বিশেষ প্রতিনিধি, নড়াইল নিউজ ২৪.কম
নড়াইলে পুলিশের হয়রানির প্রতিবাদে ইজিবাইক চলাচল ২৪ ঘন্টা বন্ধ রাখার পর জেলা প্রশাসকের আশ্বাসে গতকাল বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টম্বর) দুপুর থেকে পুনরায় চলাচল শুরু হয়েছে। বুধবার বেলা ১১টার দিকে পুলিশের হয়রানির প্রতিবাদে পুরাতন বাস টার্মিনালে ইজিবাইক চলাচল বন্ধরেখে ইজিবাইক সমিতির সভাপতি মাছুম জমাদ্দারের সভাপতিত্বে এক প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সমিতির নেতা নবির হোসেন, ইসমাইল সিকদার, আলিনুর বিশ্বাস, মনির হোসেন মুন্না, গুরুচাঁদ কুন্ডু, হাবিব মোল্যা ও আলমসহ অনেকে। বক্তাগণ অনতিবিলম্বে জরিমানা আদায়সহ পুলিশের হয়রানিমূলক কার্যক্রম বন্ধ না হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য ইজিবাইক চলাচর বন্ধ ঘোষণা করেন। বিষয়টি পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায় জানতে পেরে ইজিবাইক সমিতির নেতাদের সাথে বৈঠকে বসেন।
এদিকে ইজিবাইক চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে পড়েন। ইজিবাইক চালকরা অভিযোগ করেন, পুলিশ তাদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করছে। শহরের ঢুকতে গেলে বিভিন্নস্থানে বাঁধা দেওয়া হয়। নানান অজুহাতে ইজিবাইক চালকেদের গাড়ির চাবি নিয়ে যায়, পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে আটকে রাখে। এমনকি ২ থেকে ৩ হাজার টাকা জরিমানাও করে পুলিশ। সারাদিন কাজ করে যা আয় হয় তা জরিমানা দিয়ে বাড়ি চলে যেতে হয়। পরিবার নিয়ে অনেক সময় খেয়ে না খেয়েও দিন পার করতে হয়। সমিতির প্রতিবাদ সভা ও এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব অভিযোগ জানানো হয়।
অপরদিকে, “নড়াইলে পুলিশের হয়রানির প্রতিবাদে ইজিবাইক চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে শ্রমিকরা” শিরোনামে নড়াইল নিউজ ২৪.কম এ সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় তেলেবেগুনে জ্বলছেন পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায়। বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সংবাদটি প্রকাশিত হয়।
সংবাদ প্রকাশের পর বুধবার রাত সাড়ে ৯ টার পর সদর থানার ওসি অপারেশন শিমুল কুমার দাস প্রথমে ফোন করে থানায় যেতে বলেন। পরে সদর থানার ওসি শওকত কবিরের সাথে কথা হয়। কি কারনে পুলিশ অফিসে যেতে হবে জানার জন্য পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায়ের সাথে ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আপনাকে তো ধরতে লোক পাঠিয়েছি। আপনার ‘এতবড় সাহস হল কি করে, পুলিশের বিরুদ্ধে নিউজ করেন’। এখনই আমার সাথে এসে দেখা করেন, প্রয়োজনে আপনার সভাপতি-সম্পাদককে সাথে নিয়ে আসেন।
তাৎক্ষনিক নড়াইল প্রেসক্লাবের সভাপতি এনামুল কবীর টুকু এবং সাধারণ সম্পাদক শামীমূল ইসলাম টুলুসহ অন্যান্যদের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়। নড়াইল প্রেসক্লাবের সভাপতি এনামুল কবীর টুকু এ বিষয়টি নিয়ে পুলিশ সুপারের সাথে কথা বললে তিনি (এসপি) বলেন, আমি তো আপনাকে আসতে বলিনি। প্রেসক্লাবের সভাপতি এসময় বলেন, আমরা বৃহস্পতিবার (২৩সেপ্টম্বর) সকালে আপনার অফিসে দেখা করবো। জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, না এখনই আসতে হবে ওকে (শরিফুল ইসলাম বাবলু)।
এরপর পুলিশ সুপারের নির্দেশে সদর থানার ওসি এবং ডিবির ওসি’র নেতৃত্বে পুলিশের দু’টি গাড়ি রাত ১২ টার দিকে ইজিবাই সমিতির সভাপতি মাছুম জমাদ্দারকে সাথে নিয়ে নড়াইল প্রেসক্লাবের সদস্য দেশ টেলিভিশন এর নড়াইল জেলা প্রতিনিধি এবং নড়াইল নিউজ ২৪.কম এর সম্পাদক ও প্রকাশক শরিফুল ইসলাম বাবলুর বাড়িতে তাঁকে তুলে আনার জন্য অভিযান চালায়। সাংবাদিক শরিফুল ইসলাম বাবলু বাসায় না থাকায় পুলিশ বাসার পাশে প্রায় ১৫-২০ মিনিট অবস্থান করে চলে যায়। ইজিবাই সমিতির সভাপতি মাছুম জমাদ্দার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এ ব্যাপারে গোয়েন্দা শাখার (ডিবি ওসি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুকান্ত সাহা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বলেন, ‘এসপি স্যার বাবলু ভাইকে যেতে বলেছিলেন, তিনি যাননি। তার পর বাবলু বাইযের ফোন বন্ধ ছিল । তাই খোঁজ নিতে এসেছিলাম।’
সদর থানার ওসি শওকত কবির বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বলেন, আমি বুধবার রাতে সাংবাদিক শরিফুল ইসলাম বাবলুর বাড়িতে পুলিশের গাড়ি নিয়ে যাইনি।
পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বলেন, ‘পুলিশ কেন হয়রানি করবে, পুলিশ আইন প্রয়োগ করার চেষ্টা করেছে। সাংবাদিক শরিফুল ইসলাম বাবলুর বাড়িতে রাত ১২টায় পুলিশের দু’টি গাড়ি যাওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো , সে লিখছে যে পুলিশের হয়রানি, এ মিথ্যা কথা সে লিখেছে কেন পেপারে ? অপর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি সাংবাদিক শরিফুল ইসলাম বাবলুর বাড়িতে কোন পুলিশ পাঠাইনি। আমি তাকে আমার অফিসে আসতে বলেছিলাম, সে আসেনি।’