বিশেষ প্রতিনিধি, নড়াইল নিউজ ২৪.কম
নড়াইলে পুলিশ কর্তৃক সাংবাদিক হয়রানির প্রতিবাদে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমানের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের নিজ কার্যালয়ে স্মারক লিপি গ্রহন করেন।
এসময় নড়াইল প্রেসক্লাবের সভাপতি এনামূল কবির টুকু, সাধারন সম্পাদক শামীমূল ইসলাম টুলু, সাপ্তাহিক নড়াইল বার্তার সম্পাদক(ভারপ্রাপ্ত) সাংবাদিক সৈয়দ নঈমুর রহমান ফিরোজ, সাপ্তাহিক নড়াইল কণ্ঠ ও অনলাইন নড়াইল কণ্ঠের সম্পাদক কাজী হাফিজুর রহমান, সাইফুল ইসলাম তুহিন, মাহাবুবুর রশিদ লাবলু, সাথী তালুকদার, হাফিজুল নিলু, মধু সরকার, এসকে সুজয়, শুভ সরকার প্রমূখ।
সাংবাদিক সমাজ, নড়াইলের আয়োজনে এর আগে নড়াইল প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রেরিত স্মারকলিপিতে বলা হয়:-
বরাবর
মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়,
গণপ্রজতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।
মাধ্যমঃ জেলা প্রশাসক, নড়াইল।
বিষয়: নড়াইলে পুলিশ কর্তৃক সাংবদিক হয়রানির প্রতিবাদে স্মারকলিপি প্রদান প্রসঙ্গে।
মহোদয়,
আপনার সদয় অবগতি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জানাচ্ছি যে, ‘নড়াইলে পুলিশের হয়রানির প্রতিবাদে ইজিবাইক চলাচল ২৪ঘন্টা বন্ধ রাখার পর জেলা প্রশাসকের আশ^াসে গতকাল বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১) দুপুর থেকে পুনরায় চলাচল শুরু হয়েছে। গত বুধবার বেলা ১১টার দিকে পুলিশের হয়রানির প্রতিবাদে পুরাতন বাস টার্মিনালে ইজিবাইক চলাচল বন্ধ রেখে ইজিবাইক সমিতির সভাপতি মাছুম জমাদ্দারের সভাপতিত্বে এক প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
এ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সমিতির নেতা নবির হোসেন, ইসমাইল সিকদার, আলিনুর বিশ^াস, মনির হোসেন মুন্না, গুরুচাঁদ কুন্ডু, হাবিব মোল্যা ও আলমসহ অনেকে। বক্তাগণ অনতিবিলম্বে জরিমানা আদায়সহ পুলিশের হয়রানিমূলক কার্যক্রম বন্ধ না হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য ইজিবাইক চলাচর বন্ধ ঘোষণা করেন। বিষয়টি পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায় জানতে পেরে ইজিবাইক সমিতির নেতাদের সাথে বৈঠকে বসেন।
এদিকে ইজিবাইক চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে পড়েন। ইজিবাইক চালকরা অভিযোগ করেন, পুলিশ তাদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করছে। শহরের ঢুকতে গেলে বিভিন্নস্থানে বাঁধা দেওয়া হয়। নানান অজুহাতে ইজিবাইক চালকেদের গাড়ির চাবি নিয়ে যায়, পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে আটকে রাখে। এমনকি ২ থেকে ৩ হাজার টাকা জরিমানাও আদায় করে পুলিশ। সারাদিন কাজ করে যা আয় হয় তা জরিমানা দিয়ে বাড়ি চলে যেতে হয়। পরিবার নিয়ে অনেক সময় খেয়ে না খেয়েও দিন পার করতে হয়। সমিতির প্রতিবাদ সভা ও এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব অভিযোগ জানানো হয়।
অপরদিকে, “নড়াইলে পুলিশের হয়রানির প্রতিবাদে ইজিবাইক চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে শ্রমিকরা” শিরোনামে নড়াইল নিউজ ২৪.কম এ সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় তেলেবেগুনে জ্বলছেন পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায়। বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সংবাদটি প্রকাশিত হয়।
সংবাদ প্রকাশের পর বুধবার রাত সাড়ে ৯ টার পর সদর থানার ওসি অপারেশন শিমুল কুমার দাস প্রথমে শরিফুল ইসলাম বাবলুকে ফোন করে থানায় যেতে বলেন। পরে সদর থানার ওসি শওকত কবিরের সাথে শরিফুল ইসলাম বাবলুর কথা হয়। কি কারনে পুলিশ অফিসে যেতে হবে জানার জন্য পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায়ের সাথে ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি শরিফুল ইসলাম বাবলুকে বলেন, আপনাকে তো ধরতে লোক পাঠিয়েছি। আপনার ‘এতবড় সাহস হল কি করে, পুলিশের বিরুদ্ধে নিউজ করেন’। এখনই আমার সাথে এসে দেখা করেন, প্রয়োজনে আপনার সভাপতি-সম্পাদককে সাথে নিয়ে আসেন।
তাৎক্ষনিক শরিফুল ইসলাম বাবলু নড়াইল প্রেসক্লাবের সভাপতি এনামুল কবীর টুকু এবং সাধারণ সম্পাদক শামীমূল ইসলাম টুলুসহ অন্যান্যদের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়। নড়াইল প্রেসক্লাবের সভাপতি এনামুল কবীর টুকু এ বিষয়টি নিয়ে পুলিশ সুপারের সাথে কথা বললে পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায় বলেন, আমি তো আপনাকে আসতে বলিনি। প্রেসক্লাবের সভাপতি এনামুল কবীর টুকু বলেন, আমরা আগামীকাল (আজ বৃহস্পতিবার) সকালে আপনার অফিসে দেখা করবো। এর জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, না এখনই আসতে হবে ওকে (শরিফুল ইসলাম বাবলু)।
এরপর পুলিশ সুপারের নির্দেশে ডিবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুকান্ত সাহার নেতৃত্বে পুলিশের দু’টি গাড়ি রাত ১২ টার দিকে ইজিবাই সমিতির সভাপতি মাছুম জমাদ্দারকে সঙ্গে নিয়ে নড়াইল প্রেসক্লাবের সদস্য দেশ টেলিভিশন ও বাসসের নড়াইল জেলা প্রতিনিধি এবং নড়াইল নিউজ ২৪.কম এর সম্পাদক ও প্রকাশক শরিফুল ইসলাম বাবলুর বাড়িতে গিয়ে তাঁকে তুলে আনার জন্য অভিযান চালায়। সাংবাদিক শরিফুল ইসলাম বাবলু বাসায় না থাকায় পুলিশ বাসার পাশে প্রায় ১৫-২০ মিনিট অবস্থান করে চলে যায়। তাৎক্ষনিক ইজিবাইক সমিতির সভাপতি মাছুম জমাদ্দার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এ নাটকীয় অভিযানের ব্যাপারে গোয়েন্দা শাখার (ডিবি ওসি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুকান্ত সাহা বলেন, ‘এসপি স্যার বাবলু ভাইকে যেতে বলেছিলেন, তিনি যাননি। তার পর বাবলু ভাইয়ের ফোন বন্ধ ছিল। তাই আমরা খোঁজ নিতে এসেছিলাম।’
সদর থানার ওসি শওকত কবির বলেন, আমি বুধবার রাতে সাংবাদিক শরিফুল ইসলাম বাবলুর বাড়িতে পুলিশের গাড়ি নিয়ে যাইনি।
পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায় বলেন, ‘পুলিশ কেন হয়রানি করবে, পুলিশ আইন প্রয়োগ করার চেষ্টা করেছে। সাংবাদিক শরিফুল ইসলাম বাবলুর বাড়িতে রাত ১২টায় পুলিশের দু’টি গাড়ি যাওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো, সে লিখছে যে পুলিশের হয়রানি, এ মিথ্যা কথা সে লিখেছে কেন পেপারে? অপর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি সাংবাদিক শরিফুল ইসলাম বাবলুর বাড়িতে কোন পুলিশ পাঠাইনি। আমি তাকে আমার অফিসে আসতে বলেছিলাম, সে আসেনি।’
উপরে বর্ণিত ঘটানায় সাংবাদিক শরিফুল ইসলাম বাবলুর অপরাধটা কোথায় (?) তা আমাদের বোধগোম্য নয়। এ ঘটনায় দেশের সকল সাংবাদিক সমাজকে আহত করেছে। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের ফলে সাংবাদিকের ওপর হয়রানিমূলক ব্যবহার মানবাধিকার লঙ্ঘনের সামিল।
আমরা সাংবাদিক সমাজ এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ঘৃণা জানাচ্ছি। একইসাথে দ্রুত নড়াইলের পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায় পিপিএম (বার)সহ ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের এহেন আচারণের জন্য বিভাগীয় তদন্ত পূর্বক সুষ্ঠু বিচারের দাবী জানাচ্ছি।
নড়াইলের সাংবাদিক সমাজের পক্ষে
নড়াইল, লোহাগড়া ও কালিয়া উপজেলায় বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকবৃন্দ স্বাক্ষর করেন।
অনুলিপি সদয় অবগতি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য পেরিত হলো:-
১। মাননীয় সংসদ সদস্য, নড়াইল-১।
২। মাননীয় সংসদ সদস্য, নড়াইল-২।
৩। মাননীয় সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।
৪। নড়াইল জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত মাননীয় সচিব, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।
৫। মাননীয় সচিব, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।
৬। মাননীয় বিভাগীয় কমিশনার, খুলনা বিভাগ, খুলনা।
৭। মাননীয় জিআইজি, খুলনা রেঞ্জ, খুলনা।
৮। মাননীয় জেলা প্রশাসক, নড়াইল।
আরও পড়ুন:
নড়াইলে পুলিশের ভালো সংবাদ বয়কটের সিদ্ধান্ত সাংবাদিক সমাজের