নড়াইল নিউজ ২৪.কম ডেস্ক:
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম শফিকুজ্জামান বলেছেন, কারসাজি করে অতিমুনাফার লোভে ‘গুটিকয়েক’ ব্যবসায়ীর কারণে পণ্যমূল্যের বাজার অস্থির হচ্ছে। রমজানের আগেই সব নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে গেছে। সরকারের পক্ষে সব বাজার মনিটরিং সম্ভব নয়। এ জন্য ব্যবসায়ী নেতাদের এগিয়ে আসতে হবে। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার সমিতির নেতাদের সঙ্গে সচেতনতামূলক সভায় মঙ্গলবার এসব কথা বলেন।
গত কিছুদিন থেকেই সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের কথা জানানো হচ্ছে। সে জন্য বাজার মনিটরিং থেকে নানা ধরনের ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানানো হয়। তবে বাস্তবে তেমন কিছুই চোখে পড়ছে না।
বাজারে গিয়ে ক্রেতারা বলছেন, রোজার আগেই বেশকিছু নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শফিকুজ্জামান বলেন, ‘শুধু নিম্নবিত্ত শ্রেণিই নয়, মধ্যবিত্ত শ্রেণিও এখন চাপে আছে।
‘রোজার আগেই বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে বেশিরভাগ পণ্য। কঠিন সময়ে আছে মধ্যবিত্ত শ্রেণি।’
তিনি বলেন, ‘পণ্যের যৌক্তিক দাম নিতে হবে।’
রোজায় বাজার নিয়ন্ত্রণে অভিযান পরিচালনা করার কথা জানিয়ে ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে ডিজি বলেন, ‘ভোক্তা স্বার্থ ক্ষুণ্ন হলে ব্যবস্থা নেয়ার বিকল্প থাকবে না।’
টিসিবির পণ্য নিয়ে ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘টিসিবির পণ্য দোকানে পাওয়া যায়। কেন? ঢাকায় শতাধিক মার্কেট। সব দোকান পাহারা দেয়া সম্ভব না। প্রতিটি দোকানে মূল্যতালিকা টানিয়ে রাখতে হবে। খুচরা পর্যায়ে দাম নির্ধারণ করা আছে, তার বেশি নেয়া যাবে না। খোলা তেলের দাম নির্ধারিত, তবুও দাম মানা হচ্ছে না।’
মোহাম্মদপুর টাউন হল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি লুৎফর রহমান বাবুল বলেন, ‘পাইকারি বাজারে মূল্য নির্ধারণ করে দিতে হবে। কারওয়ান বাজার থেকে পণ্য কিনলে রশিদ দেয় না। কাঁচামাল কোনোদিন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব না। প্রতিদিন দাম নির্ধারণ করে দিতে হয়। রশিদ ছাড়া বিক্রিতেই কারচুপি হয়।’
মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আজমল হোসেন বাবু বলেন, ‘খুচরা ভোক্তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। পাইকারি বেশি বিক্রি হয়।’
তিনি বলেন, লাভের মূল্য রেখেই পাইকারিতে তারা বিক্রি করেন যা থেকে খুচরায় মুনাফা হয়।
অবশ্য সেই নেতার দাবি, অভিযানের নামে ব্যবসায়ী ও ব্যবসায়ী নেতাদের আটক করলে ভীতি ছড়াবে।
এ জন্য ঢাকার বাজারকে উত্তপ্ত না করে গ্রামাঞ্চলের পণ্যের দাম বেশি প্রচার করা, রোজায় অতিরিক্ত পণ্য কেনার মানসিকতা বন্ধ করার আহ্বান জানান তিনি।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ বা ক্যাবের তথ্য কর্মকর্তা আনোয়ার পারভেজ বলেন, ‘সবাই বলে মৌলভীবাজারের দাম বেশি। সে কারণে সব জায়গায় দাম বাড়ছে। চাল, পেঁয়াজের দাম হঠাৎ করে বেড়ে যাচ্ছে, নিয়ন্ত্রণ কে করবে?’
উত্তরা জহুরা মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির নেতা মোশাররফ হোসের বুলু বলেন, পাইকারি বাজারে দাম বাড়ে। সে কারণে খুচরা বাজারে দাম বাড়ছে, আর তেলের দাম তো নিয়ন্ত্রণহীন।
মিরপুর ৬ নং ব্যবসায়ীর সভাপতি আবুল হোসেন বলেন, ‘সব পণ্যের দাম বাড়ছে। শুধু চাল, তেলই না, সাবান, হুইল পাউডার, দুধের দামও লাগামহীন। সীমিত আকারে লাভে পণ্য বিক্রি করছি। আমরা কোনো দাম বাড়াইনি।’
মোহাম্মদপুরের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ শফিউল্লাহ বলেন, ‘জরিমানা লজ্জার। অভিযান পরিচালনা করা হলে সব দোকান বন্ধ করে দেয়া হয়। এটা কেন? নিশ্চয়ই সবাই অনিয়ম করে না।’
কারওয়ান বাজার আড়ত ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, ‘বাজার পর্যালোচনা করে সঠিক সময়ে আমদানি করতে হবে। ভোক্তাদের সচেতন হতে হবে। রোজার মাসে একসঙ্গে বাজারে গিয়ে একমাসের পণ্য কেনার প্রবণতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।’