বিশেষ প্রতিনিধি, নড়াইল নিউজ ২৪.কম
নড়াইল সদর উপজেলার বিভিন্ন মন্দির-মসজিদের নামে ভূয়া কমিটি তৈরী করে জি আর প্রকল্পের চাল বরাদ্দে হরিলুট হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নড়াইলের দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রান বিভাগের ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে স্মারক নং ৫১.০১.৬৫০০.০০০.৪১.০০২.২৩ মাধ্যমে বন্যা,নদী ভাঙ্গন,ঘূর্ণিঝড় ও বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবেলায় মানবিক সহায়তা জিআর চাল উপ-বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে।
সদর উপজেলায় ৭০ টি প্রকল্পে ৪২.০০০ মে.টন চাউল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে কিছু প্রকল্প সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে মর্মে ব্যাপক প্রচার আছে। তারা ওই সমস্ত ভূয়া প্রকল্পের চাউল উত্তোলন করে আত্মসাতের পায়তারা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত মন্দির, মসজিদে জি আর বরাদ্দ না হলেও অদৃশ্য কারণে কতিপয় কিছু মন্দির মসজিদে এ বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে বা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অপরদিকে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যাবহার করে জি আর প্রকল্পের লাখ লাখ টাকা হরিলুটের সঙ্গে জড়িতদের সনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা আবশ্যক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে বরাদ্দকৃত সিংঙ্গাশোলপুর ইউনিয়নের মহিলা সংরক্ষিত ইউপি সদস্য শাহিনা বেগম তার স্বামী, সন্তান ও আত্মীয় স্বজনের নামে গোবরা এলাকার মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দিরের নামে প্রকল্প বরাদ্দ করিয়েছে। প্রকল্প তালিকায় তার একাদশ শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে সৌভন শেখকে গোবরা পশ্চিম পাড়া গোরস্থান কমিটির সভাপতি করে জি আর বরাদ্দ যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে অনুমোদন করিয়েছে। অপর দিকে তার স্বামী মো.শরিফুল ইসলামকে গোবরা পূর্ব পাড়া জামে মসজিদের সভাপতি করে প্রাকৃতিক দূর্যোগে ক্ষতি গ্রস্থদের মাঝে জি আর প্রকল্প বরাদ্দ করেছে। একই তালিকায় এক পরিবারের দুই ভাই রোজিবুল মোল্যা,সুলতান শেখকে গোবরা দক্ষিণ পাড়া জামে মসজিদ ও গোবরা পশ্চিম পাড়া মহিলা মাদ্রাসার সভাপতি করে জি আর বরাদ্দ করা হয়েছে। অনুরুপভাবে শুভারঘোপ ফুরকানিয়া মাদ্রাসা, গোবরা নূরানী মাদ্রাসা ও এতিম খানা, খলশেখালী সার্বজনীন কালী মন্দির, বড়াগাতী পশ্চিম পাড়া জামে মসজিদ, গোবরা দক্ষিণ পাড়া কালী মন্দির, শুভারঘোপ সার্বজনিক দূর্গা মন্দির, নলদিরচর পূর্ব পাড়া জামে মসজিদ,খলশেখালী মধ্য পাড়া দূর্গা মন্দির, শুভারঘোপ পশ্চিম পাড়া জামে মসজিদ, ২১ ফেব্রুয়ারী উপলক্ষে প্রাকৃতিক দূর্যোগে ক্ষতি গ্রস্থদের মাঝে জিআরসহ বিভিন্ন প্রকল্প দেখিয়ে জি আর বরাদ্দ করেছেন । বরাদ্দের বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। জি আর তালিকায় অন্তর্ভূক্ত মোবাইল নম্বর ও নাম থাকা প্রতিষ্ঠান ও সভাপতি সম্পাদকেরা এর কিছুই জানেন না।
এ বিষয়ে জানতে জি আর বরাদ্দের তালিকায় থাকা গোবরা দক্ষিণ পাড়া জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি গোবরা এলাকার রোজিবুল মোল্যা বলেন,আমি কোন মসজিদ কমিটির লোক নই। কোন সদস্য ও নই। আপনাদের মুখে শুনলাম আমার নামে জি আর বরাদ্দ হয়েছে। তালিকায় আমার নাম ও মোবাইল নম্বর দেখছি। আমি গরীব মানুষ আমাকে সরকারি সহায়তা দেওয়ার কথা বলে মহিলা মেম্বার শাহিনা আমার মোবাইল নম্বর ও ভোটার কার্ড নিয়েছেন।
অপর দিকে তালিকায় থাকা গোবরা পশ্চিম পাড়া মহিলা মাদ্রাসার সভাপতি মাংস ব্যবসায়ী সুলতান শেখ বলেন, আমি বাজারে মাংস বিক্রি করি। আমি কোন মসজিদ কমিটির লোক না। আমার নামে চাল বরাদ্দ হয়েছে আমার এটা জানা নেই।
সিংগাশোলপুর ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত ইউপি সদস্য শারমিন বেগমের মোবাইলে একাধিক বার ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি।
ইউপি সদস্যের স্বামী শরিফুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন জায়গা ম্যানেজ করে প্রকল্প বরাদ্দ করা হয়েছে। বিশেষ করে ত্রান অফিসের মশিউর রহমানের সাথে অর্ধেক চুক্তিতে এই বরাদ্দ পাস হয়েছে। এ বিষয়ে কোন কিছু না লেখার জন্য তিনি অনুরোধ করেন।
সিংগাশোলপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম হিটু বলেন, বিগত সময়ে অনেক জি আর চেয়ারম্যানদের স্বাক্ষর ছাড়া উত্তোলন হয়েছে। গোবরা এলাকার এই বরাদ্দের জি আর কমিটিতে আমাকে স্বাক্ষর করতে বললে আমি এতে স্বাক্ষর করতে রাজি হয়নি। আমি কোন ভূয়া কমিটিতে স্বাক্ষর দিব না।
সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মেহেরুননেছা বলেন, জি আর বরাদ্দ সরাসরি ডিসি অফিস দেয়। আমাদের কাছে কোন আবেদন করা হয় না। যদি কোন প্রতিষ্ঠান তাদের বরাদ্দের বিষয় না জানে অন্য কেউ তাদের নামে আবেদন করে থাকে, তাহলে অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নড়াইল সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন আক্তার বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি কিছুই জানিনা। তবে খতিয়ে দেখতে হবে বলে আশ্বাস দেন।