নড়াইল নিউজ ২৪.কম ডেস্ক:
আফগানিস্তান তালেবানদের দখলের পর কাবুলে আটকে পড়া ১৫ বাংলাদেশির মধ্যে ১২ জন বর্তমানে কাতারের দোহায় অবস্থান করছেন। শনিবার দুপুরে তারা যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় দোহায় পৌঁছেন সবাই ভালো আছেন বলে জানাগেছে।
এই ১২ বাংলাদেশির একজন রাজিব বিন ইসলাম। তিনি আফগান ওয়্যারলেসের একটি বিভাগের প্রধান। শনিবার রাত সাড়ে ১২টায় তিনি দোহা থেকে কথা বলেন। রাজিব বলেন, ‘আমরা দোহাতে আছি। দুপুরে এখানে এসে পৌঁছেছি।’
‘এখানে কিছু ফর্মালিটিজ আছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও দূতাবাসের। সেগুলো শেষ হতে দুই-তিন দিন লাগবে। এরপর দেশে আসতে পারব।’
এর আগে আফগানিস্তানে থাকা ১৫ বাংলাদেশির মধ্যে ১২ জনকে যুক্তরাষ্ট্রের একটি সেনাঘাঁটিতে নেয়া হয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। এক খুদে বার্তায় তিনি জানান, চার্টার্ড বিমানে তাদের দেশে আনা হবে।
এসব বাংলাদেশির পাশাপাশি বাংলাদেশে অধ্যয়নরত আফগান শিক্ষার্থীদেরও (আফগানিস্তানে অবস্থান করছিলেন) সেই ঘাঁটিতে নেয়া হয় বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তাদেরও চার্টার্ড বিমানে করে বাংলাদেশে আনা হবে।
শনিবার রাতে মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে এসব তথ্য জানান মন্ত্রী। তিনি লিখেছেন, ‘১২ বাংলাদেশি মার্কিন সেনাঘাঁটিতে পৌঁছেছেন। তাদের সঙ্গে আফগান নারী শিক্ষার্থীরাও আছেন। শিগগিরই তাদের চার্টার্ড বিমানে করে দেশে আনা হবে।’
শনিবার দুপুরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, কাবুল বিমানবন্দরে বিস্ফোরণ হলেও দেশটিতে অবস্থানরত ১৫ বাংলাদেশি নিরাপদে আছেন।
আফগানিস্তানে থাকা ১৫ বাংলাদেশি সম্পর্কে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের যিনি অ্যাম্বাসেডর ইন তাসখন্দ, উনি জানিয়েছেন যে ওরা সেইফ আছে। বাট ভয়ে এয়ারপোর্টে যাচ্ছেন না। সো উই ডোন্ট নো, সো আপনাদের যদি কোনো বুদ্ধি থাকে, আপনারা তো বেশি বুদ্ধিমান লোক, বলেন, কীভাবে আমরা ওদের রেসকিউ করতে পারি?’
আটকে পড়া বাংলাদেশিদের উদ্ধারে সরকার কোনো চার্টার্ড বিমান পাঠানোর পরিকল্পনা করছে কি না জানতে চাইলে মোমেন বলেন, ‘ডিটেইল আমি বলতে পারব না। আই ক্যান্ট সে, আই ডোন্ট নো। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এয়ারপোর্টে কোনো কোনো বাংলাদেশি দেশে ফেরার চেষ্টা করছেন, বিষয়টি মন্ত্রীর নজরে আনা হলে তিনি বলেন, তারা বাংলাদেশি নয়, তারা আফগান।
তিনি বলেন, ‘দেখেন, আমরা কয়েক সপ্তাহ আগে প্রাইভেটলি যারা ওখানে, ওই দেশে আছেন তাদের বলেছিলাম, আল্লাহর ওয়াস্তে আপনারা সেইফ জায়গায় চলে যান। অনেকেই এটা গ্রহণ করেছেন। কারণ আমাদের ধারণা ছিল যে, সমস্যা হতে পারে। যেহেতু আমাদের ওখানে অ্যাম্বাসি নাই, সুতরাং মোর ডিফিকাল্ট হবে।’
অনেকেই সরকারের এই আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন বলে জানান মোমেন। বলেন, ‘কেউ কেউ শুনেছেন। আমরা তখন ব্র্যাককে অ্যাপ্রোচ করেছিলাম। তাদের লোকগুলোকে মোটামুটি সেইফলি নিয়ে এসেছে।’
এ সময় মন্ত্রী জানান, বাংলাদেশে অধ্যয়নরত ১৬০ আফগান শিক্ষার্থী বাংলাদেশে ফিরতে চান।
তিনি বলেন, ‘আফগানের ১৬০ জন ছাত্রছাত্রী আমাদের দেশে পড়ে, তারা শুনেছি যে আফগান লোকজন। তারা এখন আসতে চাচ্ছে, তাদের দেশে প্রবলেম বলে আসতে চাচ্ছে। আসতে চাইলে আমরা নেব, কিন্তু দে হ্যাভ টু মেক দেয়ার ওয়ে আউট। আমাদের তো ওখানে এমন কিছু নেই যে আমরা ওদের নিয়ে আসতে পারি। আমি শুনেছি, ওরা বাঙালি না। ওরা সবাই আফগান। সো আই ডোন্ট নো।’
রাতে মন্ত্রী জানালেন, সবার জন্য চার্টার বিমানের ব্যবস্থা করার কথা।
১৫ আগস্ট রাজধানী কাবুল দখলের মাধ্যমে দুই দশক পর ফের আফগানিস্তানের সবকিছুতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে তালেবান। আফগানিস্তান দখল করে কট্টর ইসলামপন্থি গোষ্ঠীটি বলছে, তারা ২০ বছর আগের অবস্থানে নেই।
অনেক সহনশীলতার কথা বলছে তালেবান। শত্রুদের সবাইকে ক্ষমা করে দেয়ার কথা জানিয়েছে তারা। তালেবান বলছে, সবাইকে নিয়ে এবার অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠন করবে তারা। নিশ্চিত করা হবে নারী অধিকার। নারীরা অবাধে উচ্চ শিক্ষাগ্রহণ করতে পারবে। চাকরিও করতে পারবে। তালেবানের এসব প্রতিশ্রুতিতে বাস্তবের কোনো মিল পাওয়া যাচ্ছে না। বরং তারা বিরোধীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি শুরু করেছে। কর্মজীবী নারীদের ঘরে থাকারও নির্দেশ দিয়েছে তালেবান।
তালেবান ক্ষমতায় আসলে তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক কেমন হবে এ বিষয়ে মন্তব্য এসেছে সরকার থেকেও। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেছেন, জনগণের সরকার গঠন করলে তালেবানকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেবে বাংলাদেশ। তিনি এটাও জানান, যে সামর্থ্য থাকলে যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধ অনুযায়ী বিপদে পড়া আফগান নাগরিকদের গ্রহন করতো ঢাকা।