নড়াইল নিউজ ২৪.কম ডেস্ক:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভিযোগ করে বলেছেন, ভূমিহীন-গৃহহীনদের উপহার হিসেবে দেয়া ঘর হাতুড়ি ও শাবল দিয়ে ভেঙে ছবি মিডিয়ায় প্রচার করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের এরই মধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে বলেও জানান সরকারপ্রধান। গণভবনে বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে তিনি এ অভিযোগ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যখন সিদ্ধান্ত নিলাম যে, প্রত্যেকটা মানুষকে ঘর করে দেব। আমাদের দেশের কিছু মানুষ এত জঘন্য চরিত্রের, কয়েকটি জায়গায় হঠাৎ দেখলাম যে ঘর ভেঙে পড়ছে। কোনো জায়গায় ভাঙা ছবি। এগুলো দেখার পরে সার্ভে করালাম, কোথায়, কী হচ্ছে।
‘আমরা প্রায় দেড় লক্ষের মতো ঘর তৈরি করে দিয়েছি। ৩০০টা ঘর বিভিন্ন এলাকায় কিছু মানুষ নিজে থেকে যেয়ে হাতুড়ি, শাবল দিয়ে সেগুলো ভেঙে ভেঙে তারপর মিডিয়ায় ছবি তুলে দিচ্ছে। তাদের নামধাম অনুসন্ধান করে সব বের করা হয়ে গেছে। আমার কাছে পুরো রিপোর্টটা আছে।’
ভাঙা ঘরের ছবিগুলো প্রচার করা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘গরিবের জন্য ঘর করে দিচ্ছি। তারা এইভাবে যে ভাঙতে পারে! সবচেয়ে অবাক লাগে মিডিয়ায় যারা এগুলি ধারণ করে আবার প্রচার করে। তারা কিন্তু কীভাবে এটা হলো, সেটা কিন্তু দেখে না।
‘কয়েকটি জায়গায় দেখা গেছে, হয়তো সেখানে ৬০০ ঘর। সেখানে তিন-চারটা প্রবল বৃষ্টি হলো যখন, ওই জন্য মাটি ধসে কয়েকটি নষ্ট হয়েছে। আর মাত্র ৯টি জায়গায় আমরা পেয়েছিলাম, যেখানে দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে।’
ঘর নির্মাণসংশ্লিষ্টরা আন্তরিক ছিলেন দাবি করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমি দেখেছি যে, প্রত্যেকে আন্তরিকতার সাথে কাজ করেছে। অফিসারদের যাদের দায়িত্ব দিয়েছিলাম, অনেকেই নিজেরাই এগিয়ে এসেছে ঘরগুলি করতে সহযোগিতা করবার জন্য। এমনকি যারা ইট তৈরি করে, তারাও এগিয়ে এসেছে। অল্প পয়সায় তারা দিয়ে দিয়েছে।
‘সবার সহযোগিতায়…এর মধ্যে আন্তরিকতাটাই বেশি। তার মধ্যেও দুষ্টবুদ্ধির কিছু…এটাই হচ্ছে সবচেয়ে কষ্টকর। যখন এটা গরিবের ঘর, তখন সেখানে হাত দেয় কীভাবে? আমরা এগুলো মোকাবিলা করে যাচ্ছি, তবে আমাদের নেতা-কর্মীদেরও আরও সতর্ক থাকা দরকার। আমাদের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ যারা আওয়ামী লীগ করে বা যুবলীগ করে, তারা যখন এগুলো দেখেছে, তারা সরেজমিনে দেখছে, সহযোগিতা করছে। পাশাপাশি আমাকে ছবি পাঠাচ্ছে; আমি দেখছি। সেভাবেই আমরা কাজ করছি।’
করোনার সময় দলের নেতা-কর্মীরা যেভাবে জনকল্যাণে এগিয়ে এসেছেন, তার প্রশংসা করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
তিনি বলেন, ‘ভ্যাকসিন নেবার ব্যাপারেও আমরা সবার আগে উদ্যোগ নিয়েছি। একটা সময় আমাদের বিপদ হয়ে গিয়েছিল যে, ভারতে যখন ব্যাপকভাবে করোনা দেখা দিল, ওরা আমাদের সাপ্লাই দিতে পারছিল না। এখন আর সমস্যা হবে না। আমরা নিয়মিত পাব। সারা দেশের মানুষকে আমরা দিতে পারব।
‘সবচেয়ে বড় কথা এই যে, মানুষের কোনো কাজের সুযোগ ছিল না। ঘরে বন্দি। খাবারের অভাব। সেই সময়টায় আমাদের দলের নেতা-কর্মীরা প্রত্যেকে অনেক আন্তরিকতার সাথে কাজ করেছে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। আমরা কত মানুষকে যে হারালাম! এমন কোনো দিন নেই যে মৃত্যুর সংবাদ না আসত। আজকেও খবর পেলাম আমাদের ঢাকা দক্ষিণের প্রেসিডেন্ট মন্নাফি সাহেবের স্ত্রী মারা গেছেন।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমি এটুকু বলব, আওয়ামী লীগ সরকারে আছে বলেই দেশের উন্নতি হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকারে আছে বলেই এ করোনা মোকাবিলা সম্ভব হয়েছে। আর আওয়ামী লীগ আছে বলেই কিন্তু মানুষ অন্তত সেবাটা পাচ্ছে। অতীতের অভিজ্ঞতা আছে।
‘যারা আমাদের সমালোচনা করেন তাদের বলব, অতীতে আমাদের কী অবস্থা ছিল বিশেষ করে পঁচাত্তরের পর থেকে ৯৬ পর্যন্ত, সেটা যেন তারা একটু উপলব্ধি করে। তবে কিছু মানুষ তো আছেই, সারাক্ষণ মাইক লাগিয়ে বলতেই থাকবে। যে যাই বলুক, আমাদের নিজেদের আত্মবিশ্বাস আছে। আমরা সেই বিশ্বাস নিয়েই চলি।’
কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকের কারণ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের কার্যনির্বাহী সংসদের মিটিং আমরা চার মাস বা দুই মাস পরপরই করতাম। দুই থেকে তিন মাসের মধ্যেই আমরা বসতাম। এটা নিয়মিত করতে পারতাম। কিন্তু এই করোনাভাইরাসের কারণে আমরা আমাদের এই সভাটি নিয়মিত করতে পারিনি। এটা করা বোধহয় সমীচীনও হতো না।
‘যা হোক, এখন করোনাভাইরাস কিছুটা আমাদের নিয়ন্ত্রণে এবং ভ্যাকসিনেশনও শুরু হয়েছে। আমি মনে করলাম যে, একটা সভা করা দরকার। তা ছাড়া আমি গতবার যেহেতু জাতিসংঘে যেতে পারিনি, এবার জাতিসংঘে যাওয়ার একটি সুযোগ হয়েছে। সেখানে আমার রওনা হওয়ার কথা। এ জন্য ভাবলাম যে আমরা একটু বসি, একটু আলাপ করি।’