নড়াইল নিউজ ২৪.কম ডেস্ক:
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নির্দলীয় সরকার ছাড়া দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। নির্বাচনকালীন সরকার ও নির্বাচন কমিশন হতে হবে নিরপেক্ষ। ভোটের আগে তাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে এবং তাদের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে সব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে বিএনপির পক্ষ থেকে চারটি শর্ত তোলা হয়েছে। শনিবার দুপুরে মহিলা দলের ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। মহিলা দলের আয়োজনে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এ সভার হয়।
গত দুই দিন আগে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
ফখরুল বলেন, ‘উনি (শেখ হাসিনা) নির্বাচনের কথা বলেছেন, তার দলের কার্যনির্বাহী পরিষদের সভায় সবাইকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। কোন নির্বাচন ? যে নির্বাচন শুধু আপনাকে নির্বাচিত করবে সেই নির্বাচন ?
‘যে নির্বাচনে আমাদের জনগণ যারা ভোটার আছে তারা ভোট দিতে যেতে পারবে না এবং তাদের বাড়িঘর আক্রমণ করা হবে, ভোটকেন্দ্রে গেলে তাদের বেইজ্জতি করা হবে, নির্যাতন করা হবে, সেই নির্বাচন? যে নির্বাচনের আগের রাত্রেই আপনারা দখল করে নিয়ে চলে যাবেন, সেই নির্বাচন? যে নির্বাচন আপনাদের ক্ষমতায় যাওয়ার আরেকটা পথ সুগম করবে, সেই নির্বাচন?
‘আমরা পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, বাংলাদেশে আর সেই ধরনের নির্বাচন হবে না। আমাদের খুব পরিষ্কার কথা, নির্বাচন একটা হবে। সেই নির্বাচন অবশ্যই হতে হবে একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে, সেই নির্বাচন হতে হবে একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায়।’
উচ্চ আদালতের রায়ে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারব্যবস্থা বাতিলের পর বিএনপি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ভোটে অংশ নেয়নি। ভোট ঠেকানোর আন্দোলনে নেমে ব্যর্থ হওয়ার পর ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের ভোটে যায় তারা। তবে সেই নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে। ভোটের পর সংসদে যোগ না দেয়ার ঘোষণা দিলেও পরে তাদের সদস্যরা শপথ নেন।
এই সংসদ অধিবেশন বসে ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি। সংবিধান অনুযায়ী তার আগের ৯০ দিনের যে কোনো দিন হবে ভোট। আর দুই বছরের মতো বাকি থাকতে দলগুলো নির্বাচনকেন্দ্রিক প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। আওয়ামী লীগ এরই মধ্যে ইশতেহার প্রণয়নের কাজ শুরু করে দিয়েছে। তবে বিএনপির প্রস্তুতি দৃশ্যমান নয়। তারা নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা কেমন হবে, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন।
ফখরুল ভোটে যাওয়ার শর্ত হিসেবে বলেন, ‘সবার আগে গণতন্ত্রের আপসহীন নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে এবং একই সঙ্গে মুক্ত করতে হবে যারা কারাগারে আছেন গণতন্ত্রের কর্মী-নেতা, শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে যাদের আটক করে রাখা হয়েছে তাদের মুক্তি দিতে হবে। আর ৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা আছে, সেই মামলাগুলোকে প্রত্যাহার করতে হবে। এর আগে কোনো নির্বাচন হবে না এ দেশে।’
নির্বাচন কমিশন গঠন বিষয়ে সংসদে আইন প্রণয়নে আপত্তিও জানান ফখরুল। বলেন, ‘আমরা বলতে চাই, নির্বাচন কমিশন গঠন হবে তখনই যখন সত্যিকার অর্থেই একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন হতে পারে, সেই ব্যবস্থা তৈরি করা হয়। আইন করা হবে বলছেন। কোন আইন?
‘আপনারা আইন করবেন পার্লামেন্টে, যেখানে আর কেউ নেই, কথা বলার সুযোগ নেই বা আপনারা একতরফা আইন পাস করে নিয়ে যাবেন আপনাদের সুবিধার জন্য। সেই আইনের মধ্য দিয়ে যে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হলে সেটাও এ দেশের মানুষ মেনে নেবে না।’
‘সরকার ফ্যাসিবাদী, জনগণ চিরকাল মানবে না’
সরকারকে ফ্যাসিবাদী আখ্যা দিয়ে ফখরুল অভিযোগ করেন, সব ক্ষেত্রে দলীয়করণ করা হয়েছে, ভয়ে সাংবাদিকরা কিছু লিখতে পারেন না। লিখলেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়।
বিএনপি নেতা বলেন, ‘আমরা খুব স্পষ্ট করে বলতে চাই, এভাবে একতরফা, একদলীয় শাসনব্যবস্থা, একটা কর্তৃত্ববাদী সরকার প্রতিষ্ঠা করা, ফ্যাসিবাদী সরকারকে চিরস্থায়ী করা, এটা কোনো দিনই এ দেশের জনগণ মেনে নিতে পারে না। এটা হচ্ছে বাস্তব কথা।
‘আমরা লড়াই করেছি, আমরা যুদ্ধ করেছি, যুদ্ধ করে দেশের স্বাধীনতা নিয়ে এসেছি। সেই স্বাধীনতাযুদ্ধের সময়ে আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল কী? একটা ছিল রাজনৈতিক মুক্তি ও আরেকটা অর্থনৈতিক মুক্তি। সেই রাজনৈতিক মুক্তিই তো আমি পাইনি, আমি তো এখন পুরোপুরিভাবে বন্দি হয়ে আছি।’
বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং ‘গণতন্ত্রের মুক্তি’- এই প্রত্যাশায় আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, ‘এ কথা মনে করে আমাদের রাস্তায় নেমে পড়তে হবে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘এখন আমাদের একটাই উদ্দেশ্য। শেখ হাসিনারে মারো টান, গদি হবে খান খান। অর্থাৎ শেখ হাসিনার পতন সব সমস্যার সমাধানের পথ খুলবে।
‘নির্বাচন কমিশন গঠনে হয়তোবা মতামত আমরা দেব। তবে আমি বলব, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে ফেরেস্তা এনেও যদি নির্বাচন কমিশন করা হয়, তারপরেও লাভ হবে না।’