নড়াইল নিউজ ২৪.কম বিনোদন ডেস্ক:
সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি), একুশে পদক ও বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারজয়ী কবি কাজী রোজী আর নেই। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। ফেসবুকে রোববার ভোর ৫টা ৫ মিনিটে দেয়া এক স্ট্যাটাসে বিষয়টি জানিয়েছেন তার মেয়ে সুমী সিকানদার।
সুমী জানান, শনিবার রাত আড়াইটার দিকে তার মা কবি কাজী রোজীর মৃত্যু হয়েছে। পোস্টে তিনি মায়ের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনায় সবার কাছে দোয়া চান।
শারীরিক বিভিন্ন জটিলতা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন কাজী রোজী। স্ট্যাটাসে কোন হাসপাতালে কবি মারা গেছেন, তা জানাননি সুমী।
মায়ের অসুস্থতা নিয়ে ফেসবুকে নিয়মিত আপডেট জানাচ্ছিলেন সুমী সিকানদার। গত ৯ ফেব্রুয়ারি দুপুরে দেয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, ‘গত ৩০ জানুয়ারি থেকে আম্মার ব্রেন একেবারেই কাজ করছে না। গতকাল থেকে লাইফ সাপোর্ট ছাড়া শ্বাস নিতে পারলেও ব্রেন কর্মক্ষমতা হারানোর ফলে সত্যিকার অর্থে তার সার্বিক উন্নতির ব্যাপারে ডাক্তাররা আশা দেখতে পাননি। আম্মার শরীর অস্বাভাবিক শীতল। আমি তার ফুলে বালিশ হয়ে যাওয়া হাত-পা স্পর্শ করে এসেছি।
‘তাকে হাসপাতালেই নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে এবং স্যালাইনের মাধ্যমে লিকুইড খাবার/ওষুধ দিতে হবে, যা এখনও দেয়া হচ্ছে। তাকে পাশ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে শোয়ানো হচ্ছে, যাতে বেডশোর না হয়ে যায়। মা এখন শুধু শ্বাস নিতে পারা, বন্ধ চোখের, কথাহীন, চলৎশক্তিহীন একজন জীবিত মানুষ। আপনাদের ফোন এবং মেসেজের জবাবে এখানেই লিখলাম। আমি আর পারছি না।’
প্রধানমন্ত্রীর শোক:
কবি কাজী রোজীর মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইংয়ের পক্ষ থেকে পাঠানো শোকবার্তায় বলা হয়, বিশিষ্ট কবি ও সাবেক এমপি কাজী রোজীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এতে আরও বলা হয়, ‘কবিতার পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে তার (কাজী রোজী) সাহসী ভূমিকা স্মরণীয় থাকবে।’
প্রধানমন্ত্রী কবির আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
কাজী রোজীর জীবন ও কর্ম:
১৯৪৯ সালের ১ জানুয়ারি বর্তমান বাংলাদেশের সাতক্ষীরায় জন্মগ্রহণ করেন কবি কাজী রোজী। তার বাবার নাম কাজী শহীদুল ইসলাম।
প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন কাজী রোজী। কর্মজীবনে সরকারি চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। ২০০৭ সালে তথ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা হিসেবে অবসর নেন রোজী।
কবি হিসেবে কাজী রোজীর অভিষেক ষাটের দশকে। তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলো হলো ‘পথঘাট মানুষের নাম’, ‘নষ্ট জোয়ার’, ‘আমার পিরানের কোনো মাপ নেই’, ‘লড়াই’। এ ছাড়া ‘শহীদ কবি মেহেরুন নেসা’ নামে জীবনীগ্রন্থ এবং ‘রবীন্দ্রনাথ: রসিকতার কবিতা’ নামের গবেষণাগ্রন্থেরও রচয়িতা কাজী রোজী।
কবিতায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৮ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার এবং ২০২১ সালে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদক পান কাজী রোজী।
২০১৪ সালে সংরক্ষিত নারী আসনে (আসন নম্বর ৪৩) এমপি নির্বাচিত হন কাজী রোজী। জাতীয় সংসদের গ্রন্থাগার সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি।