নড়াইল নিউজ ২৪.কম ডেস্ক:
নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, আগের কমিশনের ব্যর্থতা, সফলতা মূল্যায়নের প্রশ্ন আসবে। কিন্তু এ মুহূর্তে আগের কমিশনের দোষ-ত্রুটি নিয়ে বলতে চাইছি না। তবে শিক্ষণীয় কোনো বিষয় থাকলে সেটি আমরা সংশোধন করে কাজ করব। নির্বাচনের মাঠ ছেড়ে না যেতে রাজনৈতিক দলগুলোকে পরামর্শ দিয়েছেন । পাশাপাশি দলগুলোকে ভোটের মাঠ ছেড়ে না পালানোর কথা বলেন। সোমবার দায়িত্ব গ্রহণ করে তিনি সততার সঙ্গে কাজ করার কতা বলেন।
সোমবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে সিইসি যান আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে। এর আগে পরে আসেন অন্য চার কমিশনার বেগম রাশিদা সুলতানা, আহসান হাবীব খান, মো. আলমগীর ও আনিছুর রহমান।
সেখানে যাওয়ার পর নতুন কমিশনকে ফুল বরণ করে নেন নির্বাচন কমিশন সচিব হুমায়ুন কবির খন্দকার।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার দুই সপ্তাহ পর নতুন নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব গ্রহণ করল। দুই দিন আগে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ পাঁচ সদস্যের কমিশন বেছে নেয়ার পরদিন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর কাছে শপথ নেন তারা।
এরপর কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়ে বসে নতুন কমিশন। তবে সেখানে কী কথা হয়েছে, তা গণমাধ্যমের জানার সুযোগ ছিল না।
মতবিনিময় শেষে সিইসি সাংবাদিকদের বলেন, মূলত পরিচয়পর্ব ছিল এটি। এ ছাড়া নির্বাচনি আইন, কাজের পরিধি ও অন্যান্য বিষয় জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
তিনি বলেন, ‘সভায় বলেছি আমরা আন্তরিকতার সঙ্গে, সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করব।’
এরপর মিট দ্য প্রেসে আসেন সিইসি ও চার কমিশনার। সেখানে প্রথমে নিজেই বক্তব্য রাখেন সিইসি, এরপর নেন প্রশ্ন।
হাবিবুল আউয়াল রাজনৈতিক দলগুলোকে ভোটের লড়াইয়ে অটল থাকার পরামর্শ দেন। পরাক্রমশালী রাশিয়ার আক্রমণে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কির অটল থেকে লড়াই করে যাওয়ার উদাহরণ টানেন।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন তো যুদ্ধও। যেমন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেনেলস্কি মাঠ ছেড়ে পালাননি। এমনই ভাবে দলগুলোকেও মাঠে থাকতে হবে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব দায়িত্ব পালনের।’
সিইসি বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে আবেগ আছে। মানুষের আকাঙ্ক্ষা থাকে, রাজনৈতিক দলগুলোর আকাঙ্ক্ষা থাকে। নির্বাচনে দলগুলোর অনেক কর্মী থাকে, তাদেরও কিন্তু দায়িত্ব থাকে। মাঠ ছাড়া কিন্তু যাবে না। কষ্ট হবে কিন্তু মাঠ ছেড়ে পালানো যাবে না।’
নির্বাচনে নিজেদের ভূমিকা কী থাকবে, তা নিয়েও কথা বলেন নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। বলেন, ‘আমরা নির্বাচন পরিচালনা করব, আমরা তো পার্লামেন্ট মেম্বার হব না। পরিচালনায় কমিশনের রোল ম্যানেজারিয়াল। সব সহকর্মী বলেছেন, সাংবিধানিক শপথের প্রতি অনুগত থেকে নির্বাচন পরিচালনা করব।’
ভোটের মাঠ ছেড়ে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে সিইসি বলেন, ‘যারা নির্বাচন করবে তাদের কর্মীদের বলতে হবে সেন্টারে সেন্টারে থাকো। প্রতিপক্ষের শক্তি দেখে পালিয়ে যাওয়া যাবে না। ধরেন, সন্দ্বীপে ভোট হচ্ছে। আমি যদি প্রতিপক্ষের শক্তি দেখে জাহাজে করে চট্টগ্রাম চলে যাই তাহলে নির্বাচন হবে না। দোকান যদি খোলা থাকে তাহলে অবাধ ভোট পড়বেই। লড়াইটা করতে হবে।’
সবাই ভোটে আসবে আশায় সিইসি:
সার্চ কমিটির মাধ্যমে এ নিয়ে তিনটি নির্বাচন কমিশন গঠন হলো। এর আগে ২০১২ ও ২০১৭ সালে যথাক্রমে কাজী রকিবউদ্দিন আহমেদ ও কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বে দুটি কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির সংলাপ ও সার্চ কমিটিতে নাম প্রস্তাব করলেও বিএনপি ও সমমনারা এবার এই প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়নি।
রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি বলছে, নির্বাচন হতে হবে নির্দলীয় সরকারের অধীনে। এই দাবি আদায়ে আন্দোলনে যাওয়ার কথাও বলছে তারা।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে নতুন সিইসি বলেন, ‘আমরা আন্তরিকতা, নিষ্ঠা, সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করব। পরবর্তী সময়ে আপনারাই তা মূল্যায়ন করবেন। আমরা অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে প্রার্থনা করি, প্রত্যাশা করি সব দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে।’
বিএনপিকে চা খাওয়ার দাওয়াত দেবেন বলেও জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশন সচিব হুমায়ুন কবির খোন্দকারও উপস্থিত ছিলেন।