বিশেষ প্রতিনিধি, নড়াইল নিউজ ২৪.কম
নড়াইলের লোহাগড়ায় নদী ভাঙনে বিলিন হচ্ছে ঘর-বাড়ি, বিদ্যালয়-ফসলিজমি।চলতি ভাঙ্গনে উপজেলার শালনগর ইউনিয়নের ৮ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রক্ষা নিয়ে তাই চিন্তিত সংশ্লিষ্টরা। ভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা না নেওয়ায় প্রতিবছরই নি:স্ব হচ্ছে এ এলাকার মানুষ। নদী ভাঙনে পাল্টে যাচ্ছে ইউনিয়নের মানচিত্রও। ভাঙনে রোধে প্রতিবছরই অর্থ ব্যায় হলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছেনা বলে ভূক্তভোগিদের অভিযোগ।
জানাগেছে, নড়াইলের লোহাগড়ার মাকড়াইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৯৪৫ সালে স্থাপিত হয়। বিদ্যালয়ে দুটি একতলা ভবন ও একটি টিনশেড ঘর রয়েছে। পূর্ব দিকে একতলা ভবনের একটি কক্ষ নদীর সঙ্গে মিশে আছে। সেখানে নদীর ঢেউ আছড়ে পড়ছে। বিশাল খেলার মাঠ নদীগর্ভে চলে গেছে। ব্রিটিশ আমলে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টি যেকোনো মুহূর্তে মধুমতী নদীতে বিলীনের শঙ্কা রয়েছে।
স্থানীয় কয়েকজন বলেন, এই ইউনিয়নের কাতলাসুর, চরখোড়কদিয়া, চরগোপালপুর ও চাকশি গ্রাম পুরোপুরি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এসব গ্রামের অধিকাংশ মানুষ নদীর অপর পাড় আলফাডাঙ্গায় বসতবাড়ি করেছেন। রামকান্তপুর, শিয়রবর, আজমপুর, নওয়াখোলা, কাশিপুর, মাকড়াইল ও রামচন্দ্রপুর গ্রাম নদীতে বিলীন হচ্ছে। এসব গ্রামের লোকজনের কথা, তাঁরা সাহায্য চান না, ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা চান।
মকড়াইল গ্রামের জব্বর মোল্লার (৭২) বসতবাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে তিনবার। তিনি এখন মাকড়াইল সরকারি আশ্রয়ণ কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি বলেন, ফসলি সব জমি আগেই নদীতে গেছে। সবশেষ আশ্রয় বসতবাড়িটুকুও নদী কেড়ে নিল। এখন আমি পথের ফকির।
মাকড়াইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি ফজলু মৃধা বলেন, বিদ্যালয়ে প্রায় ১৫০ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। বিদ্যালয়টি নদীতে বিলীন হলে এই শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা অনিশ্চিত হয়ে যাবে। ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি। শুধু ওই বিদ্যালয়ই নয়, শালনগর ইউনিয়নে অবস্থিত আরও সাতটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মধুমতীর ভাঙনের মুখে পড়েছে। এগুলো হলো চাকশি, কাশিপুর, শিয়রবর, নওয়াখোলা ও মণ্ডলবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শিয়রবর আজিজ-আশরাফ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও নওয়াখোলা আল হেরা দাখিল মাদ্রাসা।
শালনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান খান তসরুল ইসলাম বলেন, পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙনের তীব্রতা বাড়ছে। এতে ওই বিদ্যালয়গুলো চলতি বর্ষায় নদীতে বিলীনের আশঙ্কা রয়েছে। চলতি বর্ষায় শালনগর ইউনিয়নের ৭টি গ্রামের অন্তত ১০০টি বসতবাড়ি নদীতে চলে গেছে। হুমকির মুখে আছে ১৫০টি বসতবাড়ি। এই ইউনিয়নের চারটি গ্রামের অস্তিত্ব ইতিমধ্যে বিলীন হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড নড়াইলের নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জ্বল কুমার সেন বলেন, ওই ইউনিয়নের শিয়রবর বাজার এলাকায় ভাঙন প্রতিরোধে বালুর বস্তা ও ব্লক ফেলা হয়েছে। সেখানে স্থায়ী ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। মাকড়াইল এলাকায় বালুর বস্তা ফেলা হবে। এসব গ্রামে ভাঙন প্রতিরোধে স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। এ জন্য ধাপে ধাপে প্রকল্প তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হচ্ছে।