নড়াইল নিউজ ২৪.কম ডেস্ক:
অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার রায় আজ। রায় ঘিরে আদালতে অপেক্ষা করছেন আসামি ও ভুক্তভোগীর স্বজনরা। তেমনই একজন হালিমা খাতুন। কথিত বন্দুকযুদ্ধে তিনি হারিয়েছেন ছেলেকে। তাইতো রায় ঘোষণার খবর শুনে বাড়িতে থাকতে পারেননি সন্তনহারা হালিমা খুতুন। টেকনাফ থেকে কক্সবাজার আদালতে ছুটে এসেছেন। আদালত প্রাঙ্গণে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
হালিমা জানান, ২০১৯ সালে চায়ের দোকান থেকে তার ছেলে আব্দুল আজিজকে ধরে নিয়ে যান ওসি প্রদীপের লোকজন। এর ছয় দিন পর মেরিন ড্রাইভে আজিজের মরদেহ পাওয়া যায়।
তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে রিকশা চালাত। সে কোনো অপরাধী ছিল না। তার নামে একটি মামলাও নাই। ওসি প্রদীপ দালালদের মাধ্যমে টাকা দাবি করেছিল। টাকা না দেয়ায় আমার ছেলেকে হত্যা করেছে।
‘মেরিন ড্রাইভ থেকে আমার ছেলের লাশ আনতে গেলে সেটাও দেয়নি। ওসি প্রদীপের পায়ে ধরে চেয়েছি। সে অনেক পাষাণ। আমি তার ফাঁসি চাই।’
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার রায় সোমবার ঘোষণা করা হবে।
রায় ঘোষণার জন্য সকাল থেকেই আদালত চত্বরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আসামিদের কয়েকজন আত্মীয়-স্বজনকেও সেখানে দেখা গেছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম জানান, দুপুর ২টার দিকে এই মামলার ১৫ আসামিকে আদালতে আনা হবে।
সিনহা হত্যা মামলার ১৫ আসামি
এই মামলার ১৫ আসামি হলেন কক্সবাজারের বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক পরিদর্শক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার দাশ, এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত, এএসআই সাগর দেব, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল-মামুন, মোহাম্মদ মোস্তফা ও রুবেল শর্মা।
এপিবিএন-এর তিন সদস্য এসআই মোহাম্মদ শাহজাহান, কনস্টেবল মোহাম্মদ রাজীব ও মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ।
সিনহার মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশের করা মামলার তিন সাক্ষী নুরুল আমিন, নেজাম উদ্দিন ও মোহাম্মদ আয়াজ।
সিনহা হত্যা
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরে এপিবিএন চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।
সেনাবাহিনী থেকে অবসরে যাওয়া রাশেদ ‘লেটস গো’ নামের একটি ভ্রমণবিষয়ক প্রামাণ্যচিত্র বানানোর জন্য প্রায় এক মাস ধরে কক্সবাজারের হিমছড়ি এলাকার একটি রিসোর্টে অবস্থান করছিলেন। ওই কাজে তার সঙ্গে ছিলেন স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের শিক্ষার্থী সাহেদুল ইসলাম সিফাত ও শিপ্রা দেবনাথ।
কক্সবাজারের পুলিশ সে সময় বলেছিল, সিনহা তার পরিচয় দিয়ে তল্লাশিতে বাধা দেন। পরে পিস্তল বের করলে চেকপোস্টের পুলিশ তাকে গুলি করেন।
ওই বছরের ৫ আগস্ট সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস টেকনাফ থানার বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে র্যাবকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়।
সিনহা নিহতের ছয় দিন পর লিয়াকত আলী, প্রদীপসহ সাত পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে এই হত্যায় সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার কথা জানিয়ে টেকনাফ থানায় করা মামলার তিন সাক্ষী এবং শামলাপুর চেকপোস্টে ঘটনার সময় দায়িত্ব পালনকারী আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আসামিদের মধ্যে ওসি প্রদীপ ও কনস্টেবল রুবেল শর্মা ছাড়া অন্য ১২ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
প্রায় সাড়ে চার মাস তদন্ত শেষে ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র্যাব-১৫-এর কক্সবাজারের তৎকালীন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম ১৫ জনের নামে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।