নড়াইল নিউজ ২৪.কম ডেস্ক:
সরকার দেশে ফাইভ-জি সেবা চালু করতে চায় আগামী বছরের মধ্যেই। তার আগে এই ডিসেম্বরেই উচ্চ গতির এ ইন্টারনেট সীমিত পরিসরে বা পরীক্ষামূলকভাবে শুরু করার কথা জোরেশোরে বলছেন সরকারের সংশ্লিষ্টরা।
আগে থেকে অভিজ্ঞতা না থাকা নতুন একটি প্রযুক্তি চালু করার জন্য হাতে সময় রয়েছে মাত্র দুই মাস। এই সময়ে কীভাবে সম্ভব ফাইভ-জি পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা?
গত ২৫ সেপ্টেম্বর ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘ডিসেম্বরেই বাংলাদেশ ফাইভ-জি প্রযুক্তির যুগে প্রবেশ করবে। ডিজিটাল প্রযুক্তিতে বাংলাদেশ পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো থেকে কোনোভাবেই পিছিয়ে থাকবে না। গত তিন বছরে ফাইভ-জি প্রযুক্তির নীতিমালা প্রণয়ন ও এর সঙ্গে সম্পৃক্ত অন্যান্য প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বহুপাক্ষিক আলোচনা ও বিচার-বিশ্লেষণ করেই ফাইভ-জি যুগে আমরা প্রবেশের প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন করেছি।’
কীভাবে শুরু হবে ফাইভজির যাত্রা
রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল অপারেটর টেলিটকের হাত ধরে পঞ্চম প্রজন্মের এই টেলিযোগাযোগসেবা পরীক্ষামূলকভাবে চালু করতে চায় সরকার। প্রথম পর্যায়ে ঢাকায় ২০০ স্থানে ফাইভ-জি ইন্টারনেট সুবিধা দেয়া হবে। এ জন্য আড়াইশ কোটি টাকার একটি প্রকল্পও অনুমোদনের চেষ্টায় রয়েছে টেলিটক।
এ প্রকল্পের প্রস্তাবনায় টেলিটক বলছে, গণভবন, বঙ্গভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, সচিবালয়, সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, ঢাকার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ থানা ও বেশকিছু বাণিজ্যিক ও আবাসিক গ্রাহক ফাইভ-জির আওতায় আসবে। এতে ১০০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেটের স্বাদ পাবে গ্রাহকরা।
প্রকল্পের কী অবস্থা
প্রকল্পটির পুরো নাম ‘ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় টেলিটকের নেটওয়ার্কে বাণিজ্যিকভাবে পরীক্ষামূলক ফাইভ-জি প্রযুক্তি চালুকরণ’। পরিকল্পনা কমিশন বলছে, এ প্রকল্পের প্রস্তাবনা নিয়ে গত ২৭ সেপ্টেম্বর মূল্যায়ন কমিটির বৈঠক হয়। এতে প্রকল্পটির বিভিন্ন বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়।
এসব বিষয়সহ প্রস্তাবনাটি (ডিপিপি) পরিবর্তনের জন্য টেলিটকের কাছে পাঠানো হয়েছে। টেলিটক তা এখনও পরিকল্পনা কমিশনে ফেরত পাঠায়নি। টেলিটক প্রকল্প প্রস্তাবনা সংশোধন করে পাঠালে তা নিয়ে আবারও মূল্যায়ন কমিটির বৈঠক হবে। প্রস্তাবনায় সব কিছু সন্তোষজনক থাকলে তবেই তা অনুমোদনের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় তোলা হবে।
তবে এসব প্রক্রিয়া শেষ হতে কয়েক মাস সময় লাগতে পারে। এই প্রকল্পে খরচ হবে ২৫৪ কোটি ৮ লাখ টাকা।
বিষয়টি নিয়ে কমিশনের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমার ডিপিপি পুনর্গঠনের জন্য পাঠিয়েছি, কিন্তু তা এখনও আসেনি। পুনর্গঠিত প্রস্তাবনা এলে তার ওপর বৈঠক শেষে বেশ কয়েকটি ধাপ পার হয়ে তবে তা অনুমোদনের জন্য তোলা হবে। তবে প্রস্তাবনায় কোনো অসংগতি পেলে তা আবার সংশোধনের জন্য টেলিটকে ফেরত পাঠানো হতে পারে। এসব প্রক্রিয়া শেষ করে অনুমোদন পেতে দুই মাস বা এমনকি তিন মাসও লাগতে পারে।’
কমিশন বলছে, একনেকে অনুমোদন পেলেই প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যায় না। প্রকল্প অনুমোদন পেলেও তাকে আরও কিছু ধাপ পার হতে হয়। দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে পণ্য কেনাকাটা করা হবে, যার মধ্যে থাকবে ফাইভ-জির বিভিন্ন যন্ত্রপাতি। তা ছাড়া এ প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দও থাকতে হবে। তার জন্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির সংশোধনী (সংশোধিত এডিপি) পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এডিপি সংশোধন হবে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চে। যন্ত্রপাতি কেনার পর তা স্থাপন করতে হবে। দেশে ফাইভ-জির কোনো সরঞ্জাম নেই বলে জানিয়েছে টেলিটক।
কীভাবে ডিসেম্বরেই ফাইভ-জি?
টেলিটক বলছে, সরকারের নির্বাচনি অঙ্গীকারের একটি ছিল ২০২১ সালের মধ্যে দেশে ফাইভ-জি চালু হবে। তাই সরকার চায় যেকোনো মূল্যে দু-একটি হলেও ফাইভ-জি স্টেশন চালু করতে। এ জন্য নির্দেশনা দেয়া রয়েছে, যাতে নির্বাচনি অঙ্গীকার কিছুটা হলেও রাখা যায়।
এ জন্য প্রকল্প অনুমোদনের আগেই টেলিটক নিজেদের অর্থে কিছু ফাইভ-জি যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করে সীমিত আকারে এটি চালুর উদ্যোগ নিয়েছে, যদিও এসব এখনও চূড়ান্ত হয়নি। এখনও কোনো যন্ত্রপাতি কেনা হয়নি। তবে এ মাসেই তা চূড়ান্ত হওয়ার কথা রয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে টেলিটকের জেনারেল ম্যানেজার (পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন) মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী আমরা দেশে ভাইভ-জি চালু করতে একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছি। সেটি এখন অনুমোদন পর্যায়ে রয়েছে। এ প্রকল্পের মেয়াদ ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। তখন ঢাকায় ২০০ স্থানে ফাইভ-জি মোবাইল বিটিএস (বেইজ ট্রান্সসিভার স্টেশন) স্থাপন করা হবে।
‘ঢাকায় টেলিটকের ১ হাজারের বেশি সাইট রয়েছে, সেখান থেকে বাছাই করে ২০০ স্পটে বিটিএস বসবে। তখন বাণিজ্যিকভাবে সীমিত পরিসরে ফাইভ-জি সেবা চালু হবে। এরই মধ্যে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভার নির্দেশনা শেষে ডিপিপি পুনর্গঠন করা হচ্ছে। এটি পাস হতে নভেম্বর ডিসেম্বর হয়ে যাবে। তবে তার আগেই এই ডিসেম্বরের মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে আমরা ঢাকায় ছয় থেকে ১০টি ফাইভ-জি বিটিএস অন এয়ারে দিতে পারব।’
কারা পাবে পরীক্ষামূলক ফাইভ-জির সুবিধা
আনোয়ার হোসেন বলেন, শেরে বাংলানগর, সচিবালয়, বিটিসিএল ও টেলিফোন ভবন, রমনা, উত্তরা, গুলশান এসব এলাকায় এ সাইট নির্বাচন করা হতে পারে। এটা শুধুই পরীক্ষামূলক, জাস্ট ফাইভ-জি লঞ্চ করল– এই একটা বার্তা দেয়া হবে, ফাইভ-জির স্পিডটা দেখা হবে। এটা বাণিজ্যিকভাবে যাবে না।
‘এখনই এ ফাইভ-জির সুবিধা কেউ পাবে না। শুধু আমরা যারা এর সঙ্গে কাজ করব, তারাই এটা পাব। কিছু সিম দিয়ে এটার বিভিন্ন দিক যাচাই করে দেখা হবে। আমাদেরও সবাই এটা পাবে না। এখানে দেখা হবে ফাইভ-জি পুরো চালু করতে কী কী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। এখানে আমরা দেখব, একই স্থানে ফোর-জি কেমন স্পিড পাচ্ছে, ফাইভ-জি কেমন স্পিড পাচ্ছে, আমাদের সামনে কী কী কাজ করতে হবে ইত্যাদি। তবে এখান থেকে বিভিন্ন তথ্য নিয়ে যাচাই-বাছাই করে আগামী বছর ফাইভ-জির কার্যক্রম শুরু হবে। আর কমার্শিয়ালি যাবে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে।’
তিনি জানান, ছোট আকারে এটি চালু করতে খুব বেশি যন্ত্রপাতি বা প্রস্তুতি লাগবে না। তবে যেসব সাইট রয়েছে, সেখানে ফাইভ-জি বিটিএস বসাতে গেলে ব্যাটারির সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এন্টেনাগুলো বেশ ভারী। এ জন্য টাওয়ারগুলো আরও মজবুত করতে হবে। এ ছাড়া আর কোনো পরিবর্তন প্রয়োজন হবে না।
যন্ত্রপাতি সংগ্রহ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ডিসেম্বরের মধ্যে যে কয়েকটি সাইটে ফাইভ-জি বিটিএস বসানো হবে, তা হবে দেশের প্রথম ফাইভ-জি উপযোগাী যন্ত্রপাতি। তবে সেগুলো প্রকল্পের আওতায় নয়। টেলিটকের নিজস্ব টাকায় সেগুলো কেনা হবে। সেগুলো এখনও আনা হয়নি। হুয়াওয়ে টেকনোলজি থেকে আমরা এ ফাইভ-জি বিটিএসগুলো কিনব। এ বিষয়ে চুক্তিও হয়ে গেছে। তাড়াতাড়িই সেগুলো টেলিটকের হাতে আসবে।