স্টাফ রিপোর্টার:
পরকীয়ার কারনে নিজ স্ত্রী কে নির্যাতন করে শিশু সন্তানদের ফেলে পরের স্ত্রীকে নিয়ে মনের সুখে ঘুরে বেড়াচ্ছেন নড়াইলের এক পুলিশ কনস্টেবল। যশোরের শার্শা থানায় কর্মরত অবস্থায় পরকীয়া প্রেমিকার সাথে আন্তরিক ছবি প্রদর্শনের পর যশোর ফাঁড়িতে ক্লোজড করা হলেও থামেনি বর্বরতা। একদিকে শার্শা থানায় পুলিশ কনস্টেবলের হাত থেকে নিজ স্ত্রী কে ফেরত পাবার জন্য আবেদন হতভাগ্য স্বামীর,অন্যদিকে শিশু সন্তানসহ নিজের নিরাপত্তার জন্য নড়াইলের পুলিশ সুপারের কাছে আরজী জানিয়েছেন হতভাগ্য স্ত্রী মিশরী খানম, আদালতে মামলা ও করেছেন তিনি।
স্বামী এবং দেবর কর্তৃক নিজ এবং পরিবারের জীবনের ঝুকি থাকায় ২ জুন নড়াইল সদর থানায় ডায়েরী করেছেন মিশরী।
জানা গেছে,২০০৮ সালে নড়াইল সদরের নারায়নপুর গ্রামের পুলিশ কনস্টেবল মহিদুল আলমের সাথে বিয়ে হয় রতডাঙ্গা গ্রামের মিশরী খানমের। এই পরিবারে ১১ বছরের একটি কন্যা এবং ৬ বছরের শিশু পুত্র রয়েছে। বিয়ের পরে ভালই চলছিলো সংসার। খুলনায় ৫ বছর একসাথে বাড়িভাড়া করেও থেকেছেন এই দম্পতি। দৃশ্যপট পাল্টে যায় যশোরের শার্শার থানায় থাকাকালীন। এখানে বাগআচড়া ফাঁড়িতে থাকাকালীন কনস্টেবল মহিদুল সুমি খানম নামের এক নারীর সাথে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়েন। সুমীর স্বামী শার্শাতে ব্র্যাকের মাঠকর্মী হিসেবে কর্মরত। এই পরিবারে ১৪ বছরের একটি পুত্রসন্তান ও রয়েছে। চলতি বছরের ৩ জানুয়ারী নিজ বাড়িতে স্ত্রী সুমি খানমের সাথে কনস্টেবল মহিদুলকে আপত্তিকর অবস্থায় ধরে ফেলে সুমীর স্বামী ইকবাল হোসেন। সেই ছবি পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে উপস্থাপন করে মহিদুলের খপ্পর থেকে স্ত্রী ফেরত পাবার আবেদন করেন হতভাগ্য স্বামী। এ ঘটনায় ৯ জানুয়ারী কনস্টেবল মহিদুলকে বাগআচড়া পুলিশ ফাঁড়ি থেকে ক্লোজড করা হয়। ২ ফেব্রুয়ারী তার নামে বিভাগীয় মামলা করে যশোর পুলিশের রিজার্ভ অফিস।
এই সময়ে কনস্টেবল মহিদুল তার নিজ স্ত্রী ও পরিবারের কোন খোঁজ খবর রাখেনি। উল্টো ২০ মার্চ মহিদুলের ভাই সোহাগ খান ভাইয়ের স্ত্রী মিশরী খানমকে মারধোর করে এ ব্যাপারে কোন কথা না বলার জন্য শাসায়। ক্লোজড থাকা অবস্থায় ৪ এপ্রিল পরিবারের কথা বলে ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসে মহিদুল। এসময় স্ত্রী মিশরীকে মারধোর করে এবং সুমি কে বিয়ে করার জন্য কাবিননামায় স্বাক্ষরের হুমকি দেয়। নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তার জন্য ৫ এপ্রিল মিশরী খানম নড়াইলের পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। ৮ এপিল স্বামী পুলিশ কনস্টেবল মহিদুল,তার ভাই সোহাগ খান ও প্রেমিকা সুমি খানমের নামে পারিবারিক আদালতে মামলা করেন মিশরী খানম।
খোজ নিয়ে জানা গেছে,ইকবালের স্ত্রী সুমি খানমের বাবার বাড়ি ভারতের হাওড়া হওয়ায় বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে পাসপোর্টে পার হতে গিয়ে নানা ধরনের সহায়তা করতেন কনস্টেবল মহিদুল। সেই সুবাদে ইকবাল ও তার স্ত্রী সুমির সাথে ঘনিষ্টতা তৈরী হয়। যা পরবর্তীতে প্রেমে রূপ নিয়েছে।
সুমীর স্বামী ইকবালের অভিযোগ,পুলিশ কনস্টেবল মহিদুলের এই আচরনে আমি অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। আমার শিশু সন্তানটি অসহায় হয়ে পড়েছে তার মায়ের জন্য। আমি পুলিশ মহিদুলের উপযুক্ত শাস্তি চাই এবং আমার স্ত্রী সুমিকে ফেরত চাই।
মিশরী খানম এর পিতা মো.ইকরামুল হকের অভিযোগ, মহিদুল পরকীয়া প্রেমিকা সুমী কে নিয়ে নড়াইলের শাহাবাদ ও আশেপাশের এলাকায় বিভিন্ন বাড়িতে থাকছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা, ক্লোজড অবস্থায় কিভাবে এইসব করার সাহস দেখায় আমার বোধগম্য হয় না।
কনস্টেবল মহিদুল আলমের সাথে কথা বলতে তার মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলে, ভাই আমি একটু ব্যাস্ত আছি পরে কথা বলছি,এই বলে মোবাইল কেটে দেন।
যশোরের সহকারী পুলিশ সুপার(শার্শা সার্কেল) জুয়েল ইমরান বলেন, তাকে(কনস্টেবল মহিদুল)এই অপরাধে পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয়েছে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। সে যে ধরনের অপরাধ করেছে তাতে পার পাবে না। আশাকরি তার স্ত্রী ও পরিবার ন্যায়বিচার পাবে।
নড়াইল সদর থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মোহাম্মদ শওকত কবীর ডায়েরী প্রসঙ্গে বলেন, এটা যাচাই বাছাই করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এছাড়া পুলিশের বিভাগীয় মামলার তদন্ত সঠিক নিয়মেই চলবে।