নড়াইল নিউজ ২৪.কম ডেস্ক:
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে ভোটের নামে আর ‘খেলা’ হবে না বলে মন্তব্য করে বলেন, ‘আমাদের কথা খুব পরিষ্কার। নির্বাচন নির্বাচন খেলা আর হবে না। নির্বাচন হতে হলে অবশ্যই একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হতে হবে। নির্বাচন হতে হলে অবশ্যই একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় হতে হবে।’
রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে শনিবার এক আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।
২০০১ সালের ১ অক্টোবর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ভোটের স্মরণে এই আলোচনার আয়োজন করা হয়।
২০ বছর আগের এই ভোটে জামায়াত, ইসলামী ঐক্যজোট ও জাতীয় পার্টির একাংশের সঙ্গে জোট করে বিএনপি বিপুল জয় পায়।
তবে বিএনপির শাসনামলের শেষ দিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান কে হবে, এ নিয়ে আওয়ামী লীগ ও সমমনাদের আন্দোলনের মধ্যে একপর্যায়ে জরুরি আইন জারি হয়।
বিএনপির শাসনামলে প্রধান বিচারপতির চাকরির মেয়াদ দুই বছর বাড়ানোকে কেন্দ্র করে এই জটিলতা তৈরি হয়।
চাকরির মেয়াদ বাড়ানোয় সাবেক প্রধান বিচারপতি কে এম হাসানের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হওয়া নিশ্চিত হয়, কিন্তু তাকে মানতে রাজি ছিল না আওয়ামী লীগ।
কে এম হাসান বিচারপতি হওয়ার আগে বিএনপির কমিটির সদস্য ছিলেন। আর এ কারণে তাকে মেনে না নিয়ে আন্দোলনে নামে সে সময়ের বিরোধী দল।
জরুরি অবস্থা জারির প্রায় দুই বছর পর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের ভোটে বিএনপি জোটের ভরাডুবি হয়। এরপর উচ্চ আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অসাংবিধানিক ঘোষণা করে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে না হওয়ায় বিএনপি জোট ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করে। পরে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের ভোটে তারা আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনেই অংশ নেয়।
এই ভোটে বিএনপির ফলাফল ২০০৮ সালের নির্বাচনের চেয়ে বাজে হয়, কিন্তু বিএনপি এই ফলাফল কখনও মেনে নেয়নি। তাদের দাবি, ভোটে ব্যাপক কারচুপি হয়েছে।
আগামী জাতীয় নির্বাচনের দুই বছর বাকি থাকতে বিএনপি আবার নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি তুলছে। ভোটে আসতে তারা মোট চারটি শর্ত দিয়েছে। এর মধ্যে প্রধান শর্ত এটি।
আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ করে ফখরুল বলেন, ‘আপনাদের দিন ঘনিয়ে এসেছে, দিন শেষ। এখনও সময় আছে মানুষের ভাষাগুলো পড়ুন। দেয়ালের লিখন দেখুন। দেখে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান তৈরি করে সরে যান। জনগণকে তাদের ভোটের অধিকার প্রয়োগ করতে দিন।’
নিবার্চন কমিশনের সমালোচনা করে বিএনপি মাহসচিব বলেন, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশন নুরুল হুদা সাহেব, যিনি নির্বাচনি ব্যবস্থাকে পুরো ধ্বংস করে দিয়েছেন, তিনিও বলছেন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেই নির্বাচন কমিশন গঠন করা উচিত।
‘যাওয়ার সময় হয়েছে তো! এখন তো আগের মতো প্রোটেকশন পাবেন না। আবার কিছুদিন আগে তিনি রাশিয়াতে গিয়ে নির্বাচন পদ্ধতি দেখে এসেছেন। রাশিয়াতেও একই অবস্থা। যিনি থাকেন সরকারে, হয় তিনি প্রেসিডেন্ট হন, না হয় প্রধানমন্ত্রী হন। ওটা আরও মজার জিনিস। একই লোক বারবার প্রেসিডেন্ট হচ্ছে বারবার প্রধানমন্ত্রী হচ্ছে। ওটা দেখে আসছেন উনি (সিইসি)। দিনের বেলা কীভাবে ভোট করা যায়, সেটা তিনি দেখে এসেছেন।’
আন্দোলনে যাওয়ার ইঙ্গিত:
সরকারবিরোধী আন্দোলনে যাওয়ার ইঙ্গিতও দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বলেন, ‘আন্দোলন ছাড়া, কোনো গণ-অভ্যুত্থান ছাড়া এই দানবকে সরানো যাবে না। এই দানবকে সরাতে হলে আমাদের জনগণকে, সব রাজনৈতিক শক্তি ঐক্যবদ্ধ করে গণ-অভ্যুত্থান ঘটাতে হবে।’
ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আবার চেষ্টা করছে, আবার তারা ক্ষমতায় আসবে। ওই ধরনের একটা নির্বাচন দিয়ে, যে নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারবে না। তার মধ্যে আবার ইভিএম চালু করছে। এটা হলো আরেকটা বড় হাতিয়ার… কী করে ভোট চুরি করা যায়, কী করে ভোট না পেয়েও নিজেকে নির্বাচিত ঘোষণা করা যায়।
‘এই চক্রান্ত, এই ষড়যন্ত্র, বাংলাদেশের মানুষের অধিকার হরণ করার যে ভয়াবহ প্রচেষ্টা, আমাদের এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।’
আলোচনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আব্দুস সালাম, আমানউল্লাহ আমান, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, সাংবাদিক মাহবুব উল্লাহ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দিলারা জামানও বক্তব্য রাখেন।