স্টাফ রিপোর্টার, নড়াইল
নড়াইল জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সেচ্ছাচারী ও দূর্নীতিবাজ কালচারাল অফিসার হামিদুর রহমানকে অবাঞ্চিত ঘোষণা ও দ্রুত অপসারণ ও শাস্তির দাবিতে প্রতিবাদ ও ঘেরাও কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
শুক্রবার (১৫ মার্চ) সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে নড়াইল জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সামনে কালচারাল অফিসারের সেচ্ছাচারিতা ও দূর্নীতি প্রতিরোধ সংগ্রাম কমিটির আয়োজনে এসব কর্মসূচি ও বিক্ষোভ মিছিল হয়। এসব কর্মসূচিতে কালচারাল অফিসার হামিদুর রহমাননের লোকজন বাধা দিলে দুই পক্ষে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে ঘটনা স্থলে পুলিশ আসলে হামিদুরের লোকজন পালিয়ে যায়।
কর্মসূচিতে জেলা শিল্পকলা একাডেমীর কালচারাল অফিসারের সেচ্ছাচারিতা ও দূর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা সাইফুর রহমান হিলুর সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট নড়াইলের সভাপতি মলয় কুমার কুন্ডু,সাধারণ সম্পাদক শরফুল আলম লিটু,যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামীমূল ইসলাম টুলু,মূর্ছনা সংগীত নিকেতনের সাধারণ সম্পাদক প্রশান্ত সরকার,নড়াইল জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সংগীত বিভাগের শিক্ষক নিরঞ্জন বিশ্বাস,আশিষ কুমার স্বপন প্রমুখ।
এসময় কর্মসূচিতে,‘দুর্নীতিবাজ কালচারাল অফিসার হামিদুরের আস্তানা ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’,‘হামিদুরের দুই গালে জুতা মারো তালে তালে’, ‘দুর্নীতি আর করিস না, পিঠের চামড়া থাকবে না’,‘হামিদুরে কালোহাত ভেঙে দাও’সহ নানান স্লোগান দিয়ে বক্তরা বলেন,‘শিল্প ও সংস্কৃতির জেলা নড়াইলে এ ধরণের ঘৃণ্য ন্যাক্কারজনক ঘটনা কখনও ঘটেনি। গত এক বছরে এই দূর্নীতিবাজ অফিসার বিভিন্ন অনুষ্ঠান, প্রশিক্ষণ,কর্মশালা,অডিটোরিয়াম সংস্কারের নামে প্রায় ৫০লাখ টাকার দূর্নীতি করেছে। শিল্পকলা একাডেমীর শিক্ষক-কর্মচারিদের অপমান ও শিল্পকলা থেকে বের করে দিয়েছে। গত ১০ দিন শিল্পকলা একাডেমীতে কোনো ক্লাস হয়না। শিক্ষকরা তার এভাবে সে নড়াইলের সংস্কতিকে ধ্বংস করছে। এর আগে সে ময়মনসিংহ,চুয়াডাঙ্গা জেলায় দূর্নীতির কারণে তাকে তাড়ানো হয়েছে। এই আন্দোলন একটি প্রগতিশীল সমাজকে বাঁচানোর আন্দোলন। এইসেচ্ছচারি এ দূর্নীতিবাজ এই ব্যক্তিকে একদিনও দেখতে চাই না আমরা। আগামি এক সপ্তাহের মধ্যে তাকে নড়াইল থেকে অপসারণ ও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে শিল্পকলা একাডেমী তালা মেরে দেওয়ার ঘোষণা দেন তারা।
পরে সাংস্কৃতিক কর্মীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান গ্রহন করেন এবং জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরীর সাথে দেখা করেন।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জেলা কালচারাল অফিসার মোঃ হামিদুর রহমান নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন,আমাকে অপসারণের জন্য একটি কুচক্রিমহল উঠেপড়ে লেগেছে। জেলা প্রশাসন তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্নীতির যে প্রতিবেদন প্রদান করেছে এটিকে তিনি মিথ্যা দাবি করেন।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরীর বলেন, সম্প্রতি তার (কালচালাল অফিসার) বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে সংস্কৃতি বিষয়ক সচিবের কাছে একটি প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা হয়েছে বলেও জানান।
আরও পড়ুন: নড়াইল কালচারাল অফিসারের অপসারণের দাবিতে শিক্ষকদের ক্লাস বর্জন
উল্লেখ্য,জেলা কালচারাল অফিসার হামিদুর রহমান ২০২৩ সালের জানুয়ারী মাসে যোগদানের পর থেকে এভাবে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে শিল্পী, বিচারক ও কলাকুশলীদের জন্য সরকারি নির্ধারিত সম্মানি দেন না। অনুষ্ঠনের জন্য যে বরাদ্দ থাকে তার চার ভাগের একভাগও খরচ করেন না। এছাড়া শিল্পকলা একাডেমিতে সংগীতের বিভিন্ন শাখার ক্লাস চলাকালীন সময়ে কালচারাল অফিসার সংগীত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে তিনি অসদাচরণ করে থাকেন। গত বছরের মাঝামাঝি জেলা শিল্পকলা অডিটোরিয়ামের লাইটিং,সাউন্ড,ইলেকট্রিক ও ভবন সংস্কারে ১০ লাখ টাকার কাজ হলেও অভিযোগ রয়েছে, এ কাজে খাতা-কলমে টেন্ডার দেখিয়ে মূলত নিজেই কাজ করেছেন। এ পর্যন্ত এই দূর্নীতিবাজ অফিসার নড়াইল থেকে প্রায় ৫০ লাখ টাকা আতœসাৎ করেছে। এসব অনিয়ম-দূর্নীতির বিরুদ্ধে গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, নড়াইলের নেতৃবৃন্দ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরীর কাছে একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন। এর প্রেক্ষিতে ২৪ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জেলা কালচারাল অফিসারের বিরুদ্ধে অনিয়ম,দূর্নীতি ও দুর্বব্যবহারের বিরুদ্ধে স্বাক্ষ্য দেয় নড়াইলের ৩২জন সাংস্কৃতিক কর্মী, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও ব্যবসায়ী। জেলা কালচারাল অফিসার হামিদুর রহমানের আর্থিক দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অনিয়মের সত্যতা পাওয়ায় জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি তার (হামিদুর রহমান) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গত ১১ ফেব্রুয়ারি সংস্কৃতি বিষয়ক সচিবের কাছে প্রতিবেদন পাঠায়। তবে এতো দিনেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সঙ্গতকারণে ভুক্তভোগীদের প্রশ্ন, হামিদুর রহমানের খুঁটির জোর কোথায় ?