ডেঙ্গু শনাক্তে বিলম্ব অচেনা উপসর্গ ডেঙ্গু শনাক্তে বিলম্ব অচেনা উপসর্গ – Narail news 24.com
শুক্রবার, ০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৩:৪৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
পিছিয়ে গেল আইএমএফের চতুর্থ কিস্তির ঋণ নড়াইলে তারুণ্যের উৎসব উপলক্ষে ২০ দিনব্যাপী মেলার উদ্বোধন নড়াইলে বালক-বালিকাদের সাইক্লিং প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত নড়াইল কালেক্টরেট স্কুলের দুইদিন ব্যাপী বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের উদ্বোধন নড়াইল পৌর বিএনপি নব-নির্বাচিত নেতৃবৃন্দকে গণসংবর্ধনা নড়াইল প্রেসক্লাবের নব গঠিত কমিটির সাথে জামায়াত নেতাদের মতবিনিময় নড়াইলে ভ্যাট ও ট্যাক্স বৃদ্ধির প্রতিবাদে মানববন্ধন অনুষ্টিত নড়াইল প্রেসক্লাবের নবগঠিত কমিটির সাথে মতবিনিময় সভা করলেন জেলা প্রশাসক  সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নতুন বাংলাদেশের চার্টার হয়ে থাকবে – প্রধান উপদেষ্টা পরিবেশ বান্ধব নড়াইল জেলা বিনির্মানে প্রচারনা ও জনসচেতনামুলক র‌্যালী অনুষ্টিত

ডেঙ্গু শনাক্তে বিলম্ব অচেনা উপসর্গ

Reporter Name
  • Update Time : শুক্রবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১

নড়াইল নিউজ ২৪.কম ডেস্ক:

দেশে মহামারি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ধীরে ধীরে কমে এলেও ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। আগের বছরের তুলনায় এবার ডেঙ্গুর উপসর্গ কিছুটা ভিন্ন হওয়ায় রোগীরা দেরিতে হাসপাতালে আসছে। কিছু বোঝার আগেই পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠছে। এ কারণে অন্যান্য বছরের তুলনায় আক্রান্তরা দ্রুত মারা যাচ্ছে। ডেঙ্গু আক্রান্তদের সেবা দেয়া একাধিক চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এডিস মশা নিধনে সিটি করপোরেশন ব্যর্থ হওয়ায় বিপদে রয়েছে নগরবাসী। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় বড় ঝুঁকিতে রয়েছে শিশুরা।

তারা বলছেন, ডেঙ্গুর ভয়াবহতা অন্য বছরের তুলানায় আলাদা হওয়ায় মারা গেছে অর্ধশতাধিক মানুষ। তাই প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

চিকিৎসরা বলছেন, এবার ডেঙ্গু ভালো হয়ে যাওয়ার পর শকড সিনড্রম বা নিউমোনিয়া দেখা দিচ্ছে। এককভাবে শুধু ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে না কেউই। ডেঙ্গুর সঙ্গে ডেঙ্গু-পরবর্তী জটিলতাও মানুষকে ভোগাচ্ছে।

তারা আরও বলেন, জ্বর ভালো হয়ে গেলেও চার থেকে সাত দিন সতর্ক থাকতে হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে ডেঙ্গু শনাক্ত ও চিকিৎসায় মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়ে আনা সম্ভব।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ২০০০ সাল থেকে মূলত ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যুবিষয়ক তথ্য দিয়ে আসছে তারা। ওই বছর ৯৩ জনের মৃত্যুর সংবাদ দেয়া হয়।

২০০১ সালে ৪৪ ও ২০০২ সালে ৫৮ জনের মৃত্যুর সংবাদ দেয় সরকারি এ সংস্থাটি। এরপর ডেঙ্গু সহনশীল পর্যায়ে ছিল। এ নিয়ে তেমন আলোচনাও ছিল না।

গত ২০ বছরে ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয় ২০১৯ সালে। ওই বছর ১৭৯ জনের মৃত্যুর খবর দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মারা গেছে ৫৪ জন। এ নিয়ে চলতি বছর ১৩ হাজার ৭ জনের দেহে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে।

এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সাইফুল্লাহ মুন্সি বলেন, ডেঙ্গু রোগের অনেক ধরন রয়েছে। তবে এবার ‘ডেনভি-৩’-এর প্রভাব বেশি।

তিনি বলেন, ২০১৭ সালে দেশে প্রথম এই ধরন শনাক্ত হয়। এর আগে ডেনভি-১ ও ডেনভি-২-এ আক্রান্ত হয়ে অনেকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠেছে। কিন্তু ডেনভি-৩-এর বিরুদ্ধে এই ক্ষমতা কার্যকর হচ্ছে না।

সাইফুল্লাহ মুন্সি বলেন, ‘যারা আগের দুই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত, তারা নতুন করে ডেনভি-৩-এ আক্রান্ত হলে হেমোরেজ বা সংকটাপন্ন অবস্থায় পড়ছেন। এ কারণে এবার আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। এর জিনোম সিকোয়েন্সিং ভবিষ্যতে ভ্যাকসিন উৎপাদনে সহায়ক হবে।’

তিনি বলেন, ‘এবার ডেঙ্গু আক্রান্তদের বেশিরভাগের শরীরে ডেনভি-৩ ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। আর ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে অন্য বছরের তুলনায় মৃত্যুও বেশি হচ্ছে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, ‘২০১৯ সালেও ডেনভি-৩ এর ধরনের কারণে এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা দিয়েছিল। এবারও এই ধরনের সংক্রমণ বেশি হচ্ছে বলে মৃত্যুর সংখ্যাও বেশি।

‘যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তারা বেশি মারা যাচ্ছেন। এ কারণে শিশুরা আক্রান্ত হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে জটিল পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। এ ছাড়া বয়স্ক ও যারা হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, লিভার সমস্যাসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছেন, তারা আক্রান্ত হলে ঝুঁকি বেশি।’

এ বি এম আব্দুল্লাহ জানান, মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ার একটি বড় কারণ দেরিতে হাসপাতালে আসা। জ্বর-সর্দি দেখা দিলে শুরুর দিকে অনেকে এটাকে তেমন পাত্তা দেয় না। এটাই সমস্যা তৈরি করে।

এ কারণে কারও সামান্য জ্বর-সর্দি দেখা দিলে অবহেলা না করে ডেঙ্গু ও করোনা পরীক্ষা করতে হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনীয় সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে।

শুরু থেকে চিকিৎসা নিশ্চিত করতে পারলে মৃত্যুর ঝুঁকি অনেকাংশে কমে আসে। তাই সবাইকে সচেতন হতে হবে। ডেঙ্গু ভাইরাস না ছড়াতে এডিস মশা যাতে বংশবিস্তর করতে না পারে, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। ডেঙ্গু প্রতিরোধ সবচেয়ে বেশি জরুরি বলে মনে করেন তিনি।

এবারের ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিতে বেগ পোহাতে হচ্ছে জানিয়ে এ চিকিৎসক বলেন, ‘সাধারণ ডেঙ্গুতে অনেক বেশি জ্বর থাকে। তবে এবারের ডেঙ্গুতে শরীরের তাপমাত্রা ১০১-১০২ ডিগ্রির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে।’

তিনি বলেন, ‘হেমোরেজিক নয়, শকড সিনড্রোম হয়, তবে হাড় বা শরীরের সংযোগস্থলে ব্যথাও হয় না। তাই অনেকেই বুঝতে পারে না। তারা ভাবেন, দুই-একদিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে। তবে দ্রুত সময়ে অবস্থা জটিল হয়ে উঠছে। সাধারণত ডেঙ্গুতে এমন লক্ষণ দেখা যায় না।’

ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে শিশুদের শরীরে পানির স্বল্পতা দেখা দিচ্ছে। তাই শুরুতে পানির শরবত ও পানি জাতীয় ফল বেশি খেতে দিতে হবে বলে জানান তিনি।

অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী প্রতিদিন অনেক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেনিন চৌধুরী বলেন, ‘এবার শকড সিনড্রোম বেশি হচ্ছে। এর আগে হেমোরেজিক ডেঙ্গু বেশি দেখেছি। শকড সিনড্রোমে শরীরে পানি কমে যায়, তাপ বেড়ে যায়, হার্ট বিট কমে যায়, ব্লাড প্রেসার কমে যায় এবং রোগী জ্ঞান হারাতে পারে। ফুসফুস এবং পেটে পানি জমে।

‘আর হেমোরেজিক ডেঙ্গুতে রক্তক্ষরণ হয়, শরীরে র‌্যাশ ওঠে, তাপমাত্রা ১০৪ থেকে ১০৫ হয়। এটার সঙ্গে দেশের মানুষ পরিচিত। তাই সে বুঝতে পারে কী করতে হবে।’

তিনি বলেন, এবারের ডেঙ্গুতে তাপমাত্রা ১০১ ডিগ্রি থাকছে, র‌্যাশ দেখা যায় না, রক্তক্ষরণও হয় না। ফলে অনেকে বুঝতেই পারেন না যে, তিনি ডেঙ্গু আক্রান্ত বা গুরুত্ব দেন না। জ্বর চলে যাওয়ার পরে প্লাটিলেট ভেঙে ব্লাডপ্রেশার কমে কলাপস করে। ফলে এবার মৃত্যুর হার বেশি।

এ বিষয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নুসরাত সুলতানা বলেন, ‘ডেঙ্গু ও করোনা মহামারি একই সঙ্গে আসার কারণে পরীক্ষা না করে নিশ্চিত করে বলা যায় না রোগী ডেঙ্গু নাকি করোনায় আক্রান্ত। এই কারণে চিকিৎসা করতেও দেরি হচ্ছে।’

তিনি বলেন, অনেকেই ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার পর ভালো হয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এ ভালো হয়তো অনেক খারাপ দিকে নিয়ে যাচ্ছে। হাসপাতালে আসতে দেরি হচ্ছে। হাসপাতালে জটিল অবস্থায় আসার কারণে তাদের আইসিইউ প্রয়োজন হচ্ছে।

নুসরাত আরও বলেন, ‘করোনা রোগীতে অধিকাংশ আইসিইউ পূর্ণ থাকায় ডেঙ্গু রোগীদের দ্রুত আইসিইউ সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এতে অনেক রোগীর মৃত্যুর হচ্ছে।

‘সাধারণত ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে নেয়ার ১২ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে মারা যায়। তবে এবার এর চেয়ে কম সময়ের মধ্যে মৃত্যু হচ্ছে।’

© এই নিউজ পোর্টালের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

ফেসবুকে শেয়ার করুন

More News Of This Category
পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
Developed by: A TO Z IT HOST
Tuhin
x