নড়াইল নিউজ ২৪.কম ডেস্ক:
‘বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ অভিযোগ করেছেন, ‘বরিশালে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে প্রশাসনের লোকজন, তাতে আমার পদত্যাগ ছাড়া উপায় নেই। আমাকে তারা কাজ করতে দিচ্ছে না। কার ইশারায় এমনটা করছে তারা? আমার কাজে মনোনিবেশ করতে পারছি না উনাদের কারণে। উনারা সব প্যাকড হয়ে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে নেমেছে বলেও তিনি জানান।
বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরে পুলিশের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের পর বুধবার গভীররাতে সাংবাদিকদের কাছে এসব অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘নগর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা আমাদের রেগুলার কাজ। সেই অনুযায়ী আমার করপোরেশনের কর্মীরা রাতে উপজেলার পরিষদ চত্বরে বিভিন্ন ব্যানার অপসারণে যায়। এ সময় ইউএনও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমাদের লোকজনের ওপর গুলি চালায়। এতে আমার প্রশাসনিক কর্মকর্তাও আহত হয়। গুলিবিদ্ধ হয় আরও অনেকে।
‘খবর শোনার পর আমি আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের ঘটনাস্থলে পাঠাই বিষয়টি সম্পর্কে জানার জন্য। তবে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদেরও গালিগালাজ করে ইউএনও। পরবর্তীতে আমি ঘটনাস্থলে গেলে আমার ওপরও গুলি চালানো হয়। আমার শরীরেও গুলি লাগে। এরপরেই আমার লোকজন আমাকে ঘিরে রাখে। আমার মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহামুদ বাবুকেও আটকে রাখে।’
মেয়র বলেন, ‘আসলে আমি কষ্ট পেয়ে লজ্জায় সেখান থেকে বাসায় চলে আসি। প্যানেল মেয়রদের রেখে আসি যাতে সেখানে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়। পরে শুনি পুলিশ গিয়ে আমার নেতা-কর্মীদের এলোপাতাড়ি মারধর করেছে।
‘শত শত লোক আহত হয়েছে। এমন হলে আমি কীভাবে কী করব? আমাকে এমনভাবে কেন টার্গেট করা হচ্ছে? আমাকে কেন কাজ করতে দেয়া হচ্ছে না? এগুলো আমার প্রশ্ন নয়, নগরবাসীর প্রশ্ন।’
মেয়র জানান, ব্যানার সরিয়ে নিতে মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করে তিনি ঘোষণা দিয়েছেন। যেগুলো সরানো হয়নি, সেগুলো অপসারণে রাতে কাজ শুরু করেন কর্মচারীরা। উপজেলা পরিষদ চত্বরে তাদের বাধা দেয়া হয়।
এ ঘটনায় আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানান মেয়র সাদিক।
তিনি বলেন, এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি যে গুলি চালাতে হবে। এটা ষড়যন্ত্র।
প্রশাসনের সহায়তা ছাড়া সিটি করপোরেশনের কাজ চালিয়ে যাওয়ায় বিরাগভাজন হয়েছেন বলে মনে করছেন মেয়র।
যেভাবে সংঘর্ষের শুরু:
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ের সামনে বুধবার রাতে শোক দিবসের ব্যানার খুলতে যান বরিশাল সিটি করপোরেশনের কর্মচারীরা। এ সময় ব্যানার খোলার কারণ জানা নিয়ে ইউএনও মুনিবুর রহমানের সঙ্গে সিটির প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাসের কথাকাটাকাটি হয়।
প্রশাসনিক কর্মকর্তার সঙ্গে থাকা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ওই সময় ইউএনওর সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। পরে সেখানে উপস্থিত আনসার সদস্যদের সঙ্গে হাতাহাতি শুরু হলে উপস্থিত আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ইউএনওর বাসায় হামলার চেষ্টা চালায়। এ সময় আনসার সদস্যরা গুলি ছুড়লে প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাসসহ চারজন আহত হন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, যুবলীগ নেতা শাহরিয়ার বাবু, হারুন অর রশিদ ও তানভীরকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সংঘর্ষের পরে ইউএনও কার্যালয়ের সামনে পুলিশ অবস্থান নিলে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা ফের ইউএনওর বাসভবনে হামলার চেষ্টা করে।
এ সময় পুলিশ ও সরকারদলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। এতে আহত হন বেশ কয়েকজন।
বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাজ্জাদ সেরনিয়াবাত বলেন, ‘ইউএনও মুনিবুর রহমান নিজে বন্দুক নিয়ে গুলি ছুড়েছে। সিটি করপোরেশনের লোকজন ব্যানার খুলতে আসলে এ আচরণ করেন তিনি। এতে করপোরেশনের কর্মকর্তা স্বপনসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়। পরে মেয়র মহোদয় এখানে এসে নিজের পরিচয় দিলেও তার ওপর গুলি ছোড়ে ইউএনও।’
অভিযোগের বিষয়ে ইউএনও মুনিবুর রহমান বলেন, ‘১০ থেকে ১৫টি মোটরসাইকেলে করে জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাজিব আমার কম্পাউন্ডে ঢুকে ব্যানার ছিড়তে থাকে। তাদের বারণ করা হলে তারা আমাকে ঘিরে ধরে। এ সময় আমার সেফটির জন্য আনসার সদস্যরা যেটা প্রয়োজন সেটা করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঘরে আমার বৃদ্ধ বাবা-মা করোনা আক্রান্ত। এর মধ্যে এমন ঘটনায় আমি আতঙ্কিত।’
বরিশালের জেলা প্রশাসক (ডিসি) জসীম উদ্দিন হায়দার বলেন, ‘ব্যানার অপসারণ করতে হলে সেটা আমাদের আগে জানাতে পারত। এখন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এনামুল হক বলেন, ‘কিছু স্থানীয় লোকজন সদর উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে রাতে ব্যানার খুলতে আসে। ইউএনও সাহেব তাদের সকালে আসতে বলেন। কিন্তু তা না করে ইউএনও সাহেবের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়ে তারা।
‘পরে তার বাসায় হামলার চেষ্টা করলে আনসার সদস্যরা গুলি ছোড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে গেলে তাদের সঙ্গে একটু ঝামেলা হয়েছে। কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘মেয়র আহত হওয়ার কোনো খবর আমাদের কাছে নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’
এ ঘটনার পর রাত ১১টা থেকে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। সিটি করপোরেশনের গাড়িতে করে ময়লা-আবর্জনা সড়কে ফেলে রাখা হয়েছে।