নড়াইল নিউজ ২৪.কম ডেস্ক:
ইউক্রেনে যুদ্ধের কারণে দেশটির অলিভিয়া বন্দর চ্যানেলে আটকে থাকা ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজে রকেট হামলা হয়েছে। এতে মেরিন ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমান নিহত হয়েছেন বলে সহকর্মীরা জানান। বাংলাদেশ সময় বুধবার রাত ৯টা ২৫ মিনিটে যুদ্ধবিমান থেকে রকেট হামলায় বাল্কটির ডেকে আগুন ধরে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে জাহাজের ক্রু ও নাবিকরা।
জাহাজের নাবিক আতিকুর রহমান মুন্না হোয়াটস অ্যাপে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জাহাজটিতে রকেট হামলায় নিহত নাবিক হাদিসুর রহমানের গ্রামের বাড়ি বরগুনার বেতাগীতে বলে জানা গেছে।
জাহাজ আক্রান্তের বিষয়ে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) কেউ বিস্তারিত তথ্য জানাতে পারেননি।
নির্বাহী পরিচালক ড. পীযুষ দত্তকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
বিএসসির মহাব্যবস্থাপক মো. জিয়াউর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি। কিন্তু কাউকে পাচ্ছি না অনলাইনে। ফেসবুকে আতিকুর রহমান মুন্নার স্ট্যাটাস দেখেছি।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বাংলাদেশ মেরিন একাডেমির কমান্ড্যান্ট সাজিদ হুসাইনের দেয়া স্ট্যাটাসের মাধ্যমে হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করা গেছে।
দুবাইয়ের সিলভার স্টারশিপ ম্যানেজমেন্টে থার্ড ইঞ্জিনিয়ার পদে দায়িত্বরত সাজিদ হুসাইন বলেন, ‘বাংলাদেশ সময় আজ বুধবার রাত ৯টা ২৫ মিনিটে এমভি ‘বাংলার সমৃদ্ধি’তে রকেট হামলা হয়েছে। এতে ওই জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. হাদিসুর রহমান মারা গেছেন। তবে অন্যরা ভালো আছেন।’
স্ট্যাটাসে তিনি আরও বলেন, ‘বাংলার সমৃদ্ধিতে রকেট হামলা হয়েছে। একজন ছাড়া অন্য সবাই অক্ষত। কিছুক্ষণ আগে বাংলাদেশ সময় ২ মার্চ রাত প্রায় ৯টা ২৫ মিনিটে জাহাজের ব্রিজে রকেট হামলা হয়েছে। সবার সাহসী ও তাৎক্ষণিক পদক্ষেপে আগুন নিভানো গেছে। সবাই আল্লাহর কাছে ওদের জন্য সাহায্য প্রার্থনা করি।’
‘গভীর বেদনার সঙ্গে জানাচ্ছি যে জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. হাদিসুর রহমান মৃত্যুবরণ করেছেন,’ যোগ করেন তিনি।
রকেট হামলায় নিহত হাদিসুর রহমান থার্ড ইঞ্জিনিয়ার বা সেকেন্ড অ্যাসিটেন্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে জাহাজটির ইঞ্জিনের তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির দায়িত্বে ছিলেন বলে জানা গেছে।
এর আগে, ২৮ ফেব্রুয়ারি, শিপিং করপোরেশনের মহাব্যবস্থাপক ক্যাপ্টেন মুজিবুর রহমান জানান, ইউক্রেন জলসীমায় অবস্থান করলেও ওই বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় জাহাজটি আন্তর্জাতিক জলসীমায় আসতে পারছে না। জাহাজটিতে ২৯ জন নাবিক ও ক্রু রয়েছেন।
গত ২১ ফেব্রুয়ারি জাহাজটি তুর্কি বন্দর এরেগলি ছেড়ে যায় এবং ২৩ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের বন্দর অলিভিয়ায় পৌঁছে। জাহাজটি সেখানে পৌঁছানোর পর পরিস্থিতির অবনতি হলে শিপিং করপোরেশনের নির্দেশে পণ্য লোড করার পরিকল্পনা বাতিল করে সেখানেই অবস্থান করতে বলা হয়।
পূর্ব ইউরোপের দেশ ইউক্রেনে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে সামরিক অভিযানের ঘোষণা দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এর পরই হামলা শুরু করে পুতিন বাহিনী।
হামলার পর থেকে পশ্চিমা বিভিন্ন দেশ, বিশেষ করে ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো রাশিয়ার ওপর অবরোধ আরোপ শুরু করে। এই যুদ্ধ থামাতে বিভিন্ন পক্ষ আলোচনায় বসার আহ্বান জানায় রাশিয়াকে।
কিয়েভের সঙ্গে আলোচনা শুরু করলেও মস্কো আগের চেয়ে বেশি সেনা মোতায়েন করে হামলা বাড়িয়েছে ইউক্রেনে।
রুশ হামলা শুরুর পর সাত দিনে ইউক্রেন ছেড়েছেন আট লাখ ৭৫ হাজার নাগরিক।
রাজধানী কিয়েভে টেলিভিশন টাওয়ারে রকেট হামলার দায় স্বীকার করেছে রাশিয়া।
এই দিন, খারকিভ শহরে রুশ হামলায় ২১ জন মারা গেছে। আহত হয়েছে ১১২ জন। এরই মধ্যে খেরসন শহর দখলের দাবি করেছে রাশিয়া। এ ছাড়াও খারকিভের পুলিশ কার্যালয়ে আঘাত করে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র।