নড়াইল নিউজ ২৪.কম ডেস্ক:
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, জেলা প্রশাসকদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ। ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে উত্থাপিত অভিযোগগুলো থেকে বেরিয়ে জনকল্যাণে সম্পৃক্ততা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। জেলা প্রশাসক সম্মেলনের তৃতীয় দিনে চতুর্থ অধিবেশনে বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়বিষয়ক আলোচনায় এসব কথা বলেন। এ সময় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ও পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন উপস্থিত ছিলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেন, ‘২০৪১ সাল আমাদের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে অনেক কর্মসূচি আমরা নিয়েছি। সারা পৃথিবী আমাদের প্রশংসা করেছে। আমাদের মানবিক কাজের জন্য। নারী শিক্ষা উন্নয়ন এবং দারিদ্র্য পরিস্থিতির উন্নয়নের জন্য। ইতোমধ্যে আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থান স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে। এটা যেমন আনন্দের খবর, তার পাশাপাশি কিছু চ্যালেঞ্জও আছে।’
মোমেন বলেন, সে ক্ষেত্রে আমরা বলেছি এলডিসির বিদ্যমান সুবিধাগুলো বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দেনদরবার করে ২০২৯ সাল পর্যন্ত বহাল রাখা এবং প্যাটেন্টের ক্ষেত্রে ২০৩৩ সাল পর্যন্ত সুবিধা ধরে রাখার চেষ্টায় ইতোমধ্যে আমরা সফল হয়েছি, যা আমাদের বলবৎ থাকবে।
কিন্তু আমাদের কিছু দুঃখও আছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এক কোটিরও বেশি প্রবাসী রয়েছেন। তারা অভিযোগ করেন বিভিন্ন সময়ে তারা সঠিকভাবে পাসপোর্ট পান না। পুলিশ ক্লিয়ারেন্স হয় না। অনেক সময় দেশে এলে তাদের হয়রানি হতে হয়। তাদের জমিও অনেকে বেদখল করে ফেলে। এ ছাড়া সময়মতো ম্যারেজ সার্টিফিকেট, বার্থ সার্টিফিকেট পান না। তাদের ডেডবডি আনার ক্ষেত্রে অনেক সময় আমরা সঠিক তথ্য পাই না। এ ধরনের অসংখ্য অভিযোগ প্রবাসীদের আছে।
কিন্তু ব্যাপার হলো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোনো পাসপোর্ট তৈরি করে না, এনআইডি দেয় না, আমরা শুধু তথ্য সংগ্রহ করে বিদেশে পাঠাই। এগুলো পেতে এবং ফেরত দিতে এত দেরি হয় অনেক সময় যেখানে ওরা খুবই অসন্তুষ্ট হয়।
আমরা আশা করব, এরপর ডিসি সাহেবরা এ বিষয়ে পরবর্তী সময়ে মোর সেনসিটিভ হবেন। সম্মেলনে এ বিষয়ে আমরা ডিসিদের কিছু নির্দেশনা দিয়েছি। যাতে এসব সেবা আরও সহজতর হয়।
এ সময় স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে জনপ্রতিনিধিদের বনিবনা না হওয়া প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বলেছি আমাদের সহকর্মীরা, নির্বাচিত প্রতিনিধিরা, সংসদ সদস্যরা কিংবা যেসব জনপ্রতিনিধি রয়েছেন তারা বলেছেন স্থানীয় প্রশাসন কিংবা অন্য সরকারি অফিস সেই ধরনের তাদের সম্মান দেয় না কিংবা সহযোগিতা করে না। কিন্তু বিষয় হলো তারা যেহেতু নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এবং জনগণের কাছে তাদের কিছু কমিটমেন্ট রয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নও করতে হবে।
সেগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করা হবে, সেগুলো নিয়ে যাতে ডিসিরা আগামীতে মোর সেনসিটিভ হন। দুঃখজনক, এগুলোর ওপরে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ হয় না।
আমরা বলেছি এ দেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ হলো মানুষ। এই মানুষগুলোকে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার জন্য তারা যেন স্কিল ডেভেলপমেন্টের জন্য মনোযোগ দেন।
আমরা বলেছি, স্থানীয় প্রশাসন যেগুলো নিজেরাই করতে পারে, সেগুলো তারা ঢাকায় পাঠান। নিজে দায়িত্বটা এড়িয়ে যান। এতে করে সব মানুষ এবং সব কাজ ঢাকাকেন্দ্রিক হচ্ছে। এ বিষয়ে যাতে ডিসিরা সজাগ থাকেন। একইভাবে যেগুলো তাদের সমাধান করা সম্ভব তারাই স্থানীয়ভাবেই সমাধান করবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরেকটি উদ্যোগের কথা তুলে ধরে বলেন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে কোনো কোনো এলাকায় দেখা যায়, সেখানে আমাদের সাম্প্রদায়িক কিছু ঘটনা ঘটছে। কোথায় কে একটা প্রতিমা ভেঙে ফেলল, মন্দির ভেঙে ফেলল আর তা মুহূর্তে সারা পৃথিবীর কাছে ছড়ায় ফেলল। এখন গোটা পৃথিবীটা ইন্টার কানেক্টেড। ফলে যেকোনো খবর যেকোন ঘটনা মুহূর্তে সব জায়গায় পৌঁছে যায়। এ বিষয়ে ডিসিরা যাতে খুব শক্ত অবস্থান নেন এবং যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে এটি আমরা ডিসিদের কে নির্দেশনা দিয়েছি।
এ ছাড়া প্রবাসীদের বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে ইলিগ্যাল মাইগ্রেশন ঠেকাতেও ডিসিদের কাজ করতে বলেছি। এই ইলিগ্যাল মাইগ্রেশনে কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। অনেক সময় তাদের অনেকের সলিল সমাধি হয়। সে বিষয়ে কনফারেন্সের মাধ্যমে অ্যাওয়ারনেস প্রোগ্রাম তৈরি করতে বলেছি।
তিনি বলেন, আমরা জেলা প্রশাসকদের বলেছি মাঠপর্যায়ে অনেক সময় আমরা অনেকগুলো রিপোর্ট চাই, কিন্তু সেই রিপোর্টগুলো টাইম মিলিয়ে আসে না। তার ফলে আমরা ঠিকমতো বিদেশে দেনদরবার করতে পারি না। তা ছাড়া প্রায় সময় এ ক্ষেত্রে বিদেশিদের চাপ আসে। তাই ডিসিরা যাতে এ ব্যাপারে তড়িৎ পদক্ষেপ নেন।
আবার কোনো ক্ষেত্রে রিপোর্ট পাঠানোর ক্ষেত্রে মাঠপর্যায়ের তথ্য সংগ্রহে সঠিক চিত্র উঠে আসে না। এ বিষয়ে ভবিষ্যতে তারা যেন সঠিক দায়িত্বটি পালন করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা স্থানীয় প্রশাসনের অনেক প্রশংসাও করেছি। বিগত কোভিড সিচুয়েশনে তারা যেভাবে সাহায্য করেছে, উইদাউট করাপশনে মানুষের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে খাদ্য পৌঁছে দিয়েছে, এর জন্য দেশবাসী তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ছিল একজন মানুষ যাতে না খেয়ে না মরে। তাদের সহযোগিতার কারণে আমরা এ কোভিড সিচুয়েশনের সফল মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছি।’