নড়াইল নিউজ ২৪.কম ডেস্ক:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপিকে মানুষ কেন ভোট দেবে, তাদের জয়ের কোনো আশা নেই, মানুষ তাদেরই ভোট দেয়, যাদের ক্ষমতায় যাওয়ার আশা আছে। সোমবার বিকেলে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশন থেকে দেশে ফিরে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
বিদেশ সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী বরাবর গণমাধ্যমের সামনে আসেন। শুরুতে তিনি তার সফরের বিষয়ে একটি লিখিত বক্তব্য রাখেন। তবে গণমাধ্যমকর্মীরা সাধারণত সাম্প্রতিক রাজনৈতিক বিষয়ে প্রশ্ন রাখেন।
গত কয়েক মাসে রাজনৈতিক বিষয়ে দেশে কোনো আলোচিত ঘটনা নেই। তবে এরই মধ্যে আগামী জাতীয় নির্বাচনের হাওয়া শুরু হয়ে গেছে। সংবাদমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নেও এ বিষয়টিই প্রাধান্য পায়।
এমন এক প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী উল্টো জানতে চান, আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে জনগণ কেন ভোট দেবে।
তিনি বলেন, ‘কে আছে এর বাহিরে কাকে দেবে? এর বাহিরে আর কে আছে?
‘ওদের (বিএনপি) ভোট কে দেবে, এটা জিজ্ঞেস করেন। কোন আশায় বিএনপি বা অন্যদের ভোট দেবে একটু বলেন শুনে রাখি।… মানুষ ভোট দেয় যাদের ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা থাকে। তাদের তো কোনো সম্ভাবনা নেই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার কাছে ক্ষমতা ভোগের বস্তু না। আকাঙ্ক্ষা থাকলে আমার বাবা যেমন অনেক আগেই মন্ত্রী-এমপি হতে পারতেন, আমিও পারতাম। কিন্তু সেটা তো আমি করিনি।’
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ-প্রধান বলেন, ‘সবশেষ যে নির্বাচন হয়েছে তাতে ভোটাররা ছিল স্বতঃস্ফূর্ত। অনেক চেষ্টা হয়েছে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে। এরপরেও নির্বাচন হয়েছে।’
ভোটের পর রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল ছিল বলেই উন্নয়ন করা সম্ভব হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের শেষ নির্বাচন প্রসঙ্গও তোলেন। বলেন, ‘২০০৮ সালের নির্বাচন নিয়ে কেউ প্রশ্ন তোলে না। তাহলে সেটাতে বিএনপি কেন ভোট পায়নি। এটা তাদের জিজ্ঞেস করেন।’
তিনি বলেন, ‘এত সুবিধা পেয়ে গালিটাও আওয়ামী লীগের ওপরে । তা তো হবেই।’
সরকারে আওয়ামী লীগ ও অন্যদের সময়ের তুলনাও করেন শেখ হাসিনা। বলেন, ‘২১ বছরে (১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬ সাল) মানুষ কী পেয়েছে? আর আওয়ামী লীগের সময় মানুষ কী পেয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, আমি বাংলাদেশের অর্থনীতি ও স্বাস্থ্যখাতে নারীদের অবদানের কথা তুলে ধরি। আমি তৃণমূল পর্যায়ে নারী নেতৃত্ব গঠন এবং নারী নেতৃত্বে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলোর রাজনৈতিক ও আর্থিক সুবিধা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করি। রোহিঙ্গা সমস্যা মিয়ানমারের সৃষ্টি এবং এর সমাধানও রয়েছে মিয়ানমারে উল্লেখ করে আমি কয়েকটি বিষয়ের উপর জোর দেওয়ার আহ্বান জানাই।
সরকার প্রধান বলেন, মিয়ানমারের পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে প্রত্যাবাসনের মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করা; রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টিতে আশিয়ানভুক্ত দেশগুলোর পাশাপাশি জাতিসংঘ উন্নয়ন সহযোগীদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন উপযোগী পরিবেশ তৈরিতে কার্যকর; রোহিঙ্গাদের উপর সংঘটিত সহিংসতা ও জাতিগত নিধনের বিচার নিশ্চিত করতে আইসিজেসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোতে চলমান প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করার আহ্বান জানাই।
বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমি পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করার পাশাপাশি রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ ও সহযোগিতা কামনা করি। এবারের জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের মূল বিষয়গুলো বাংলাদেশের জন্য বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক ছিল। বিশেষত কোডিড-১৯ টিকার সর্বজনীন প্রাপ্যতা ও মহামারি থেকে টেকসই পুনরুদ্ধার সংক্রান্ত শীর্ষ সভায় বাংলাদেশের অংশগ্রহণ ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শেখ হাসিনা বলেন, পাশাপাশি নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের অগ্রগতির কথাও বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করেছি যা, সব মহলে বহুল প্রশংসিত হয়েছে। অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের সক্রিয় অংশগ্রহণ বহুপাক্ষিক ফোরামে বাংলাদেশের অবস্থান যেমন সুদৃঢ় করেছে, তেমনি বাংলাদেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রকে বিস্তৃত করবে বলে আমি আশাবাদী।
শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশনে যোগদান এবং বিভিন্ন উচ্চপর্যায়ের ইভেন্টে অংশগ্রহণের জন্য গত ১৯ থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে অবস্থান করেন।
পরে ২৫ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থান শেষে ১ অক্টোবর দেশে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী।
১৯ থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিউইয়র্কে অবস্থানকালে শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশনের সাধারণ বিতর্কে বক্তব্য রাখেন। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে বাংলায় ভাষণ প্রদান করেন।
প্রধানমন্ত্রী সেখানে বেশ কয়েকটি উচ্চ পর্যায়ের ও রুদ্ধদ্বার বৈঠকে যোগ দেন এবং বিভিন্ন সরকার, রাষ্ট্র ও সংগঠনের প্রধানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসেন।
তিনি ২০ সেপ্টেম্বর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শত-বার্ষিকী উপলক্ষে তার সম্মানে জাতিসংঘ সদরদপ্তরের নর্থ লনের ইউএন গার্ডেনে উৎসর্গকৃত একটি বেঞ্চ উদ্বোধন করেন এবং সেখানে একটি গাছের চারা রোপণ করেন।
আরও পড়ুন: