নড়াইল নিউজ ২৪.কম আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
এ পুরস্কার বিশ্বজুড়ে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিতে কাজ করা সব সাংবাদিকের বলে মিন্তব্য করেছেন, শান্তিতে এবারের নোবেল পুরস্কারজয়ী ফিলিপাইনের সাংবাদিক মারিয়া রেসা। একই সঙ্গে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য চলমান লড়াই জারি রাখারও অঙ্গীকার করেন ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রদরিগো দুতের্তের কড়া সমালোচক রেসা।
বার্তা সংস্থা এএফপিকে শনিবার দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এসব মন্তব্য করেন।
রেসা বলেন, ‘এখন সাংবাদিক হওয়া অনেক বেশি দুরূহ ও বিপজ্জনক। সাংবাদিকদের এ মুহূর্তে অনেক ফ্রন্টে পারস্পরিক সহযোগিতার খুবই প্রয়োজন।’
মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সুরক্ষার প্রচেষ্টার স্বীকৃতি হিসেবে শুক্রবার ফিলিপাইনের সংবাদমাধ্যম র্যাপলারের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) রেসা ও রুশ সাংবাদিক দিমিত্রি মুরাতভকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়।
রেসার নোবেল পুরস্কার পাওয়াকে ‘বিজয়’ হিসেবে দেখছেন ফিলিপাইনের সাংবাদিক ও অধিকারকর্মীরা। সাংবাদিকদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশের তালিকায় ফিলিপাইনের নাম রয়েছে।
২০১৬ সালে ফিলিপাইনের ক্ষমতায় বসেন প্রেসিডেন্ট দুতের্তে। এরপরই রেসা ও তার প্রতিষ্ঠান র্যাপলারকে বেশ কয়েকটি মামলার মুখে পড়তে হয়।
এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে অনলাইনে রেসাকে হুমকিসহ অবমাননাকর বার্তাও পাঠানো হয়।
র্যাপলারকে ‘ভুয়া সংবাদমাধ্যম’ হিসেবে দেখেন দুতের্তে।
৫৮ বছর বয়সী রেসা জানান, শারীরিক আক্রমণ ও হুমকির মধ্যে কাজ করা ফিলিপাইনের সাংবাদিকদের নিরাপত্তায় এ পুরস্কার ঢালের মতো কাজ করবে বলে আশাবাদী তিনি।
রেসা বলেন, “সাংবাদিকরা কখনোই ‘তাদের বিরুদ্ধে আমরা’ সৃষ্টি করেনি। এটি ক্ষমতাসীন ব্যক্তিরাই সৃষ্টি করেছে। তারা এমন এক ব্যবস্থা কায়েম করেছে, যেটি সমাজকে বিভক্ত করে।”
তিনি বলেন, ‘আশা করি, নোবেল পুরস্কার জয়ের মধ্য দিয়ে আমরা সাংবাদিকরা নির্ভীকভাবে আমাদের কাজ করে যেতে পারব।’
নোবেল পুরস্কার পাওয়ার আগের দিন বৃহস্পতিবার সিএনএনের সঙ্গে কথা বলেন রেসা।
সিএনএনের সাবেক ব্যুরোপ্রধান ও টাইম ম্যাগাজিনের বর্ষসেরা ব্যক্তি হওয়া রেসা জানান, ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রদরিগো দুতের্তেকে নিয়ে বেশ কয়েকটি সমালোচনাধর্মী প্রতিবেদন করে র্যাপলার। এতে ক্ষুব্ধ হন ক্ষমতাসীনরা। গত কয়েক বছরে তার বিরুদ্ধে ফিলিপাইন রাষ্ট্রের করা কয়েকটি মামলা লড়ছেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘১৯৮৬ সাল থেকে ফিলিপাইন নিয়ে সংবাদ করছি আমি। আমি নিজে কখনো সংবাদ ছিলাম না। কিন্তু ক্ষমতার কথামতো কাজ করতে অস্বীকৃতি জানানোয় আমি নিজেই একপর্যায়ে সংবাদে পরিণত হই।’
রেসা বলেন, ‘আমি মনে করি, যেকোনো ধরনের গণতন্ত্রের জন্য আইনের শাসন জরুরি। নয়তো গণতন্ত্র আর গণতন্ত্র থাকে না, ফ্যাসিবাদে রূপ নেয়। কারণ যিনি ক্ষমতায় থাকেন, তিনিই সিদ্ধান্ত নেন, কার বাঁচার অধিকার আছে আর কার নেই।’
প্রেসিডেন্ট দুতের্তের শাসনে র্যাপলার ও তাকে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ উপস্থাপনে কী ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে, তা সিএনএনকে জানান রেসা।
তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকদের বিভিন্নভাবে টার্গেট করা হচ্ছে। ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মারকোসের আমলেও এমনটি হয়নি।
‘গত দুই বছরের কম সময়ে আমার নামে ১০টি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। সাংবাদিকতার শুরু থেকে আমি যেভাবে সংবাদ করে আসছি, এখন তো তার থেকে ভিন্ন কিছু করছি না।’
আগামী বছরের মে মাসে ফিলিপাইনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে।
এ বিষয়ে রেসা বলেন, ‘গণতন্ত্র যাতে ঠিকমতো কাজ করতে পারে, এ জন্য সঠিক তথ্য উপস্থাপন করা খুবই জরুরি।
‘নির্বাচন সুষ্ঠু কীভাবে হবে যদি সংবাদমাধ্যমগুলো অসত্য, বিদ্বেষমূলক সংবাদ প্রকাশ করে? আমাদের যুদ্ধ সঠিক তথ্য ও সত্যের পক্ষে।’