নড়াইল নিউজ ২৪.কম ডেস্ক:
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তারেক রহমানকে বাদ দিতে বিএনপিকে গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী যে পরামর্শ দিয়েছেন, তা ‘বয়স হয়ে যাওয়ায় উল্টা-পাল্টা’ বক্তব্য হিসেবে দেখছেন । সোমবার ঠাকুরগাঁওয়ে নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে এ কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, ‘জাফরুল্লাহ সাহেব যে কথা বলেছেন… তার আসলে বয়স হয়ে গেছে। উনি অত্যন্ত সম্মানিত লোক। অত্যন্ত গুণী লোক কিন্তু বয়স হয়ে গেলে মানুষ কিছু উল্টাপাল্টা কথা বলতেই পারেন। এটা স্বাভাবিকভাবে বলেছেন আরকি।’
২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপিকে ভোটে নিয়ে আসা ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনে জাফরুল্লাহর ভূমিকা ছিল। তবে সম্প্রতি তিনি বিএনপির বিরাগভাজন হন তারেক রহমান ইস্যুতে।
গত ২ জুলাই বিএনপিপন্থি একটি সংগঠনের আলোচনায় যোগ দিয়ে তারেক রহমানকে রাজনীতি থেকে দূরে সরে পড়াশোনা করার পরামর্শ দেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। বলেন ‘বিএনপি চলে লন্ডন থেকে আসা ওহি দিয়ে।’
সেই আয়োজনে থাকা ছাত্রদলের সহসভাপতি ওমর ফারুক কাউসার বলেন, ‘আপনি বিএনপির কে যে আপনার কথা শুনতে হবে?…আপনি আমাদের নেতাকে নিয়ে কথা বলবেন না। যদি বলেন, পরবর্তী সময়ে কিছু হলে কিন্তু আমরা দায়ী না।’
এই ঘটনার পর থেকে বিএনপিপন্থি সংগঠনগুলো জাফরুল্লাহকে আর আমন্ত্রণ জানাচ্ছিল না। তবে গত সপ্তাহে মুক্তিযোদ্ধা দলের এক আলোচনায় তাকে বক্তব্য দিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়। সেখানে মির্জা ফখরুলের উপস্থিতিতে তারেক রহমানকে বাদ দিয়ে তার মেয়ে জাইমা রহমানকে বিএনপির নেতৃত্বে নিয়ে আসার পরামর্শ দেন।
গণমাধ্যমকর্মীদের এক প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, ‘তারেক রহমানের নেতৃত্বে নিয়ে প্রশ্নই উঠতে পারে না। দল তার নেতৃত্বে এগিয়েছে। তিনি অত্যন্ত কৃতিত্বের সঙ্গে, অসাধারণ দক্ষতার সঙ্গে সেই দায়িত্ব তিনি পালন করছেন।
‘আমরা অত্যন্ত আশাবাদী যে, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে দল অত্যন্ত সু-সংগঠিত হবে। আমরা একটা আন্দোলন সৃষ্টি করতে পারব, যে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা স্বৈরাচারী সরকারকে সরিয়ে জনগণের একটা সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারব।’
তারেক রহমানের দলের নেতৃত্বে আসা কোনো হঠাৎ ঘটনা নয় বলেও মন্তব্য করেন ফখরুল। বলেন, ‘জনাব তারেক রহমান আগেও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ছিলেন, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। দলের মধ্য থেকেই ধারাবাহিকভাবে ছিলেন, তৃণমূলকভাবে ইউনিয়ন পর্যায়ে সম্মলেন করেছেন জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছেন।
‘এবং তিনি অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে বিদেশে থেকেও বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী দলকে সুসংগঠিত করছেন, এবং তৃণমূল পর্যায়ে আমাদের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সু-সম্পর্ক স্থাপন করেছেন।’
গত ১২ বছর ধরে কেবল বিএনপি নয়, গোটা দেশই রাজনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করেন ফখরুল। বলেন, ১৯৭১ সালের অর্জন স্বাধীনতা, ৯০ সালে যে গণতন্ত্র অর্জন হয়েছিল, তার পুরোটাই আওয়ামী লীগ ধ্বংস করেছে। অর্জনগুলোকে হরণ করে নিয়ে গেছে।
দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাজা, তার কার্যত বন্দি জীবন আর তারেক রহমানের দেশের বাইরে নির্বাসনে থাকা দলের সবচেয়ে বড় সংকট বলেও মনে করেন ফখরুল।
সরকারের ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থা না থাকায় ভোটাররা এখন কেন্দ্রে যায় না বলেও মন্তব্য করেন ফখরুল। বলেন, তাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে চন্দ্রিমা উদ্যানে সমাহিত করার বিষয়টি ধ্রুবতারার মতো সত্য। এটা নিয়ে তো প্রশ্ন উঠতে পারে না।
ঠাকুরগাঁও বিএনপির সভাপতি তৈমুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমিন, সাংগঠনিক সম্পাদক ইউনুস আলীও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।