নড়াইল নিউজ ২৪.কম বিনোদন ডেস্ক:
বহুল আলোিচিত চিত্রনায়িকা পরীমনির যে মারধর ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনেছিলেন, তার সত্যতা পেয়েছে পুলিশ। তাকে শ্লীলতাহানি করা হয় বলেও উল্লেখ আছে প্রতিবেদনে। সাভার থানার বিরুলিয়ায় ঢাকা বোটক্লাবে এ ঘটনা ঘটে। মামলার প্রধান আসামি নাসির উদ্দিন মাহমুদসহ তিনজনের বিরুদ্ধে জমা দেয়া অভিযোগপত্রে তদন্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ওই রাতে আলোচিত এই নায়িকা লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন। তাকে চক্রান্ত করে সেখানে নিয়ে যাওয়ার কথাও উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।
এতে ছয় আসামির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে অপরাধ প্রতীয়মান হয় বলে’ উল্লেখ করা হয়।
সোমবার বিকেলে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সাভার মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কামাল হোসেন এই অভিযোগপত্র দেন। সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) কাজী মাইনুল ইসলাম সোমবার রাতে এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
গত ১৩ জুন পরীমনি তার ফেসবুক পেজে হত্যা ও ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ এনে তোলপাড় ফেলে দেন। ওই রাতেই তিনি আসেন গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে। জানান, ঘটনাটি ঘটে ৮ জুন রাতে।
বাংলা চলচ্চিত্রের মিষ্টিমুখ জানান, ওই রাতে তিনি ক্লাবে যাওয়ার পর তাকে ও তার সঙ্গীদেরকে গালাগাল করা হয়েছে, তাকে মদ পানে বাধ্য করা হয়েছে, হত্যা করে মরদেহ পানিতে ভাসিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়েছে।
পরী অভিযোগটি আনেন প্রধানত বোট ক্লাবের সাবেক সভাপতি নাসির উদ্দিন মাহমুদের বিরুদ্ধে। পরদিন তিনি সাভার থাকায় গিয়ে নাসিরসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তিনি যার সঙ্গে ক্লাবে গিয়েছিলেন, সেই তুহিন সিদ্দিকী অমিকেও আসামি করা হয়।
পরীমনি মামলা করার পর পর উত্তরার একটি বাসা থেকে গ্রেপ্তার হন নাসির উদ্দিন ও অমি। ফাইল ছবি
মামলার পর পরই গ্রেপ্তার হন নাসির ও অমি। উত্তরার একটি বাসা থেকে গ্রেপ্তারের আগ মুহূর্তে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে পরীমনি ও তার সঙ্গীদের বিরুদ্ধে আনেন পাল্টা অভিযোগ। দাবি করেন, পরীমনি তাদের ক্লাবে গিয়ে জোর করে দামি মদ খেতে চেয়েছিলেন। তারা বাধা দিলে উল্টো তাদের ওপর হামলা করা হয়।
গ্রেপ্তারের ১৬ দিন পর গত ৩০ জুন নাসির ও অমি জামিনে মুক্তি পান। তবে তাদের বিরুদ্ধে পরীমনির মামলা অবৈধ মদ রাখার অভিযোগেও মামলা করা হয়।
সাভার থানার পক্ষ থেকে জমা দেয়া অভিযোগপত্রে বলা হয়, নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও মামলায় তদন্তে আসা ৩ নম্বর আসামি শাহ শহিদুল আলম পরীমনিকে গালাগাল করে অশালীন আচরণ করেন। এরপর তাকে মারধর করে নানা হুমকি দিয়ে ‘শ্লীলতাহানি করা হয়’।
বলা হয়, মামলার দ্বিতীয় আসামি তুহিন সিদ্দিকী অমি, পরীমনিকে কৌশলে বোটক্লাবে নিয়ে যান। নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও শাহ শহিদুল আলম অশালীন কথা বলার পর পরীমনির শরীর স্পর্শ করেন। এতে পরী ক্ষিপ্ত হলে তাকে মারধর করা হয়।
সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মাইনুল ইসলাম বলেন, ‘পরীমনিকে ধর্ষণচেষ্টা মামলায় তিনজনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।’
অভিযোগপত্রের বিষয়ে পরীমনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি এখন কথা বলব না।’
বোটক্লাবে সেই রাতে কী কী হয়েছিল, তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয় নানা ধরনের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণে। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, পরীমনিকে সেই রাতে পাঁজাকোলা করে এনে গাড়িতে তোলা হয়েছে।
পরী সেখান থেকে বের হয়ে রাজধানীর বনানী থানায় মামলা করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ মামলা নেয়নি। এরপর তিনি ঘটনাস্থল যে থানা, সেই সাভারে মামলা করেন।
এই ঘটনাটি তোলপাড় তোলার পর পরীমনির দাবির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে অন্য দুটি ঘটনায়। গুলশানের আরও দুটি ক্লাবে পরীমনির বিরুদ্ধে ভাঙচুরের অভিযোগ এনেছে কর্তৃপক্ষ। একটি ক্লাবে পরীমনির যাওয়ার ফুটেজও প্রকাশ পেয়েছে।
গত ৪ আগস্ট পরীমনিকে তার বাসায় অভিযান চালিয়ে র্যাব গ্রেপ্তার করে। সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ মদ, এলএসডি উদ্ধারের কথাও জানানো হয়।
পরদিন মাদকের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে পরীকে আদালতে তোলা হয়। এই মামলায় তাকে মোট তিন দফা রিমান্ডে নেয়া হয়।
ফাইল ছবি
২৭ দিন পর গত ১ সেপ্টেম্বর পরীমনি জামিনে মুক্তি পেয়ে বাসায় ফেরেন। তবে তাকে রিমান্ডে নেয়ার বৈধতা নিয়ে বিতর্ক চলছে।
যে বিচারক এই আদেশ দিয়েছিলেন, তার কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে উচ্চ আদালত। আবার তার মামলার তত্ত্বাবধায়ক সিআইডি কর্মকর্তাকে পাঠানো হয়েছে বাধ্যতামূলক অবসরে। এই আদেশের সঙ্গে পরীমনির মামলার সম্পর্ক আছে কি না, এই বিষয়টি অবশ্য নিশ্চিত হওয়া যায়নি।