নড়াইল নিউজ ২৪.কম ডেস্ক:
নিবন্ধন ছাড়া বা অবৈধ মোবাইল সেট বন্ধ করে দেয়ার কথা বারবার বলা হলেও তা এখনও রয়েছে পরীক্ষা মূলক পর্যায়ে। তিন মাসের পরীক্ষামূলক নিবন্ধন কার্যক্রম শেষে আগামী অক্টোবরেও অবৈধ সেট বন্ধ হবে কি না, সে বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।
এ বিষয়ে বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যামসুন্দর শিকদার বলেন, ‘কোনো সেট এই মুহূর্তে বিচ্ছিন্ন হচ্ছে না। ৩০ জুনের পর যে সকল সেট চালু হয়েছে, সেগুলো অনলাইনে ভেরিফিকেশন হচ্ছে।
‘এটা এখন পরীক্ষামূলক পর্যায়ে আছে। ১ অক্টোবর থেকে হবে অ্যাকশনধর্মী। তখন সরকার সিদ্ধান্ত নেবে নিবন্ধন ছাড়া সেটগুলোর বিষয়ে কী করা হবে।’
বিটিআরসি সূত্র জানিয়েছে, ব্যবহারকারীর হাতের মোবাইল ফোন বৈধ না অবৈধ বা আন-অফিসিয়াল তা জানার জন্য পরীক্ষামূলকভাবে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) নামের একটি সিস্টেম গত ১ জুলাই থেকে চালু করেছে বিটিআরসি। এই সিস্টেমটি মোবাইল ফোন অপারেটর ও আইএমইআই (ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ফোন আইডেন্টিটি নম্বর) ডাটাবেজের সঙ্গে সংযুক্ত। এতে আগে থেকে মোবাইল অপারেটরের নেটওয়ার্কে যুক্ত থাকা, বৈধ পথে আমদানি এবং দেশে তৈরি মোবাইল ফোনের তথ্য সংরক্ষিত আছে। ফলে আগে থেকেই চালু থাকা মোবাইল নম্বর ও হ্যান্ডসেট স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধিত হয়েছে। আর ৩০ জুনের পরে যেসব মোবাইল ফোন নিয়ম মেনে দেশে ঢুকবে না, সেগুলো সচল হবে প্রক্রিয়া মেনে।
বিটিআরসির অনুমোদন নিয়ে যেসব মোবাইল ফোন সেট আমদানি বা প্রস্তুত করা হয়নি, সেগুলোই হচ্ছে অবৈধ। নতুন উদ্যোগ পুরোপুরি কার্যকর হলে দেশে কোনো অবৈধ মোবাইল ফোন থাকবে না। দেশের বাইরে থেকে অবৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে আসা ফোনও চালু হবে না। এতে করে বৈধ পথে দেশে মোবাইল ফোন আমদানি বাড়বে, সরকারের রাজস্বও বাড়বে।
অবৈধ মোবাইল ফোন বন্ধ করার ব্যাপারে এর আগে একাধিকবার বিটিআরসি সময়সীমা নির্ধারণ করলেও সেটি কার্যকর করতে পারেনি। সবশেষ গত জুলাই থেকে সেটগুলো বন্ধের ঘোষণা দিয়ে তা থেকেও সরে আসে বিটিআরসি। অক্টোবরের পর কী হবে, তাও চূড়ান্ত করেনি সংস্থাটি।
তবে এটি কার্যকর করার ক্ষেত্রে বদ্ধপরিকর বিটিআরসি। সে জন্য নতুন মোবাইল সেট কিনতে হলে গ্রাহককে অবশ্যই নিশ্চিত হতে হবে যে সেটি বৈধ কি না, বলছে সংস্থাটি।
বিটিআরসির কমিশনার এ কে এম শহিদুজ্জামান বলেন, ‘এটা পরীক্ষামূলকভাবে তিন মাসের জন্য দেখা হচ্ছে। এই তিন মাসে কী ফিডব্যাক আসে, তার উপর ভিত্তি করেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে, এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি। আমরা কী পেলাম, কতগুলো সেট পেলাম, অনিবন্ধিতগুলোর ব্যাপারে কী করা যায়, ইত্যাদি সবকিছুই সিদ্ধান্ত হবে অক্টোবরে। আন-অথোরাইজড অবস্থায় টেম্পোরারিভাবে সেটগুলো অন্তত অক্টোবর পর্যন্ত চলবে।’
বিটিআরসি বলছে, বর্তমানে কোনো অনিবন্ধিত সেট নেটওয়ার্কে কানেক্ট হলে সঙ্গে সঙ্গে সেই মোবইলে মেসেজ যাচ্ছে: ‘আপনার মোবাইল ফোনটি নিবন্ধন করে নিন।’
এ জন্য উপযুক্ত কাগজপত্র জমা দিতে বলা হচ্ছে।
গত দুই মাসে বিটিআরসি বেশ কিছু এমন সেট শনাক্ত করেছে। তারা জানাচ্ছে, অথোরাইজ করতে হলে হয় দেশে মোবাইল কেনার রশিদ দেখাতে হবে, না হয় বিদেশ থেকে আসার সময় ইমিগ্রেশন বা পাসপোর্টে যে সিল ছিল মোবাইল সেট আনার, সেটা দেখাতে হবে, না হয় বিদেশে কোথা থেকে কেনা হয়েছে তার ক্যাশ মেমোর ফটোকপি বা ছবি জমা দিতে হবে।
শহিদুজ্জামান বলেন, ‘আন-অথোরাইজড অনেক সেটের ট্যাক্স দেয়া হয় নাই, এর কোনো ভিত্তি বা ফাউন্ডেশন নাই, কীভাবে দেশে এসেছে তারও কোনো ডকুমেন্ট নাই। কাজেই আন-অথোরাইজ সেট শনাক্ত হলে বলা হচ্ছে, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে সেগুলো অথোরাইজ করে নিতে। এমন সেটের সংখ্যা একেবারে কম না।
‘এই তিন মাস টেম্পোরারি পিরিয়ডের মধ্যে সব মোবাইল সেট নিবন্ধিত হয়ে গেলে ভালো, না হলে যেগুলো হলো না, তাদের নিয়ে কী করা যায়, সেটা ভেবে দেখা হবে। এমন হতে পারে মোবাইল সেটগুলো বন্ধ করে দেয়া হবে। এমনও হতে পারে, যারা ট্যাক্স ফাঁকি দিয়েছে, তাদের ট্যাক্স পরিশোধ করতে হবে।’
কেন সেট নিবন্ধনের উদ্যোগ:
বিটিআরসি বলছে, মূলত দুটি দিক বিবেচনায় নিয়ে মোবাইল সেট নিবন্ধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর একটি আর্থিক, অন্যটি নিরাপত্তাজনিত। যদি অবৈধভাবে হ্যান্ডসেট আনা কমে যায়, তবে দেশে বৈধভাবে অ্যাসেম্বল বা তৈরি বাড়বে। আবার মোবাইল সেটগুলো নিবন্ধিত থাকলে আমদানিকারকরা সরকারের ট্যাক্স ফাঁকি দিতে পারবে না। সরকারের আয় বাড়বে।
আবার কারো মোবাইল ফোন ছিনতাই বা চুরি করে অন্য কেউ সেটি বিক্রি বা ব্যবহার করতে পারবে না। চুরি যাওয়া সেটগুলো সহজে উদ্ধার করা সম্ভব হবে। মোবাইল সিম, আইএমইআই এবং জাতীয় পরিচয়পত্র একসাথে ট্যাগিং করা হবে। এতে করে একজনের নামে নিবন্ধিত মোবাইল অপরজনের মোবাইল সেট হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। মোবাইল ফোন ব্যবহার করে কোনো অপরাধ সংঘটন হলে সেটির বিরুদ্ধে দ্রুত এবং সহজে ব্যবস্থা নেয়া যাবে।