নড়াইল নিউজ ২৪.কম ডেস্ক:
করোনাভাইরাসের প্রথম দুই ঢেউ যেভাবে আতঙ্ক ছড়িয়েছে, সে রকম হয়নি তৃতীয় ঢেউ। তুলনামূলক কম প্রাণঘাতী বলে এ নিয়ে ভীতি কম রয়েছে মানুষের মাঝে। ভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন তুলনামূলক দুর্বল। বিষয়টি জানা গিয়েছিল শুরুতেই। ধরনটি ব্যাপক সংক্রামক হলেও আক্রান্তদের মধ্যে শারীরিক জটিলতা কম থাকায় মৃত্যু কম। একইভাবে এটি তুলনামূলক দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আসার ইঙ্গিতও মিলছে।
গত ৭ জানুয়ারি নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। পরে তৃতীয় ঢেউ ছড়ানোর যে আশঙ্কা করা হয়েছিল, সেটি ২০ জানুয়ারি বাস্তবে রূপ নেয়।
এরপর আরও আট দিন শনাক্তের হার থাকে ঊর্ধ্বমুখী। একপর্যায়ে তা ৩৩ শতাংশ ছাড়িয়ে রেকর্ড গড়ে ২৮ জানুয়ারি। তখন ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ কোথায় গিয়ে থামবে, তা নিয়ে আলোচনা তৈরি হয়।
রেকর্ড গড়ার পরদিন থেকেই সংক্রমণের গতি কমতে থাকে। এরই মধ্যে পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ১০ এর ঘরে নেমে এসেছে এবং তা আরও নিম্নমুখী।
২৪ ঘণ্টায় রোগীর সংখ্যা সাড়ে ১১ হাজার থেকে নেমে এসেছে তিন হাজারের ঘরে। মৃত্যুর সংখ্যা চল্লিশের ঘর থেকে নেমে এসেছে দশের ঘরে।
এটি প্রতিদিনই যেভাবে কমছে, তাতে দ্রুতই তা ৫ শতাংশে নেমে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
অবশ্য ৫ শতাংশের নিচে নামলেও তৃতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসার সিদ্ধান্ত নিতে নিতে মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ লেগে যেতে পারে। এর কারণ পরপর ১৪ দিন শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে নামলেই কেবল এই ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসার কথা বলা যাবে।
করোনার ঢেউ মানে কী ?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের বেশি থেকে এর নিচে নেমে এলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ধরা হয়। উল্টো পথে যাত্রা অর্থাৎ সংক্রমণের হার পাঁচের নিচে থেকে ৫ ছাড়ালে পরবর্তী ঢেউ আঘাত হেনেছে ধরা হয়।
দুই-এক দিনের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয় না। পরপর দুই সপ্তাহ যদি সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের বেশি বা কম থাকে, তাহলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে বা পরবর্তী ঢেউ আঘাত হেনেছে বলে ধরা হয়।
২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে করোনা সংক্রমণের পর ২০২১ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি তা নিয়ন্ত্রণে আসে, তবে শুরুর কয়েক মাসে পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে ছিল। মে-জুনে তা এই হার ছাড়ায়।
এ ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসতে সময় লাগে প্রায় ১১ মাস।
মার্চের শেষে আবার দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হানে। সেটি নিয়ন্ত্রণে আসে গত ৪ অক্টোবর। অর্থাৎ দেশে দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসতে সময় লাগে ৬ মাস।
তৃতীয় ঢেউ যে আরও আগেই নিয়ন্ত্রণে আসছে, সেই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
গত ২০ জানুয়ারি তৃতীয় ঢেউ নিশ্চিত হওয়ার পর আরও আট দিন সংক্রমণ ঊর্ধ্বগামী থাকার পর তা কমতে থাকে।
গত তিন সপ্তাহে শনাক্তের হার কমে এক-তৃতীয়াংশ হয়ে গেছে, যেটি আর আগে দেখা যায়নি। প্রতিদিনই শনাক্তের হার দেড় থেকে ২ শতাংশ কমছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শনাক্তের হার সর্বোচ্চ বা পিকে ওঠার পর দুই সপ্তাহ সেখানে অবস্থান করে ধীরে ধীরে তা নিম্নগামী হয়, কিন্তু এবার তা আরও আগেই নিম্নগামী হচ্ছে, যা বিশেষজ্ঞদের আশা দেখাচ্ছে।
গত ২৮ জানুয়ারি ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ছিল রেকর্ড ৩৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ। সেটি কমে ১৭ ফেব্রুয়ারি দাঁড়ায় ১০ দশমিক ২৪ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ১২ দশমিক ২০ শতাংশ।
এক সপ্তাহে সংক্রমণের হার:
গত ৯ থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি ২৪ ঘণ্টায় ৪২ হাজার ৮৬৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৬ দশমিক ৯৫ শতাংশ। এরপর ১২ ফেব্রুয়ারি বাদে ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকে পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার।
১১ ফেব্রুয়ারি শনাক্তের হার দাঁড়ায় ১৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ। ১২ ফেব্রুয়ারি কিছুটা বেড়ে ১৬ দশমিক ৫০ শতাংশ হয়।
এক দিন পর ২ শতাংশ শনাক্তের হার কমে ১৩ ফেব্রুয়ারি হার ছিল ১৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ। ১৪ ফেব্রুয়ারি এই হার কমে ১৩ দশমিক ৫৩ শতাংশে নেমে আসে।
গত বুধবার পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার কমে ১২ দশমিক ২০ শতাংশে আসে। বৃহস্পতিবার এসে রোগী শনাক্তের হার ১০ শতাংশের ঘরে নামে। এই হার তৃতীয় ঢেউ নিশ্চিত হওয়ার পর সর্বনিম্ন।
গতকাল পর্যন্ত এক দিনে ৩৪ হাজার ৫৪৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১০ দশমিক ২৪ শতাংশ।
সতর্ক থাকার পরামর্শ:
জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ও প্রতিষ্ঠানটির সাবেক বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মুশতাক হোসেন বলেন, ‘এই মাসের মধ্যেই করোনা সংক্রমণের হার হয়তো ৫ শতাংশের নিচে চলে আসবে, তবে আমাদের সাবধান থাকতে হবে; স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।
‘টিকা নিয়ে নিতে হবে। রোগী ব্যবস্থাপনাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। শনাক্ত হওয়া রোগীকে সঠিক চিকিৎসায় নিয়ে আসতে হবে।’
জনস্বাস্থ্যবিদ আবু জামিল ফয়সাল বলেন, ‘জানুয়ারির মাঝামাঝিতে করোনার তৃতীয় ঢেউয়ে সর্বোচ্চ শনাক্তের হার ছিল। সেটি আস্তে আস্তে নিম্নগামী হচ্ছে, তবে প্রকোপটা এখনও শেষ হয়নি।
‘এখনও মৃত্যু অনেক বেশি হচ্ছে। এই মৃত্যু আরও নামবে, তবে আমাদের এই বিষয়ে সর্তক হতে হবে।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধির পাশাপাশি টিকায় জোর দিচ্ছি। আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি ১ কোটি মানুষকে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।’ করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসতে থাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
আরও পড়ুন: প্রাথমিক বিদ্যালয় খুলবে ১ মার্চ