নড়াইল নিউজ ২৪.কম ডেস্ক:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল খোলার সুপারিশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটি প্রথম ডোজ টিকা নেয়ার শর্তে ৫ অক্টোবর চতুর্থ বর্ষ এবং মাস্টার্সের শিক্ষার্থীদের জন্য হল খোলা হবে। তবে এই সুপারিশকে ‘অবিবেচক’ এবং ‘অভিভাবকসুলভ’ নয় বলছেন শিক্ষার্থীরা। তারা চাইছেন, ১ অক্টোবর থেকেই হল খুলে দেয়ার দাবি শিক্ষার্থীদের।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী বর্তমানে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি অক্টোবরের এক তারিখ থেকেই হল খোলার সুপারিশ করত তাহলে তারা মাসের শেষ দিনেই বাসা ছেড়ে দিতে পারতেন। কিন্তু ৫ অক্টোবর হওয়ায় এখন তাদের পাঁচ দিনের জন্য পুরো মাসের ভাড়া পরিশোধ করতে হবে।
শিক্ষার্থীরা আরও জানান, সেপ্টেম্বরেই হল খুলবে ভেবে অনেক শিক্ষার্থী ইতিমধ্যে বাসার মালিককে জানিয়ে দিয়েছেন, তারা এই মাসেই বাসা ছেড়ে দিবেন। কিন্তু পাঁচ তারিখ থেকে হল খোলা হলে এই পাঁচ দিন শিক্ষার্থীরা কোথায় থাকবেন?
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তানিমুল ইসলাম চৌধুরী ইরফান বলেন, ‘বলা হয়ে থাকে, শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের অভিভাবক, কিন্তু সিদ্ধান্ত তো অভিভাবকসুলভ না। পাঁচটা দিন এগিয়ে আনলে তো আহামরি সমস্যা হতো না।
‘শুধু নিজেদের প্রাধান্য দিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল, শিক্ষার্থীদের কথা ভাবলও না। এই পাঁচটা দিনের জন্য শিক্ষার্থীদের কত টাকা গুনতে হবে, সেটা তাদের জানা আছে?’
বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী সাজ্জাদ হোসেন রিয়াদ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন নির্লজ্জ সিদ্ধান্তের প্রতি ধিক্কার জানাই। আপনারা নিজেদের যদি অভিভাবক মনে করেন তাহলে শিক্ষার্থীবান্ধব সিদ্ধান্ত নিন। হল সবার জন্য খুলে দেয়া হোক এবং সেটা সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহেই। দয়া করে এক সপ্তাহের জন্য শিক্ষার্থীদের বিপদে ফেলবেন না।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন সুপারিশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও ক্ষোভ জানাচ্ছেন অনেক শিক্ষার্থী।
শোয়ায়েব আহমেদ নিলয় নামের এক শিক্ষার্থী লিখেছেন, ‘পাঁচ দিনের জন্য পুরো মাসের মেস ভাড়া দিতে হবে অনেক শিক্ষার্থীর। ক্যাম্পাসের আশপাশের মেস থেকে কি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনো শেয়ার পায়? সব ছাত্রসংগঠন দাবি জানানো সত্ত্বেও তারা এ রকম অবিবেচক সিদ্ধান্ত কীভাবে নেয়?’
আমানুল্লাহ পারভেজ লিখেছেন, ‘প্রশাসনের সিদ্ধান্তে ক্ষতিগ্রস্ত হাজার হাজার শিক্ষার্থী। আর কত সহ্য করা যায়? সেপ্টেম্বরে হল খুলে দিবে এই আশায় অনেকে মেসের সিট কেটে দিয়েছে। অথচ কয়েক দিন আগে গুঞ্জন উঠল, সেপ্টেম্বরে হল খুলবে।
‘সময় এসেছে হলের তালা ভেঙে হলে প্রবেশ করার।’
আক্ষেপ করে বিজয় একাত্তর হল সংসদের সহসভাপতি সজীবুর রহমান লিখেছেন, ‘শিক্ষার্থীদের কল্যাণের জন্য ভাববে, বর্তমানে এমন শিক্ষকদের বড়ই অভাব।’
আমির নাজমুল নামের অন্য শিক্ষার্থী লিখেছেন, ‘শুনলাম আগামী ৫ অক্টোবর থেকে হল খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সিদ্ধান্ত কি প্রভোস্ট কমিটি নিল নাকি ঢাকা শহরের বাড়ির মালিকরা নিল?’
রবিউল হাসান রবি নামের এক শিক্ষার্থী লিখেছেন, ‘এমন সিদ্ধান্তের জন্য ধিক্কার জানাই। তথাকথিত অভিভাবকদের এতটুকুও মনে হলো না, যেসব শিক্ষার্থী ঢাকার বিভিন্ন মেসে বা বাসায় থাকে তারা কোথায় থাকবে?’
বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সুপারিশ পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের স্বার্থের কথা চিন্তা করে সেপ্টেম্বরের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় খোলা উচিত। সরকারের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে বৈঠক হয়েছে সেখানেও জানানো হয়েছে ২৭ সেপ্টেম্বরের পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সিন্ডিকেট হল খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।’
সাদ্দাম আরও বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, শিক্ষার্থীদের টিকার জন্য নিবন্ধন করানো সাপেক্ষে হল খোলা যাবে। সেখানে টিকা দেয়ার কোনো শর্ত ছিল না, বরং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে টিকাকেন্দ্র বসাতে বলা হয়েছে। নানা কারণে সব শিক্ষার্থী টিকার আওতায় আসতে পারেনি।
‘এর দায় তো শিক্ষার্থীদের নয়। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হলে তোলার জন্য টিকার শর্ত জুড়ে দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সুপারিশ সুবিবেচনাপ্রসূত নয়।’
শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এ গোলাম রাব্বানীকে জানালে তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সঙ্গে ছাত্র সংগঠনগুলোর সভা হয়েছে। সেখানে তারা প্রস্তাব দিয়েছেন যেন সেপ্টেম্বরের শেষে বা অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে হল খুলে দেয়া হয়।
‘২৬ সেপ্টেম্বর লাইব্রেরি ও বিভাগীয় সেমিনার এবং ৫ অক্টোবর হল খুলে দেয়ার সুপারিশের মাধ্যমে আমরা কিন্তু তাদের দুটি প্রস্তাবই রেখেছি।’
প্রক্টর বলেন, ‘১ ও ২ তারিখ আমাদের ভর্তি পরীক্ষা আছে। ঢাকার বাইরে সাতটি জায়গায় এসব পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে যাওয়া-আসাতে আমাদের এক দিন লেগে যাবে। তারপরও এক দিন হাতে রেখে আমরা হল খুলে দিলাম।’
প্রক্টর আরও বলেন, ‘৫ অক্টোবর সকাল ৮টা থেকে চতুর্থ বর্ষ এবং মাস্টার্সের শিক্ষার্থীরা হলে উঠে যেতে পারবে। মানবিক কারণেই সকাল ১০টা না করে ৮টা থেকে হলে ঢোকানোর সুপারিশ করা হয়েছে। আমার মেধাবী শিক্ষার্থীরা রাতের গাড়িতে ঢাকায় এসে কোথাও যেন দাঁড়িয়ে থাকতে না হয়, সরাসরি হলে ঢুকতে পারে, সে জন্য ৮টা থেকে হলে ঢোকানোর সুপারিশ করেছি।’