকোনমি এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
‘এ ছাড়া রয়েছে ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরিতে এবং স্যাটেলাইট যুগে বাংলাদেশের প্রবেশের সাফল্য। আরও রয়েছে দারিদ্র্য বিমোচন এবং সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী মজবুত করতে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ। মূলত স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি খাত, যোগাযোগব্যবস্থা, আলেম-ওলামাদের কর্মসংস্থান ও মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়ন, শিল্প খাতে উন্নয়ন, সন্ত্রাস দমন ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং পরিবেশ রক্ষায় সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে উন্নয়নশীল দেশের এসডিজির সূচকগুলো অর্জন ত্বরান্বিত হয়েছে।’
এসডিজিতে বাংলাদেশ:
জাতিসংঘ ২০১৫ সালে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) গ্রহণ করে। এটি ১৫ বছর মেয়াদি। এর উদ্দেশ্য ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বে শান্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করা। সেই লক্ষ্যে ১৭টি অভীষ্ট নির্ধারণ করা হয়। আর ১৬৯টি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।
জাতিসংঘ এর আগে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) গ্রহণ করেছিল। এরপরই এসডিজি আসে। এসডিজির লক্ষ্যগুলোর মধ্যে দারিদ্র্য দূর করা, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, সুস্বাস্থ্য, উন্নত শিক্ষা নিশ্চিত ও লিঙ্গবৈষম্য প্রতিরোধ অন্যতম।
এসডিজির এবারের সূচকে বাংলাদেশের সার্বিক স্কোর ৬৩ দশমিক ৫ শতাংশ। গত বছর এ স্কোর ছিল ৬৩ দশমিক ২৬ শতাংশ। ২০১৫ সালে যখন এসডিজি গৃহীত হয়, তখন বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৫৯ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। বিশ্বের ১৬৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৯। বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে।
এবারের তালিকায় সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে ফিনল্যান্ড। দেশটির স্কোর ৮৫ দশমিক ৯ শতাংশ। এর পরের চার দেশ হলো সুইডেন (৮৫.৬ শতাংশ), ডেনমার্ক (৮৪.৯ শতাংশ), জার্মানি (৮২.৫ শতাংশ) ও বেলজিয়াম (৮২.২ শতাংশ)। আর সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্রের স্কোর ৩৮ দশমিক ২৭ শতাংশ। এর আগে আছে দক্ষিণ সুদান ও চাদ।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে ৭০তম স্থানে আছে ভুটান। এরপর আছে মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা ও নেপাল। এদের অবস্থান যথাক্রমে ৭৯, ৮৭ ও ৯৬তম।
সামাজিক বিভিন্ন অগ্রগতির সূচকে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের নিবিড় সমন্বিত ব্যবস্থাপনা, ক্ষুদ্রঋণের ব্যবহার এবং দারিদ্র্য দূরীকরণে তার ভূমিকা, বৃক্ষরোপণ, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সূচকের ইতিবাচক পরিবর্তন প্রভৃতি ক্ষেত্রে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নোবেল বিজয়ী ভারতীয় অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের করা মন্তব্য এক্ষেত্রে প্রণিধানযোগ্য। তার মতে, কিছু ক্ষেত্রে বিশ্বকে চমকে দেবার মতো সাফল্য আছে বাংলাদেশের। বিশেষত শিক্ষাসুবিধা, নারীর ক্ষমতায়ন, মাতৃ ও শিশু মৃত্যুহার ও জন্মহার কমানো, গরিব মানুষের জন্য শৌচাগার ও স্বাস্থ্য সুবিধা প্রদান এবং শিশুদের টিকাদান কার্যক্রম অন্যতম।
কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলা:
চলতি জাতিসংঘ অধিবেশনে এসডিজি অর্জনে বিশ্বনেতাদের কাছে পাঁচ দফা প্রস্তাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রথম প্রস্তাবে তিনি বলেন, ‘এই বৈশ্বিক মহামারি থেকে টেকসই উত্তরণের ওপরই এসডিজির সাফল্য নির্ভর করছে। এখন বিশ্বের সব জায়গায় ভ্যাকসিন নিশ্চিত করা সময়ের দাবি এবং তা অতি জরুরি।’
দ্বিতীয় প্রস্তাবনায় তিনি বলেন, ‘২০৩০ এজেন্ডা বাস্তবায়নে আমাদের সম্পদের যে বিশাল ব্যবধান রয়েছে, তা অবশ্যই কমাতে হবে।’
তৃতীয় প্রস্তাবনায় শেখ হাসিনা বলেন, ‘চলমান বৈশ্বিক মহামারির অভিঘাতের কারণে ১৯৯৮ সালের পর এই প্রথমবারের মতো বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য বাড়ছে, তার জন্য আমরা উদ্বিগ্ন।’
পরিস্থিতি উত্তরণে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সামাজিক সুরক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন এবং বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনীর ওপর অধিক গুরুত্ব দিতে হবে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।
চতুর্থ প্রস্তাবনায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, কোভিড-১৯ পরিস্থিতি থেকে পুনরুদ্ধারের পদক্ষেপগুলো ভবিষ্যতে যে কোনো ধরনের বিপর্যয় বা দুর্যোগ মোকাবিলায় জোরালো প্রতিরোধ গড়ে তুলবে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণকে পূর্ণতা দেবে।’
পঞ্চম ও সবশেষ প্রস্তাবনায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এসডিজি বাস্তবায়নে অবশ্যই পর্যবেক্ষণ জোরদার করা ও যান্ত্রিক সহায়তার ওপর আরও গুরুত্ব দিতে হবে।’
এ বিষয়ে জাতিসংঘের সমন্বয় বাড়ানো উচিত জানিয়ে জরুরি পরিস্থিতি ও বিপর্যয় মোকাবিলায় যথাযথ ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিশ্চিত করার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন শেখ হাসিনা।
২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জনকে ‘একটি বৈশ্বিক চুক্তি’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘সবার অন্তর্ভুক্তিতে টেকসই বৈশ্বিক উন্নয়নের একটি ব্লুপ্রিন্ট এটি। কোনো দেশ একা এই এজেন্ডা অর্জন করতে পারবে না। এই এজেন্ডা অর্জনে আমাদের বৈশ্বিক সহযোগিতা ও সংহতি বাড়াতে হবে।’
আরও পড়ুন: