নড়াইল নিউজ ২৪.কম স্পোর্টস ডেস্ক:
পাঁচ ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের চতুর্থ ম্যাচে মাত্র ৯৩ রানে নিউজিল্যান্ডকে গুঁটিয়ে দিয়েছে টাইগাররা। সিরিজ জয়ের জন্য বাংলাদেশকে করতে হবে মাত্র ৯৪ রান।
প্রত্যাবর্তনের গল্প অনেকবার লিখেছেন নাসুম আহমেদ। হাল ছাড়ার পাত্র যে তিনি নন, সেটি তার শক্ত মনোভাবে প্রকাশ পেয়েছে অনেকবার। ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত পারফর্ম করেও জাতীয় দলে সুযোগ হচ্ছিল না, ধৈর্য হারাননি একেবারেই। পুরষ্কার পেয়েছেন চলতি বছরের শুরুতে। নিউজিল্যান্ড সফরে গিয়ে ২৬ বছর বয়সে বাংলাদেশ জার্সিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক। এই বয়সে বাংলাদেশি ক্রিকেটারের মাথায় অভিষেক ক্যাপ, বিস্ময়করই বটে!
নাসুম হয়তো বিস্ময় জমিয়ে রেখেছেন আরও। তবে মাত্র ১৩ ম্যাচের ক্যারিয়ারে বল হাতে যে আলোর প্রদীপ শিখা জ্বালিয়েছেন তিনি, তাতে আলোকিত গোটা বাংলাদেশ ক্রিকেট। মাত্র ১৩ ম্যাচের ক্যারিয়ারেও কিছুদিন আগে জিম্বাবুয়েতে এক ম্যাচ পর বাদ পড়েন একাদশ থেকে। অস্ট্রেলিয়া সিরিজে ফিরেই দেখিয়েছেন নিজের সামর্থ্য। এবার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আজ (বুধবার) রীতিমতো আগুন জ্বালালেন এই বাঁহাতি স্পিনার। সে আগুনে পুড়ল কিউইরা।
নাসুমের ক্যারিয়ার সেরা ১০ রানে ৪ উইকেটের বিধ্বংসী বোলিং তোপে একেবারেই সুবিধা করতে পারেনি সফরকারীরা। এতে অলআউট হওয়ার আগে তাদের ইনিংস থেমেছে মাত্র ৯৩ রানে। ৫ ম্যাচের সিরিজের আগের ৩ ম্যাচে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে থাকা বাংলাদেশ দলের এই ম্যাচ জিতে সিরিজ জিততে প্রয়োজন ৯৪ রান। নাসুমের সঙ্গে এই ম্যাচে পেসার মুস্তাফিজুর রহমানও নেন সমান ৪ উইকেট।
মিরপুরের শেরে-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বিকেল ৪টায় শুরু হওয়া ম্যাচে টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নামে ব্ল্যাকক্যাপসরা। তাদের শুরুটা একেবারেই ভালো হতে দেননি বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। কৌশল বদলে শেখ মেহেদীর পরিবর্তে নাসুমকে দিয়ে ইনিংস শুরু করেন তিনি। ইনিংসের শুরুর বল থেকেই গ্রিপ পেয়েছেন তিনি। এতে বাড়তি বাউন্সের সঙ্গে টার্নও ছিল ভয়ঙ্কর। তার ফায়দা ঠিকই তুলে নিয়েছেন নাসুম।
প্রথম ওভারেই রাচিন রবীন্দ্রকে ফিরেয়ে শুরু। মেডেন ওভারে কিউই ওপেনারকে তুলে নেন তিনি। এতে রানের খাতা খোলার আগে সাজঘরে রাচিন। এক ওভার না যেতেই আবার আঘাত হানেন এই বাঁহাতি স্পিনার। এবার ফেরালেন ফিন অ্যালেনকে। নাসুমের লেন্থ বলে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে পয়েন্টে ধরা পড়েন সাইফউদ্দিনের হাতে। ৮ বলে ১২ রান করেন অ্যালেন।
পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে মাত্র ২২ রান তুলতে পারা সফরকারীরা পরে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। ইনিংসের ১১তম ওভারে প্রথমবার বল হাতে নিয়ে সফল হন মেহেদীও। উইকেটে থিতু হয়ে যাওয়া টম লাথামকে বোকা বানান দারুণ বলে। স্টাম্পিং হয়ে ২১ রান করে সাজঘরে ফেরেন কিউই অধিনায়ক। উইল ইয়াং একপ্রান্ত আগলে রাখলে অপর প্রান্ত থেকে তার সতীর্থরা আসা-যাওয়ার মিছিলে যোগ দেন।
দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে আবার বিধ্বংসী হয়ে ওঠেন নাসুম। তৃতীয় ওভারে বল হাতে দেন ৪ রান। নিজের স্পেলের শেষ ওভার হাত ঘুরাতে এসে জোড়া আঘাত হানেন তিনি। পরপর দুই বলে ফেরান হেনরি নিকোলস (১) ও কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমকে (০)। হ্যাটট্রিকের সুযোগ ছিল এই স্পিনারের সামনে তবে নতুন ব্যাটসম্যান টম ব্লান্ডেলের লাফিয়ে ওঠা বলটি ব্যাট না বাড়িয়েই ছেড়ে দেন। এতে চার ওভারে দুই মেডেনসহ মাত্র ১০ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন নাসুম।
এরপর দৃশ্যপটে আসেন মুস্তাফিজুর রহমান। ইনিংসের ১৬তম ওভারে বল করতে এসে দ্বিতীয় বলেই ব্লান্ডেলকে সাজঘরে ফেরান তিনি। মিডঅনে থাকা নাঈম শেখের দারুণ ক্যাচে ১০ বলে মাত্র ৪ রান করে আউট হন এই ব্যাটসম্যান। একই ওভারের শেষ বলে কোল ম্যাকক্যাঞ্চি নিজের বলে নিজেই দুর্দান্ত এক ক্যাচে সাজঘরের পথ ধরান মুস্তাফিজ।
পরে ৪ রানে থাকা এজাজ প্যাটেলকে আউট করেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। তখনও একপ্রান্ত থেকে লড়াই চালিয়ে যান ইয়াং। ইনিংসের শেষ ওভারে তাকে নিজের তৃতীয় শিকারে পরিণত করেন মুস্তাফিজ। ৪৮ বলে ৪৬ রানের লড়াকু ইনিংস আসে ইয়াংয়ের ব্যাট থেকে। পরের বলেই মুস্তাফিজের শিকার হন ব্লেয়ার টিকনার। এতে অলআউট হওয়ার আগে নিউল্যান্ডের ইনিংস থেমেছে মাত্র ৯৩ রানে। ৩ ওভার ৩ বল হাত ঘুরিয়ে ১২ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন মুস্তাফিজ।