নড়াইল নিউজ ২৪.কম ডেস্ক:
ডিবির যুগ্ম কমিশনার জানান, সাম্প্রতিককালে হেফাজতের যেসব নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন, তাদের কাছ থেকে অর্থনৈতিক বিষয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। মাদ্রাসার উন্নয়ন, রোহিঙ্গাদের সহায়তা ও হেফাজতের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নেতাদের কাছে যে অর্থ এসেছে, তা খরচের কোনো স্বচ্ছতা পাওয়া যায়নি। নানান সময়ে দেশি-বিদেশি দানের টাকা নিজেদের ভোগবিলাস ও রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করেছেন হেফাজত নেতারা। মাদ্রাসার জন্য ও রোহিঙ্গাদের সহযোগিতায় বিদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ এসেছিল হেফাজত নেতাদের কাছে। সেই টাকার অধিকাংশই তারা আত্মসাৎ করছেন।
এ তথ্য জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম। রোববার দুপুরে মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে এক অনানুষ্ঠানিক ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান মাহবুব আলম।
তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিককালে হেফাজতের যেসব নেতাকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি, তাদের কাছ থেকে অর্থনৈতিক বিষয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। অতি সম্প্রতি আমরা হেফাজত নেতা মনির হোসেন কাসেমীকে গ্রেপ্তার করেছি। তা ছাড়া মামুনুল হকের ছয়টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য আমরা পেয়েছি। সেই অ্যাকাউন্টগুলোতে এক বছরে ৬ কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।
মিয়ানমার থেকে অত্যাচারের শিকার হয়ে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে ছুটে আসার প্রবণতার শুরু সেই আশির দশকে। তবে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটে ২০১৭ সালের আগস্টে। সে সময় পরিস্থিতি বিবেচনায় মানবিক কারণে বাংলাদেশ সীমান্ত খুলে দেয়ার পর দেশে আসে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা। এর আগে থেকেও বাংলাদেশে আছেন আরও প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা। বর্তমানে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে ৩৪টি ক্যাম্পে।
সাড়ে তিন বছর আগে এই অনুপ্রবেশের পর রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়াতে থাকে সাধারণ মানুষও। সরকারের পাশাপাশি তাদের জন্য সহায়তা নিয়ে দেশের নানাপ্রান্ত থেকে মানুষ ছুটতে থাকে কক্সবাজারের ক্যাম্পে। দেশের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশ থেকেও আসতে থাকে সহায়তা।
পুলিশ বলছে, রোহিঙ্গারা প্রায় সবাই মুসলমান হওয়ায় ধর্মীয় আবেগ কাজে লাগান হেফাজত নেতারা। বিপাকে পড়া ‘মুসলমানদের’ জন্য এই সংগঠনটির কাছে সহায়তা আসতে থাকে নানা দেশ থেকে।
গোয়েন্দা কর্মকর্তা মাহবুব আলম বলেন, ‘এই অর্থ মাদ্রাসার উন্নয়ন, রোহিঙ্গাদের সহায়তা ও হেফাজতের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য তার কাছে এসেছিল। কিন্তু এসব অর্থ খরচের কোনো স্বচ্ছতা পাওয়া যায়নি। সব টাকা তার কাছে একসঙ্গে রাখা ছিল। নানান সময়ে বিভিন্ন সহযোগিতার নামে হেফাজত নেতাদের কাছে আসা এসব অর্থের একটি অংশ তারা নিজেদের পার্সেন্টেজ হিসেবে রেখে দিতেন।’
প্রবাসীরা এসব টাকা হেফাজত নেতাদের কাছে দানের উদ্দেশ্যে পাঠাতেন বলে জানান মাহবুব আলম। তিনি বলেন, ‘এসব ফান্ড তারা মাদ্রাসার ছাত্রদের জন্য খুব একটা ব্যবহার করতেন না। এ অর্থ দিয়ে হেফাজতের কয়েকজন নেতা তাদের স্বার্থসিদ্ধি করেছেন।
‘তারা রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী হওয়ার জন্য ওই অর্থ ব্যবহার করেছেন। তারা ব্যক্তিগতভাবে গাড়ি বাড়ি করে সম্পদশালী হয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ের অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া হেফাজত নেতাদের সকলেই এসব অর্থিক অনিয়মের সাথে জড়িত ছিলেন।’
মাহবুব আলম বলেন, ‘হায়াতুল উলিয়া ও বেফাকের শীর্ষস্থানীয় ও কওমী অঙ্গনের কয়েকজন নেতার ক্ষেত্রেও একই অস্বচ্ছ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড দেখা গেছে। আমরা মনে করি, এসব ক্ষেত্রে সরকারের আরও নজরদারি দরকার। আমাদের দেশে অনেক ভালো ও জ্ঞানী আলেম আছেন। যারা রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত উদ্দেশ্যে ইসলামকে ব্যবহার করছেন, তাদের ভয়ে ভালো আলেমরা দূরে থাকছেন।’
হেফাজত নেতাদের বিরুদ্ধে মামলায় যেসব অভিযোগ আনা করা হয়েছে, তদন্তে সেগুলোর প্রমাণ মিলছে বলে জানান ডিবির যুগ্ম কমিশনার। তিনি বলেন, তাদের আরও অনেক অনিয়মের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। এখন পর্যন্ত দুজন হেফাজত নেতা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
গ্রেপ্তার হওয়া অন্য হেফাজত নেতারা এখনও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি না দিলেও এতে মামলায় কোনো প্রভাব পড়বে না বলে নিশ্চিত করেছেন মাহবুব আলম। তিনি বলেন, ‘আমরা অভিযোগের সত্যতার জন্য যে সকল প্রমাণ পাচ্ছি, সেগুলোই তাদের অপরাধ প্রমাণ করবে। তারা সেসব স্বীকার করুন আর নাই করুন, এতে মামলায় কোনো প্রভাব পড়বে না। আমরা নানা অডিও, ভিডিও, ডকুমেন্ট, ব্যাংক হিসাব প্রমাণ হিসেবে দেখাব।’